আতঙ্ক মিশ্রিত স্বস্তি, বাড়ি ফিরেও ইউক্রেন ফেরত ছাত্রছাত্রীর চোখেমুখে উদ্বেগ

রাজকুমার মণ্ডল, কলকাতা : প্রচন্ড তুষারপাতের মধ্যে ভারী লাগেজ নিয়ে টানা ৪০ কিলোমিটার হেঁটে, একটি জঙ্গলে ঘুমিয়েছিলাম— কথাগুলো বলতে বললে গলা কেঁপে আসছিল ইউক্রেন ফেরত ছাত্রদের। দার্জিলিং-এর দুই এমবিবিএস ছাত্র, কেলসাং গিয়াতসো ভুটিয়া এবং অলোক মিশ্র, দুজনেই ইউক্রেনের লভিভ ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত। দুই দিন ধরে ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সীমান্তের পাশের জঙ্গলে দুই দিন কাটিয়েছেন। হিমাঙ্কের নিচে অর্থাৎ শূন্যের নিচে তাপমাত্রা এবং তুষারঝড় মোকাবেলা করে রিত জেগেছেন বিনিদ্র প্রহরীর মতো। রাশিয়ান যুদ্ধবিরতির ছয় ঘন্টার সময়ের ব্যাবধানে লোকেরা যখন পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে হাঁটছিল, ইউক্রেনীয় সৈন্যরা তাদের সাথে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ভুটিয়া ও মিশ্রকে উদ্ধার করে ভারতে পাঠানো হয়। ভারতের মাটিতে নেমে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে দুই ইউক্রেন ফেরত।Ukraine returnees

যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে ইউক্রেন ফেরত ছাত্রছাত্রীদের বলা হয়েছিল যেহেতু লভিভ সীমান্তের কাছাকাছি ছিল, ইউক্রেন ফেরত ছাত্রছাত্রীরা নিরাপদ ছিল এবং দূতাবাস দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে তাদের উদ্ধারের দিকে মনোনিবেশ করার উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধের সময়ে, ইউক্রেন ফেরত ছাত্রছাত্রীদের কাছে পরিস্কার ছিল, ইউক্রেনের কোনো জায়গাই সেই সময়ের জন্য নিরাপদ নয়। ২৫ ফেব্রুয়ারী, লভিভ থেকে একটি ট্যাক্সি নিলেএ যেটি ইউক্রেন ফেরত ছাত্রছাত্রীদের কোথাও মাঝখানে নামিয়ে দিয়েছিল এবং বলেছিল যে সীমান্তটি মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে এবং হেঁটে যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তখনও ইউক্রেন ফেরত ছাত্রছাত্রীরা আঁচ করতে পারে যে তারা পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে অনেক দূরে। অবশেষে জানতে পারে ৪০ কিমি দূরে অন্য কোনো স্থল পরিবহন উপলব্ধ নেই তখন।

আরো পড়ুন‌‌‌‌ যোগী আদিত্যনাথের ঘৃণামূলক বক্তব্যে ধর্মীয় মেরুকরণ, স্পষ্ট সাম্প্রদায়িক বিভাজন

তীব্র ঠান্ডা আর তুষারপাতের মধ্যে ছাত্রছাত্রীরা লাগেজ গুছিয়ে আমরা হাঁটতে থাকে। জঙ্গলে রাত কাটাতে হয়েছে। সবসময় গ্রাস করেছে শঙ্কা ও ভয়। যে কোনো মূহুর্তে শেষ হয়ে যেতে পারে সবকিছু কারণ দূর থেকে শেল নিক্ষেপ করার শব্দ প্রকট থেকে প্রকটতর। সীমান্তে পৌঁছানোর পরেও, সীমান্ত অতিক্রম করার অনুমতি পাওয়ার আগে আরও দুই দিন ঠান্ডায় অপেক্ষা করতে হয়েছিল। সেখান থেকে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা ইউক্রেন ফেরত ছাত্রছাত্রীদের দেশে নিয়ে যান। পোল্যান্ডে প্রবেশ করার সময় তখন গোলাগুলিতে এক ভারতীয় কর্ণাটকনিবাসী ছাত্র নিহত হওয়ার খবর শুনে আতঙ্কিত গিয়াতসো ভুটিয়া এবং অলোক মিশ্র। দুজনেই নিজেদের ভাগ্যবান মনে করে এবং প্রার্থনা করে ওদের হৃদয় অন্যদের কাছে যায় যেসব ছাত্রছাত্রীরা এখনও ইউক্রেনে আটকে আছে। বুধবার আমাদের জরুরী বিমানে করে আমরা দিল্লি পৌঁছে ইউক্রেন ফেরত ছাত্রছাত্রীদের চোখেমুখে বাড়ি ফেরার আতঙ্ক মিশ্রিত স্বস্তি।




Leave a Reply

Back to top button