‘প্রেম’ সম্পর্কে বাঁধা নাকি এক ছোট্ট শিশু, অতঃপর নিজের জীবন দিয়ে পূর্ণ সাজা

ঘটনা ২০১৭ সালের ১১ই জুলাই-এর। পুরুলিয়ার সদর হাসপাতালে জ্বর, সর্দি, কাশির মতো স্বাভাবিক উপসর্গ নিয়ে এক তিন বছরের শিশুকে ভর্তি করেন তার মা মঙ্গলা গোস্বামী। চিকিৎসকেরা দেখেন, সেই সময়ই শিশুটির শরীরে ছিল একাধিক ক্ষত ও আঁচড়ের চিহ্ন। এমনকি ওই দুধের শিশুর নিম্নাঙ্গেও ছিল রক্তের দাগ। যথারীতি সন্দেহের বশেই মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে এক্সরে করা হয়। এরপর রিপোর্ট হাতে আসতেই হতবাক হয়ে পড়েন চিকিৎসকরা।

একাধিক সুচ বিঁধে রয়েছে তাঁর শরীরের ভিতরে। পরীক্ষা করে জানা যায় প্রায় সাতটির কাছাকাছি সুচ বিঁধে আছে তাঁর শরীরে। কিন্তু কীভাবেই বা তাঁর ভিতরে বিঁধল সুচ, নেই কোনো উত্তর। অবশ্য পরে তাঁর মা অর্থাৎ মঙ্গলা গোস্বামী অভিযোগ করেন, তিনি প্রাক্তন হোমগার্ড সনাতনের বাড়ির পরিচারিকা। সনাতনই হয়তো তাঁর মেয়ের উপর নির্যাতন চালিয়েছে।

এরপর ১৮ই জুলাই কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় শিশুটিকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে অস্ত্রপচার। কিন্তু তাতেও হয়নি শেষ রক্ষা। ২১-জুলাই নাগাদ মারা যায় শিশুটি।

love,affair,needle case,purulia,child murder প্রেম,বহির্ভূত সম্পর্ক,সুচ মামলা,পুরুলিয়া,শিশু হত্যা

এরপর যথারীতি পুলিশ চাইল্ডলাইনের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে মা মঙ্গলা গোস্বামীকে গ্রেফতার করে। কিন্তু ততক্ষণে পলাতক হয় সনাতন। পরে  ২৯ জুলাই উত্তরপ্রদেশের শোনভদ্র জেলার রেণুকোট থেকে পুলিশ তাকে ধরে। ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর দু’জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পুলিশ।

উল্লেখ্য, সরকারি কৌঁসুলি মাধ্যমে জানা যায়, ষাটোর্ধ্ব সনাতনের দুই ছেলে ও পুত্রবধূরা অন্যত্র থাকে। স্ত্রী মারা গেছেন বহু দিন। ফলত ত্রিশের মঙ্গলার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পরে কীর্তনিয়া সনাতন। কিন্তু ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোয় নাকি বাঁধা হচ্ছিল মঙ্গলার সন্তান। যার জেরে শিশুটিকে খুন করা সিধান্ত করে ফেলে তারা দুজন। কিন্তু হটাৎই সনাতনের পুত্রবধূরা সেদিন বাড়ি ফেরে। ফিরে তাঁরা শিশুটিকে অসুস্থ দেখলে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে। যার জেরেই গোটা ঘটনা বেরিয়ে আসে প্রকাশ্যে।

অবশেষে ঘটনার চার বছর বাদ শুক্রবার পুরুলিয়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (সেকেন্ড কোর্ট) রমেশকুমার প্রধান মূল অভিযুক্ত সনাতন গোস্বামী (ঠাকুর) ও তার প্রেমিকা তথা শিশুকন্যার মা মঙ্গলা গোস্বামীকে দোষী সাব্যস্ত করে।

কৌঁসুলি আনোয়ার আলি বলেন, “সনাতন ও মঙ্গলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এবং সোমবার রায় শোনানো হবে।”

এরপর সোমবার আদালত দুই অভিযুক্তকে ফাঁসির সাজা শোনায়।

আদালতে এদিন সনাতন দৃশ্যত নির্বিকার। পাশপাশি ছলছলে চোখে এজলাস ছাড়ে মঙ্গলা। কেউ কোনো মন্তব্য করেনি। এই পরিপ্রেক্ষিতে সনাতনের বড় ছেলে জিতেন্দ্র ঠাকুর বলেন, “বাবা দোষ করেছিল। শাস্তি প্রত্যাশিত।”

 




Back to top button