KARTIK PUJA 2O21 – শুধুই নয় কার্তিক, একইদিনে চলতে থাকা বাংলার ‘থাকা পুজোর’ বিশেষত্ব অবাক করবে আপনাকে
পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই কম-বেশি কার্তিক পুজো হয়ে থাকে ঘরোয়া পদ্ধতিতেই। তবে প্যান্ডেল-ভিত্তিক কার্তিক পুজোও যে হয় না, এমনটা নয়। পশ্চিমবঙ্গের কাটোয়া জেলার কার্তিক পুজো অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। নবাবি আমলে এই কাটোয়া অঞ্চলের নাম ছিল ‘কন্টকনগর’। তৎকালীন সময়ে বণিক গোষ্ঠীর মধ্যে ‘বাবুসমাজ’ এর একটা প্রবণতা দেখা যায়। এই প্রবণতা থেকেই কাটোয়ার গঙ্গা-তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল যৌনপল্লী এবং এই যৌনকর্মীদের সন্তান কামনার ইচ্ছে থেকেই শুরু হয়েছিল কার্তিক পুজো।
বিশিষ্ট এই কার্তিক পুজোর পাশাপাশি একইসাথে পালন করা হয়ে থাকে ‘থাকা পুজো’। বর্তমান সমাজব্যবস্থার বিভিন্ন দিকগুলি এই ছোট ছোট পুতুল দিয়ে থাক থাক করে সাজিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়ে থাকে। বাঁশ দিয়ে পিরামিডাকার কাঠামোর মধ্যে সাজানো হয়ে থাকে ২৫-৩০ টি মাটির পুতুল, এই পুতুলগুলির মধ্যমনি হিসাবে অবস্থান করেন কার্তিক। পৌরাণিক বিভিন্ন কাহিনী তুলে ধরা হয় এই মূর্তির পার্শ্ববর্তী পুতুলগুলোর মাধ্যমে।
লোকমুখে শোনা যায়, ঠাকুরথানে খেলতে গিয়ে ছেলেরা একবার সাতটি মার্বেল কুড়িয়ে পেয়েছিল এবং সেই থেকেই এখানে সাতভাই কার্তিক পুজো অর্থাৎ ‘থাকা পুজো’র সূচনা হয়। এ পুজোয় সবার উপরে থাকে বড়ো ভাইয়ের মূর্তি, তার দুদিকে তিনজন করে দাঁড়িয়ে থাকে মোট সাতভাই। এই ধরনের মূর্তিগুলোর মাথায় বাবরি চুল, দশাসই চেহারা, জমিদারি গোঁফ, পাশে ময়ূর। হাতে তীরধনুকের পরিবর্তে থাকে গোলাপফুল। দধিকর্মার দিন মুড়ি-মোয়া বিতরণ করা হয়। যোদ্ধাকার্তিক, রামকার্তিক, জামাইকার্তিক ইত্যাদি কার্তিকও দেখতে পাওয়া যায় কাটোয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে।
বর্তমানে ‘থিমের পুজো’র ভীড়ে ‘থাকা পুজো’ অনেকটাই হারিয়ে গেলেও বড়বাজার, ঝাউতলা গলি, ঝঙ্কার অঞ্চলের পুজো উদ্যোক্তারা এখনও এই ‘থাকা পুজো’র ঐতিহ্যকে বয়ে নিয়ে চলেছে। ছোটো-বড়ো মোট দুশোটি কার্তিক পুজো নিয়ে আলোর উৎসবে মেতে ওঠে কাটোয়া। চলতি বছরে মোট ৬৮ টি ‘থাকা পুজো’র আয়োজন করা হয়েছে কাটোয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। তবে করোনা আবহে এবছর বন্ধ থাকছে কাটোয়ার কার্তিক পূজার শোভাযাত্রা।