SSC Recruitment: এসএসসিতে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি, মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে চিঠি রাজ্যের বুদ্ধিজীবীদের

গত ১৬ই ডিসেম্বর এসএসসিতে (SSC) স্বচ্ছ এবং সঠিকভাবে নিয়োগের আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Bandyopadhyay) কাছে চিঠি দেন পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবী (Intellectuals) মানুষেরা। এর আগেও সমাজের একাধিক ইস্যু (Issues) নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে, সাংবাদিক বৈঠক, পথসভা বা জনমিছিল করে মুখ্যমন্ত্রীর দরবারে বিভিন্ন আর্জি জানিয়েছেন রাজ্যের বুদ্ধিজীবী শ্রেনী। এসএসসিতে নিয়োগ নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন দুর্নীতির স্বীকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে, এই প্রথমবার এই ইস্যুতে সরব হলেন সমাজের বুদ্ধিজীবীরা।
বৃহস্পতিবার নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক পদপ্রার্থীদের স্বচ্ছভাবে নিয়োগের দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন বুদ্ধিজীবী মহলের পরিচালক তরুণ মজুমদার, শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র, নাট্যকার চন্দন সেন, অভিনেতা কৌশিক সেন, অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী, অধ্যাপক নন্দিনী মুখোপাধ্যায়, শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার, নাট্যব্যক্তিত্ব রজত বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিচালক অরুণাভ গঙ্গোপাধ্যায়, চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম, অভিনেতা বিমল চক্রবর্তী, পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা বাদশা মৈত্র, নাট্যকার সীমা মুখোপাধ্যায়, পরিচালক অনীক দত্ত, আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়, সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী, গীতিকার ও গায়ক পল্লব কীর্তনীয়া, অভিনেতা চন্দন সেন, অভিনেতা দেবদূত ঘোষ, নাট্য ব্যক্তিত্ব মনীষা আদক, বাচিক শিল্পী শমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সমাজকর্মী শুভ্রা বন্দ্যোপাধ্যায়, নাট্যকার সৌরভ পালোধী, শিক্ষিকা লীনা ঘোষ, সংগীত শিল্পী শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার, কবি মন্দাক্রান্তা সেন এর মতন একাধিক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব।
বুদ্ধিজীবী মহল থেকে পাঠানো ঐ চিঠিতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মেধা তালিকা অনুযায়ী যাতে নিয়োগ হয়, সেই দাবিও উল্লেখ করা হয়েছে। ‘স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রচুর গরমিলের কারণে এখনও পর্যন্ত তিনবার অন্দোলন হয়েছে। প্রথম দফার আন্দোলন হয়েছিল ২০১৯ সালে, প্রেস ক্লাবের সামনে ২৯ দিনের অনশন মঞ্চে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, মেধাতালিকায় থাকা প্রার্থীরা নিয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন না। প্রয়োজনে ওয়ান টাইম ল (One Time Law) পরিবর্তন করে সবার চাকরি সুনিশ্চিত করা হবে। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে মেধাতালিকায় যোগ্যতা অর্জন করা ৫ জন শিক্ষক পদপ্রার্থী আর শিক্ষা দফতরের ৫ জন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন।’
কিন্ত বুদ্ধিজীবীরা এই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে লেখেন, ‘পরবর্তীকালে দেখা গেল যে, শিক্ষা দফতরের সঙ্গে যুক্ত ওই ৫ জন শিক্ষক পদপ্রার্থীদের কমিটি দুর্নীতিগ্রস্ত। তাঁরা ইচ্ছে করেই অনেক পিছনের র্যাঙ্কের পদপ্রার্থীদের চাকরি দিয়েছেন। দেখা গিয়েছে যাঁরা যোগ্য, তাঁরা আর শেষ অবধি চাকরি পাননি। শুধু তাই নয়, লকডাউনের সময় গেজেটকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে SMS-এর মাধ্যমেও গোপনে নিয়োগ করা হয়েছে। প্রায় আড়াই বছর কেটে গেলেও এই সমস্যার সমাধান হয়নি।’ তাঁরা নিজেদের চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘ফের কারচুপির কারণে দ্বিতীয় দফার প্রতিবাদে পুনরায় সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের সামনে দীর্ঘ ১৮৭ দিন ধরে ধরনা শুরু হয়। কিন্তু, এই বছরের ৪ ঠা অগাস্ট রাতে ধর্ণামঞ্চ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় পুলিস। অন্তত ৭০-৮০টির বেশি দুর্নীতির প্রমাণ চেয়ারম্যানের হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি, প্রতিনিয়ত আরও প্রমাণ এসে চলেছে।
আরও পড়ুন…………Singur agitation- ফের ধন্ধুমার সিঙ্গুরে, চাকরিপ্রার্থীদের নবান্ন অভিযান আটকে দিল পুলিশ
পরবর্তীতে ওই আন্দোলনকে মান্যতা দিয়ে ৪০ দিনের মধ্যে বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এরপর আরও দু মাস কেটে গেলেও তাঁরা সুবিচার পেলেন না। নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত অভিযোগ স্কুল সার্ভিস কমিশন স্বীকার করে নিলেও, এখনও পর্যন্ত শিক্ষক পদপ্রার্থীরা ন্যায্য অধিকার পাননি। তাই আবারও তাঁরা প্রতিশ্রুতি পূরণের আশায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে গত ৮ ই অক্টোবর থেকে তৃতীয় দফায় অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছেন। শীতের মধ্যেও সেই ধর্না জারি আছে। যতক্ষণ না শিক্ষকপদপ্রার্থীরা সুবিচার ও ন্যায্য অধিকার পান এই আন্দোলন চলবে। গত ১৩ ই ডিসেম্বর এসএসসি আন্দোলনকারীরা স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসে গিয়েছিলেন। কিন্তু, বিধাননগরের পুলিশ তাঁদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেছে। অনেকেই আক্রান্ত এবং আহত হয়েছেন। এমনকী মেয়েদের উপরও অত্যাচার হয়েছে। আমরা এর প্রতিকার চাই। এতদিন ধরে বঞ্চিত মেধাবী শিক্ষক পদপ্রার্থীদের স্বচ্ছ নিয়োগ চাই।’