Durga Puja 2022: নামের পিছনে মহম্মদ, ধর্মের বেড়াজাল পেরিয়ে নুরের তুলিতে প্রতিবছর সেজে ওঠে দূর্গা

নামের সঙ্গে রয়েছে মহম্মদ। কিন্তু তা কখনও জীবনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি তাঁর কাছে। আসলে নেশায়-পেশায় সে যে একজন শিল্পী (Artist), সেখানে আবার ধর্মের কী কাজ। মাটির মূর্তি গড়তে ভারী ভালো লাগে নুর মহম্মদ চৌধুরীর। প্রথমদিকে খেলার ছলেই এই কাজ করতেন তিনি। কিন্তু সময়ের হাত ধরেই এই খেলাই যেন তাঁর একমাত্র ধ্যানজ্ঞান হয়ে গেল। আকাশে যখন পেঁজা তুলোর মতো মেঘ এসে বাসা বাঁধে, বাতাসের শরতের ঘ্রাণ মানুষের শরীর ছুঁয়ে যায়, ঠিক তখনই প্রবীণ শিল্পী টের পান, বাড়তে চলেছে তাঁর ব্যস্ততা। 

হলদিয়া পুরসভার ১৮ নং ওয়ার্ডের আন্দুলিয়া এলাকার নুর মহম্মদ এখন মৃৎশিল্পী হিসাবে ভারী জনপ্রিয়। যদিও মূর্তি গড়ার কাজে তাঁর হাতে খড়ি হয়েছিল খুব অল্প বয়সেই। মাত্র ছ’বছর বয়সে কাদা-মাটি সঙ্গে করে নিজের খেলার ছলে প্রতিমা গড়ার চেষ্টা করত ছোট্ট নুর মহম্মদ। স্কুলে আসা-যাওয়ার মাঝেই পুকুরের পাড়ে প্রতিমা নিরঞ্জন কেড়ে নিত তাঁর নজর। তখন সকলের অগোচরে প্রতিমার খড়ের তৈরি ভুড়ি বাড়ি নিয়ে এসে কাদার প্রলেপ দিয়ে ঠাকুর গড়ার চেষ্টা করত সে।

durga puja 2022

ছোট থেকেই এই প্রতিমা গড়া নেশার মতো হয়ে ওঠে তাঁর কাছে। স্কুলের পড়াশোনার মাঝে এই মাটির মূর্তি নির্মাণের কাজকে জারি রেখেছিল সে। নুরের অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও জেদ দেখে পাশের গ্রামের রাধাকৃষ্ণ সামন্ত তাঁকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। ভালোবাসার এই কাজ নিয়ে বেশ মত্ত থাকতেন শিল্পী। কিন্তু একটা মাটির প্রলেপের মতোই নুরের জীবনের সব পর্যার এতটা মসৃণ ছিল না। দেব-দেবীর মূর্তি গড়ায় নানা রকম বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে। এমনকী, নুরের মা নুরজাহান বিবির মৃত্যুর পরও কাউকে পাশে পাননি শিল্পী। ফলত, নিজের বসত বাড়ির ভিটেতেই মা’কে সমাধীস্থ করেছিলেন তিনি। হাজার সমস্যার থাকতেও কখনও থেমে পড়েনি সে। নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন সামনের দিকে। কিছু মানুষ তাঁকে যত পিছন দিকে টানার চেষ্টা করেছে নুর মহম্মদ যেন নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে তত এগিয়ে গিয়েছে। আজ অবশ্য আর পিছু ফিরে তাকানোর অবকাশ নেই তাঁর কাছে। মানুষের মাঝে নিজের শিল্পের মধ্যে দিয়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। তাঁর হাতে মাতৃমূর্তির চাহিদাও যেন আকাশছোঁয়া।

durga puja 2022(2)

শুধুই শরৎ নয়, সারাবছরই দেব-দেবীর মূর্তি বানানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন তিনি। আর এই সময়টা ব্যস্ততা একেবারে আকাশ ছাড়িয়ে যায়। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই তাঁর কাছে দেবী প্রতিমা গড়ার বরাত আসে। ব্যস্ততার মাঝে একটু নিঃশ্বাস ফেলারও যেন সময় পান না তিনি। এই সকল বরাতের মধ্যে স্মৃতি হাতড়ে নুর জানালেন, একসময়ে সুতাহাটার চৈতন্যপুরের একটি পুজো কমিটির প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন ৩৫০টাকা দিয়ে। এখন সেই প্রতিমার বাজেটই ৩৫০০০ টাকা। বেড়েছে অর্থের অঙ্ক, বদলেছে চারপাশ। কিন্তু বদলাননি সেই প্রতিমার শিল্পী। আজও সেই নুর মহম্মদের থেকেই পুজো কমিটি এসে প্রতিমা নিয়ে যান। শুধুই তাই নয়, নুর মহম্মদের কাজ নিয়ে এককালে যারা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন, আজ মেজাজ বদলেছে তাদেরও। শিল্পী এদিন জানান, ভিন ধর্মের ইষ্টদেবতার মূর্তি তৈরি করেন দেখে কখনও নিজের ধর্মের অবমাননা করেননি তিনি। তাঁর কথায়, ‘অন্যের ধর্মকে সম্মান দিলেই নিজের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া যায়।’




Back to top button