মনগড়া কুসংস্কার আর নিয়মের জেরে পিরিয়ডস ডেকে আনতে পারে ভয়ঙ্কর সব রোগ, রইল বিস্তারিত

সায়ন্তী বৈশ্য, কলকাতা : ২৮ মে সারা বিশ্ব ধরে পালিত হয় ঋতুস্রাব দিবস। আজও একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমরা যখন সমান অধিকারের প্রশ্ন তুলি, পথে নামি, মহিলাদের অগ্ৰগতি নিয়ে আলোচনা করি । সেই সময়ে দাঁড়িয়ে আজও পিরিয়ডের কথা এলে আমরা ইতস্তত বোধ করি । মাথা নীচু করে চুপ করে গুটিয়ে যাই। পিরিয়ডের মতোন স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মকে আমরা অসুচি বানিয়ে দিই। আজও গ্ৰাম-গঞ্জে পিরিয়ডের সময় মেয়েদের আলাদা করে রাখা হয়, স্বাভাবিক জীবন থেকে তাদের আলাদা করা হয়। নেপকিনের বদলে হাতে তুলে দেওয়া নোংরা কাপড়। লোকাচুপির মধ্যে ঢাকা পরে যায় সচেতনতা।
স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রাণী লোধ জানিয়েছেন, নানারকম ফাঙ্গাল ইনফেকশন অনিবার্য ঋতুকালে যথেষ্ট পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও সচেতন না হলে। মাসের ওই বিশেষ কয়েকটি দিন যে বিষয়গুলির উপর জোর দিতে তিনি বলেছেন, স্যানিটারি ন্যাপকিন দীর্ঘ সময় না পরিবর্তন করে ফেলে রাখা যাবে না। ওভার ফ্লো না হলেও, কয়েকঘণ্টা পরপরই তা বদলে নেওয়া দরকার। এই সময় জননাঙ্গ দিয়ে অনেক রক্ত বেরিয়ে যায়। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পেশীগুলিও খুব নরম থাকে। শরীর থেকে নিঃসৃত রক্ত থেকেও সংক্রমণ ঘটতে পারে। তা যোনিপথ দিয়ে প্রবেশ করে একটু একটু করে ফ্যালোপিয়ান টিউব অবধি ছড়াতে পারে। যোনিপথ পরিষ্কার রাখা ভীষণই জরুরি। কোনও ব্র্যান্ডেড ভ্যাজাইনা-কেয়ার লোশনের দরকার নেই। সাবান ও জলই যথেষ্ট। স্যানিটারি ন্যাপকিন এমন ব্যবহার করতে হবে যা রক্ত শুষে নিয়ে উপরের ভাগ শুকনো রাখে। তাতে সংক্রমণের প্রবণতা কমে। সেই সঙ্গে সুতির প্যান্টি ব্যবহার করলে ভাল। তা ভালভাবে কেচে রোদে শুকিয়ে ইস্ত্রি করে নেওয়া দরকার। সেই সঙ্গে খয়াল রাখতে হবে ব্যবহৃত ন্যাপকিন ফেলার বিষয়টিও। এমন কোনও জায়গায় খোলামেলাভাবে তা ফেলা উচিত নয়, যা থেকে আবার জীবাণু ছড়াতে পারে। ঋতুকালে কোনো অসুবিধা দেখলেই অবহেলা না করে ডাক্তারের দ্বারস্থ হবেন ।
পেট বা কোমরের যন্ত্রণা যদি মাত্রাতিরিক্ত হয় তাহলে গরম জলের ছেঁক দেওয়া দরকার। ঋতুকাল কি ৭-৮ দিন ধরে চলে ? ২-৩ মাস হঠাৎ ঋতুবন্ধ ?মাসে একাধিকবার পিরিয়ড হচ্ছে ?মাসিকের পরও পেটের ব্যথা চলছে?রক্তপাতের সময় জমাট বাঁধা রক্ত বেশি বের হচ্ছে ? তবে সবার আগে কাটিয়ে উঠতে হবে ঋতুজনিত সমস্যা নিয়ে কথা বলা, আলোচনা করার জড়তা কাটানো। নইলে ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা শুধু কাগজের আলোচনার বিষয়বস্তুই হয়ে থাকবে। স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ দীপান্বিতা হাজারি জানিয়েছেন, সরকার ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে গত কয়েক বছরে। তাতে এই বিষয়ে সচেতনতা আগের থেকে কিছুটা হলেও বেড়েছে। তবে ঋতু-স্বাস্থ্য নিয়ে প্রচার বা সচেতনতা এখনও অনেক বেশি বাড়ানো দরকার।
আরও পড়ুন……টাকার প্রয়োজন নাকি? স্ত্রীকে বিক্রির ইস্তেহার দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল স্বামী
আরও পড়ুন……আবার সাত পাকে টেলি অভিনেত্রী তিতাস! বিয়ের খবর ভাসতেই গুঞ্জন সোশ্যাল মিডিয়াতে
আজও অনেকের মুখেই শোনা যায়, “শরীর খারাপ হয়েছে!” এমনকী, পিরিয়ডস নিয়ে প্রচুর কুসংস্কার এবং ভুল ধারণা আছে আমাদের সমাজে! যেমন, ঋতুস্রাব চলাকালীন টক খাওয়া যাবে না, আচার বা কাসুন্দি ইত্যাদি ছোঁওয়া যাবে না। ঋতুস্রাব চলাকালীন ফল খাওয়া যাবে না, তাতে নাকি রক্তপাত বেশি হয়! ঋতুস্রাব চলাকালীন ঠাকুরঘরে বা মন্দিরে প্রবেশ করা যাবে না?
ঋতুস্রাবে মেয়েদের শরীর থেকে যে রক্তপাত হয় তা ‘খারাপ রক্ত’ ইত্যাদি। আজ কিছুটা হলেও এই সব কুসংস্কার মানুষের মন থেকে দূর করা গেছে। তবে আজও কিন্তু অনেকেই স্যানিট্যারি ন্যাপকিনের বদলে কাপড়ের প্যাড ব্যবহার করেন তাদের ঋতুস্রাব চলাকালীন। অনেকেই জানেন না বা জানলেও পরিচ্ছন্নতার দিকে অতটা গুরুত্ব দেন না। আমাদের আরো সচেতনতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে , সরকার স্বাথ্যবিধির ক্যাম্পের সাহায্যে জনগনকে লাগাতার সচেতন করে যাচ্ছেন।