থাকে ১৫ ধরনের রকমারি পদ, আপনার জিভে জল আনবেই বাঙালীর ‘রান্না পুজো’! জেনে নিন ইতিহাস
ধীরে ধীরে রং বদলাতে শুরু করেছে আকাশ। মাঝে মাঝেই উুঁকি দিয়ে যাচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘের দল। বর্ষার প্রহর কেটে ধীরে ধীরে ডানা মেলতে শুরু করেছে শরৎ। চারিদকেই ধ্বনিত হতে শুরু করেছে উমার আগমণ বার্তা। আর এরই মাঝেই এবার ভাদ্র সংক্রান্তিতেই শুরু হতে চলেছে বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বনের অন্যতম প্রধান উৎসব রান্নাপুজো বা ‘অরন্ধন’।
এদিকে ‘অরন্ধন’-এর আভিধানিক অর্থ হল অ রন্ধন অর্থাৎ যে দিন রান্না করা হয় না বা রান্না নিষেধ। কিন্তু হুজুগে বাঙালির কাছে সেসবই মায়া। ভাদ্র সংক্রান্তি বা বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন পরিবারের কল্যাণার্থে বাঙালী হিন্দু গৃহিণীরা শিবের মানসপুত্রী দেবী মনসার উদ্দেশে নানা বিধ পদ রান্না করে নিবেদন করেন। এদিকে বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন তিথি মেনে সাধারণত অমাবস্যার অন্ধকারই থাকে। সেই ঘোর অন্ধকারে বাড়ির সবাই মিলে চলে রান্নাপুজোর তোড়জোড়। সারা রাত ধরে কুটনো, বাটনা, রান্না সবই চলতে থাকে।
এদিকে রান্না পুজোর সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে দেবী মনসার। কারণ গ্রাম বাংলায় গৃহস্থের ঘরে শিব-কন্যা লক্ষ্মী-সরস্বতীর মতো মনসার আদরও কম নয়। সাপের সঙ্গেই প্রায় ঘর করতে হয় গ্রামগঞ্জের মানুষকে। সাপের জ্বালা থেকে নিস্তার পেতেই চলে দেবী মনসার আরাধনা। এদিকে রান্নাপুজোর দিন সাধারণত উনুনের পুজো হয়। ওই দিন ওই উনুনে আর রান্না হয় না। সারা বছর আমরা যে উনুনে রান্না করি তার উপাসনা করা হয় এই পুজোয়। অন্য দিকে উনুনের গর্ত হল মা মনসার প্রতীক।
তাই রান্না পুজোর খাবারের ভোগ স্বরূপ শুরুতেই দেওয়া হয় দেবী মনসার উদ্দেশ্যেই। দেবীর কৃপালাভের আশায় আগের দিন রাতে রান্না করা পান্তা ভাত, সজনে শাক, ভাজাভুজি, ওলের বড়া, মাছের বিভিন্ন ধরনের পদ সাজিয়ে দেবীকে নিবেদন করা হয়। থাকে ছোলা-নারকেল দিয়ে কালো কচুর শাক। একই সঙ্গে মাছের ভিন্ন ভিন্ন পদও থাকে। নানা রকম সব্জি ভাজা, বিশেষত গাটি কচু, শোলা কচু আর চিংড়ি-ইলিশ থাকতেই হবে। খেসারির ডাল বেটে শুকনো ঝুরি, মালপোয়াও থাকে। তবে স্থান ও অঞ্চল ভেদে এই রান্নাপুজোর ভিন্ন ভিন্ন প্রকার ভেদ রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ১৩ থেকে ১৫ ধরনের পদ রান্না হয়ে থাকে। তবে পদের সংখ্যা বরাবরই বিজোড় সংখ্যায় করাই রীতি।