School College Reopen- ২০ মাস পর খুলল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা, প্রথম দিনেই নজরকাড়া উপস্থিতির হার
অতিমারির কারণে ২০২০ সালের ১৫ ই মার্চ থেকে রাজ্যে স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হয়। করোনার প্রকোপ খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আসতেই ১৬ ই নভেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে, হাইকোর্টে দায়ের করা হয়েছিল মামলাও। সেই মামলা খারিজ করে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই ১৬ ই নভেম্বর থেকেই স্কুলের পথে পা বাড়াল ছাত্র-ছাত্রীরা। প্রথম দিনেই নজরকারা উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেল স্কুল কলেজ এবং বিদ্যালয়ে। শিক্ষা পর্ষদ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৬ ই নভেম্বর পড়ুয়াদের উপস্থিতির পরিসংখ্যান ছিল যথাক্রমে স্কুলগুলিতে ৭৫%, কলেজগুলিতে ৭৮% এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৫%। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদেরই আপাতত যেতে হবে বিদ্যালয়ে। এ বিষয়ে ঘোষণার পরেই জেলার বিভিন্ন স্কুলগুলিতে নির্দেশিকা(Guidelines) পাঠিয়ে দেওয়া হয় শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে।
কলেজ পড়ুয়াদের টিকাকরণ(Vaccination) হলেও স্কুল পড়ুয়াদের অনেকেরই এখনও ভ্যাকসিনেশান সম্পূর্ণ হয়নি। ফলে এক্ষেত্রে অধিক বেশী সতর্কতার সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে রাজ্যের স্কুল কর্তৃপক্ষ। কোভিড সতর্কতার কথা মাথায় রেখে সোমবার হুগলী জেলার অন্তর্গত সমস্ত স্কুলগুলিতে সম্পন্ন করা হয় স্যানিটাইজেশন(Sanitization) প্রক্রিয়া। ক্লাসরুমের দরজা-জানলা, বসার বেঞ্চ সব জায়গাতেই স্প্রে করা হয় কীটনাশক। রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা মেনেই মঙ্গলবার প্রতিটি স্কুলের গেটে চালু ছিল থার্মাল স্ক্যানিং(Thermal Scanning) পদ্ধতি। স্যানিটাইজেশন থেকে শুরু করে স্কুলের পরিচ্ছন্নতা সমস্ত বিষয়টি যথাযথভাবে তদারকি করতে রাজ্যের কিছু বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন খোদ স্কুল-পরিদর্শক(School Inspector)।
কোভিড পরিস্থিতিতে স্কুলপড়ুয়াদের জন্য নতুন নির্দেশিকাও দিয়েছিলেন রাজ্য সরকার। নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছিল, ক্লাস শুরু হওয়ার আধঘন্টা আগে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে হবে শিক্ষার্থীকে। বিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না কোনো অভিভাবক। স্কুলের মেন গেট(Main Gate), করিডোর(Coridoor) এবং প্রয়োজনীয় স্থানে দূরত্ব বিধি মেনে চিহ্ন এঁকে দেওয়া থাকবে। স্কুল থেকে আর দেওয়া হবে না মিড ডে মিল(Midday meal), উপরন্তু মিড ডে মিলের জিনিসপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হবে পড়ুয়াদের বাড়িতেই। শিক্ষা দপ্তর থেকে পাওয়া এই নির্দেশিকা মেনেই মঙ্গলবার ক্লাস হল রাজ্যের সিংহভাগ বিদ্যালয়েই। শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের অন্যান্য স্টাফেদের জন্য স্টাফ স্পেশাল(Staff Special) ট্রেনের পাস(Pass) দেওয়া তোরজোর চলছে বিদ্যালয়গুলিতে। নির্দেশিকা অনুযায়ী, নবম ও একাদশ শ্রেণির ক্লাস হবে সকাল ৯:৩০ টা থেকে বিকাল ৩:৩০টে পর্যন্ত এবং দশম শ্রেণীর ক্লাস হবে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪:৩০টে পর্যন্ত।
এছাড়াও জানানো হয়, বিদ্যালয়গামী কোন শিক্ষার্থী কোনো রকম গয়না পরতে পারবে না, ক্লাসের ভিতর একটি বেঞ্চে মাত্র দুজন পড়ুয়াই বসবেন, বিদ্যালয়ে কোনরকম সাংস্কৃতিক উৎসব পালন করা যাবে না, বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে(School Campus) প্রবেশ করতে পারবেন না কোনো বহিরাগত(Outsiders), বিদ্যালয়ের প্রার্থনা হবে নিজেদের ক্লাস রুমে বসে, কোনো ছাত্র-ছাত্রী নিজেদের পানীয় জল বা বই ভাগাভাগি করবে না একে অপরের সঙ্গে। হস্টেল খুললেও সেখানে আইসোলেশন রুমের(Isolation Room) ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক(Mandatory)।
তবে এতদিন পর বিদ্যালয়ে পৌঁছে বেশ উচ্ছ্বসিত শিক্ষক থেকে পড়ুয়ারা সকলেই। বনমালীপুর সন্তোষ ভট্টাচার্য মেমোরিয়াল হাই স্কুলের সহ শিক্ষক সুরজিত বসু বলেন, “এতদিন পর স্কুল খুলল আমরা সকলেই খুব আনন্দিত, এই অনুভূতি মুখে ব্যাখ্যা করার নয়। এরপর যাতে পড়াশোনাটা নিরবিচ্ছিন্নভাবেই হয় সেক্ষেত্রে আমরা সকলেই খেয়াল রাখবো। অনলাইন ক্লাসের সময় বহু ছাত্র-ছাত্রী বহু বিষয়ে সঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারেনি সেই বিষয় নিয়ে তারা কি করবে,কোন পদ্ধতিতে তাদের সেই সমস্যাগুলো দূর করা সম্ভব এই বিষয়ে একটি সরকারি নির্দেশিকা পাওয়া গেলে সকলেরই খুব সুবিধা হত। প্রত্যেকটি বিষয়ের ওপর নোটস এবং ভিডিও তৈরি করে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সার্কুলেট করে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি আমরা শিক্ষকেরা সকলেই।” পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদেরও অভিমত, স্কুল খোলার ফলে তারা সকলেই ভীষণ উচ্ছ্বসিত। খুশির স্বর শোনা গেল সকলের কন্ঠেই। অনেকদিন পরে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করে আনন্দিত তারা। সামনাসামনি প্রাক্টিক্যাল ক্লাস(Practical Class) বুঝতে পারবে, যে যে বিষয় নিয়ে ডাউট(Doubt) ছিল সরাসরি স্যারদের সাথে কথা বলে সেইসব জটিলতা সহজেই দূর করা যাবে বলে জানান কিছু পড়ুয়ামহল(Students)।