সীমাহীন অর্থকষ্টের জের! বেকারত্বের জ্বালায় মা-বাবা-বোনকে খুন করে আত্মহত্যার চেষ্টা হুগলীর যুবকের
বেকারত্বের জেরে হুগলীর ধনেখালী এলাকায় ঘটে গেল এক ভয়াবহ ঘটনা। আর্থিক কষ্টে ভুক্তভোগী এক পরিবারের তিন সদস্যকে খুন করে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এক গৃহশিক্ষক। গৃহশিক্ষকের নাম প্রমথেশ ঘোষাল। মা-বাবা ও বিবাহিত বোনকে খুন করার পর অত্যন্ত জখম অবস্থায় পুলিশ গ্রেফতার করে এই যুবককে। প্রাথমিক তদন্তের পর, পুলিশ জানিয়েছে মানসিক অবসাদের জেরেই এই ঘটনা।
হুগলীর ধনেখালী দশঘড়া এলাকার রায় পাড়ার বাসিন্দা প্রমথেশ ঘোষাল। বাবা অসীম ঘোষাল ও মা শুভ্রা ঘোষালের সঙ্গেই থাকেন প্রমথেশ। রায়পাড়া এলাকার অনেক ছাত্রছাত্রীই তাঁর কাছেই পড়ে। স্থানীয় সূত্রে খবর, পড়াশোনায় খুব ভালো প্রমথেশের দোষ বলতে অতিরিক্ত মদ্যপান। এই মদ্যপানের কারণেই অনেকদিন ধরেই লিভার ক্যান্সারে ভুগছিলেন প্রমথেশ, কিডনির অবস্থাও খুব একটা ভালো নয় তাঁর। প্রায় অনেক বছর ধরে চেন্নাইতে চিকিৎসাও করাচ্ছিলেন তিনি। প্রতিমাসে তাঁর নিজের ওষুধের খরচ লাগে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা এবং বৃদ্ধ মা-বাবার পাঁচ হাজার টাকার কাছাকাছি। এমনকি বিবাহিত বোনের সাংসারিক খরচের অর্ধেকটাই দিতে হত প্রমথেশকে।
কিন্ত একবছর ধরে করোনা পরিস্থিতিতে আয় একদম তলানিতে, পড়তে আসতো না অধিকাংশ ছেলেমেয়েই। ফলে অনেকদিন ধরেই অর্থকষ্টে ভুগছিল পরিবার। মাসের পর মাস ধরে পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হওয়ায় মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন প্রমথেশ। বেশ কয়েক মাস ধরেই নিজের এবং বৃদ্ধ মা-বাবার কারোরই ওষুধ জোগাড় করতে পারতেন না তিনি।
পুলিশ মারফত খবর, ভাইফোঁটার দিন দাদা প্রমথেশকে ফোঁটা দিতে বাপের বাড়িতে এসেছিলেন প্রমথেশের বোন পল্লবী চট্টোপাধ্যায়। সোমবার রাত্রে মদ্যপ অবস্থায় প্রমথেশ চড়াও হন মা-বাবা ও বোনের ওপরে। প্রথমে লোহার রড দিয়ে তিনজনের মাথায় আঘাত করে তাদের অবচেতন করেন এবং তারপর তিনজনেরই হাতের শিরা কেটে দেন প্রমথেশ। এরপর নিজের শরীরেরও বিভিন্ন জায়গায় ছুরি দিয়ে আঘাত করেন, কিন্ত শেষমেষ বেঁচে যান তিনি।
মঙ্গলবার সকালে প্রমথেশের কয়েকজন ছাত্র এসে ডাকাডাকি করায়, অনেকক্ষণ পরে মদ্যপ অবস্থাতেই দরজা খোলে প্রমথেশ। ভিতরে ঢুকে ছাত্ররা তাঁর মা-বাবা ও বোনকে ঐভাবে পড়ে থাকতে দেখে ছুটে গিয়ে খবর দেয় প্রতিবেশীদের। প্রমথেশের প্রতিবেশীরাই সম্পূর্ণ ঘটনা জানান স্থানীয় পুলিশকে। হুগলী জেলার গ্রামীণ পুলিশ আধিকারিক আমন দীপ জানিয়েছেন, “শিরা কেটে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলেই মৃত্যু হয়েছে ঐ তিনজনের। সমস্ত ঘটনাটি মানসিক অবসাদের জেরেই ঘটিয়েছিলেন যুবক বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। “