বাসেই বেঁধেছে সংসার! উদয়ের বাড়ি দেখতে ভিড় দূরদুরান্তের মানুষের, জোর চর্চা সোশ্যাল মিডিয়ায়
ওয়েব ডেস্ক: মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে নীল-হলুদ রংয়ের বোলপুর-সিউড়ি রুটের আস্ত একটা বাস। যাত্রী ওঠানামার জন্য রয়েছে দরজা। বাসের ছাদে ওঠার জন্য রয়েছে সিঁড়িও। এটাকে বাস ভেবে অনেকে ভুল করলেও এটি আসলে বাস না, বাসস্থান। সম্পূর্ণ বাসের আদলে এরকমই একটি বাড়ি তৈরি করেছেন বীরভূমের পাড়ুই থানার ধানাই গ্রামের মৃৎশিল্পী উদয় দাস। যা দেখতে দুরদুরান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় দৌলতে যা ইতিমধ্যেই ভাইরাল।
ছোটবেলা থেকেই রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন উদয়। উদয়ের বাপ-ঠাকুরদা আবার মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। রাজমিস্ত্রীর পাশাপাশি বংশগত ভাবে সেই কাজও শিখে ফেলেছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই মাটি, সিমেন্ট প্রভৃতি দিয়ে দেবদেবী-সহ বিভিন্ন মূর্তি তৈরির ঝোঁক ছিল উদয়ের। পরে সেটাই পেশা হয়ে দাঁড়ায়৷ কিন্তু শুধুমাত্রই মূর্তি তৈরি করে তৃপ্তি পেত না উদয়ের শিল্পীমন। বুকের ধিকিধিকি করে জ্বলতে থাকে মনের সুপ্ত বাসনা। সবসময় ভাবতেন, এমন একটা কাজ করবেন, যা দেখে চমকে যাবে মানুষ। আর তারই প্রতিফলন এই বাস-বাড়ি।
বরাবর মাটির বাড়িতেই বাস করেছেন উদয়। স্বপ্ন ছিল কোঠার বাড়ি তৈরি করবেন। উদয়ের কথায়, ‘ছোটবেলায় যখন প্রথম বার বাসে চড়েছিলাম, সেই সময় এই যানটিকে ভালবেসে ফেলি। ইচ্ছা ছিল, বাড়ি তৈরি করলে এমনই একটা বাড়ি বানাব।’ কিন্তু ইচ্ছা পূরণ করত গিয়ে প্রথম বাধা আসে অর্থের। একেই লকডাউন, তার উপর বাড়ি তৈরির কাঁচা মালের চড়া দাম। সাতপাঁচ না ভেবে ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে নেন উদয়। রাজমিস্ত্রির পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাড়ি তৈরির প্ল্যানিং নিজেই করে উদয়। মজুরি দেওয়া সামর্থ্য না থাকায় বাড়ি তৈরির সময় জোগাড়ের কাজ করেন স্ত্রী চন্দনা ও বড় ছেলে লালু। বাড়ি তৈরির পর রংও করেছেন নিজে। বাড়ি তৈরির পর অবশেষে তৃপ্তি পেয়েছে উদয়ের মন। তার শিল্পী সত্ত্বার পরিচয় মিলেছে এই বাসবাড়ি নির্মাণেই।
উদয়ের স্ত্রী চন্দনার কথায়, ‘বাস-বাড়ি তৈরি কথা শুনে আমি প্রথমে আঁতকে উঠেছিলাম। কী ভাবে এত টাকা জোগাড় হবে! তবে উনি আমাকে সাহস জুগিয়েছিলেন। আমরাও বাড়ির কাজে হাত লাগিয়েছি। প্রায় তিন লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।’ দৈর্ঘ্যে ২২.৫ ফুট, প্রস্থে ৮ ফুট এই বাসবাড়ি। ভিতরে রয়েছে দুটি ঘর এবং একটি রান্নাঘর। নিজের ঠাকুর তৈরির কারখানার সঙ্গে মিল রেখে বাসের নাম রেখেছেন মা লক্ষ্মী ট্রাভেলস। শিল্পীর কথায়, ‘ছোটবেলা থেকেই বোলপুর-সিউড়ি রুটের বাসে যাতায়াত করি। সেই থেকেই বাসের প্রতি ভালোবাসা। এবার পুরো পরিবার নিয়ে বাসের ভিতর বাস করব।’