শুরু পুজোর মার্কেটিং! হাওড়ার ‘১ টাকার বাজারেই’ মুখে হাসি ফুটছে হতদরিদ্রদের
সামনেই পুজো, আমার আপনার না হয় পুজোর মার্কেটিং শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কখনও কী ভেবেছেন আপনার বাড়ির গলি থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তা পড়তেই যে ভ্যানওয়ালাটা দাঁড়িয়ে থাকে তার কোনো নতুন জামাকাপড় হয়েছে কি না? অথবা ধরুন, আপনার বাড়িতে রোজ সকালে যে লোকটা খবরের কাগজটা দিতে আসছে তার ছেলে কিংবা মেয়ের নতুন জামা কাপড় জোটাতে গিয়ে তার নিজের দিকে তাকানো হয়ে কি না? কিংবা ধরুন না, এই কলকাতা শহরে মাথা তুললেই দেখা যায় গগন চুম্বী ইমারত। আর সেই বহু ইমারতের পাশেই একদম নীচের দিকে মাটি ঘেঁষে থাকা বস্তির মানুষগুলো এই পুজো নতুন জামাকাপড় কেনার টাকা জোগান করতে পেরেছে কি না। দৈনন্দিন কাজের মধ্যে এতোই ব্যস্ত আমরা যে এই সব কোনো দিকেই তাকানোর সময় আমাদের নেই। কিন্তু আমরা তাকানোর সময় পেলেও সেই সময় বের করে নিয়েছে সালকিয়ার এই নতুন প্রজন্মের।
ঘটনা কয়েক মাস আগের। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে লকডাউনে যখন বহু মানুষ কাজ হারিয়েছে। তখন তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল হাওড়ার সালকিয়ার মনস্বিতা দেব এবং তাঁর দুই বন্ধু মধুশ্রী সাধুখাঁ ও তথাগত পাল। তাঁদের যৌথ উদ্যোগে খুলে ফেলেছিল অভিনব ১ টাকার বাজার। পাশে দাঁড়িয়েছিল দরিদ্রদের। এবারও পুজোর আগে সেই একই উদ্যোগ নিয়ে আসতে ভোলেনি তাঁরা।
রাজ্যে লকডাউন কঠোরতা শিথিল হলেও অর্থনীতি এখনও তলানিতে। ফলত, দোরগোড়ায় উৎসব এসে হাজির হলেও রঙিন হয়ে ওঠেনি অনেকেরই জীবন। এবার সেই মানুষ গুলোর হাতেই নূন্যতম মূল্যে নতুন পোশাক তুলে দেবে ১ টাকার বাজার। এই প্রসঙ্গে মনস্বিতা জানিয়েছেন, “অনেকক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটে। পুজোর সময় মধ্যবিত্ত পরিবারে বাচ্চাদের জামাকাপড় দিতে গিয়ে বাবা-মা নিজেদের জন্যই কোনো পোশাক কেনেন না। এই চিন্তাভাবনা থেকেই আমাদের উদ্যোগ।”
অপরদিকে মনস্বিতার বন্ধু তথাগত জানিয়েছেন, “সব মিলিয়ে ১০০ জন পুরুষকে পাঞ্জাবি-ফতুয়া এবং ১০০ জন মহিলাকে শাড়ি দিচ্ছি আমরা। এবং সেটা তারা ১ টাকার পরিবর্তে কিনবেন আমরা একেবারেই বিনামূল্যে এই পরিষেবা দিচ্ছি না। আসলে লকডাউনে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত ও খেটে খাওয়া মানুষদের যাতে নিতে আত্মসম্মান বোধ না লাগে, সে কথা ভেবেই এমন চিন্তা-ভাবনা।”জানা গেল, আগামী ২ ও ৩ অক্টোবর হরগঞ্জ বাজারের পুরনো ঠিকানাতেই খুলতে চলেছে ১ টাকার বাজার। মাস কয়েক আগে পরিত্যক্ত এই দোকানকেই নবরূপ দিয়েছিলেন হাওড়ার তরুণ উদ্যোক্তরা।