National Flag: গেরুয়া-সাদা-সবুজ তেরঙ্গায় সাজানো ভারতের ঐতিহ্যবাহী পতাকা, জানেন এর আগে কতবার বদলেছে নকশা?

ভারতবাসী দাঁড়িয়ে রয়েছে এক মাহেন্দ্রক্ষণে। আজ স্বাধীনতার পচাঁত্তর বছর অতিক্রান্ত করে ছিয়াত্তরে পৌঁছালাম।সারা দেশ উদগ্রীব হয়ে বসে ছিল সেই বিশেষ মুহূর্তের। ভারতবাসী জানে কত শ্রম, কত ত্যাগ, কত শহিদের রক্ত পেরিয়ে স্বাধীনতা এসেছে আমাদের দেশে। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন সূর্যের দর্শন পেয়েছিল ১৯৪৭ এর ১৫ আগস্ট। শহিদ বিপ্লবীদের স্মরণ ও ভারতের ঐতিহ্যকে স্মরণ করতেই পতাকা উত্তোলন করা হয়। যে পতাকাকে বিশ্বসেরা বলে মনে করেন ভারতবাসী, সম্মান করেন ভারতবাসী। জাতীয় পতাকা সেই দেশের সমাজের প্রতীক, মর্যাদা, আদর্শের প্রতীক বলে মনে করা হয়। পৃথিবীর প্রতিটি স্বাধীন দেশের একটি করে জাতীয় পতাকা আছে। মর্যাদার সঙ্গে জাতীয় পতাকা সম্মান রক্ষা করা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য। সেই পতাকার ইতিহাস আপনারা জানেন কী? আজকের এই বিশেষ মুহূর্ত নিজের দেশের গর্বের ইতিহাস জেনে নিন-
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর বিট্রিশ সরকার গ্রাস করে নেয় ভারতবর্ষ। তার আগে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন পতাকা ছিল। তার গায়ে ছিল এক এক রকম নকশা। তবে পরাধীন ভারতের পতাকা বিট্রিশ সরকার কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো উপনিবেশের পতাকার মিশ্রণে তৈরি। নীল ও লাল এনসাইন পতাকার ঊর্ধ্ব-বাম কোয়াড্র্যান্টে থাকত ইউনিয়ন ফ্ল্যাগ। স্টার অব ইন্ডিয়ার প্রতীক লাগানো ছিল। তবে তখন ও ভারতবাসীর নিজস্ব পতাকার ধারণা হয়নি। তবে যখন থেকে এল স্বাধীনতার ভাবাবেগ, তখন থেকেই নিজস্ব পতাকার পরিকল্পনা শুরু করল ভারতবাসী।
১৯০৪ সালে স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্যা ভগিনী নিবেদিতা ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকার রূপদান করেছিলেন। মার্গারেটের নামেই পরিচিত ছিল এই পতাকা।রক্তবর্ন চতুষ্কোণাকার ওই পতাকার কেন্দ্রে ছিল বজ্র ও শ্বেতপদ্ম সম্মিলিত হলুদ ইনসেট।ওই পতাকায় বন্দে-মাতরম কথাটি বাংলা ভাষায় লেখা হয়েছিল। এরপর ১৯০৬ সালের ৭ই অগাষ্ট কলকাতার পার্সি বাগান স্কোয়ারে বঙ্গ ভঙ্গ বিরোধী সভায় উত্তোলিত হয়েছিল পতাকা। লাল, হলুদ এবং সবুজের তিনটি অনুভূমিক রেখা দ্বারা গঠিত ছিল পতাকাটি। বিপ্লবী শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু এই পতাকা উত্তোলন করেন। কমলা ডোরায় আটটি অর্ধ-প্রস্ফুটিত পদ্ম এবং সবুজ রঙে্য সূর্য ও অর্ধচন্দ্র আঁকা হয়েছিল। দেবনাগরী হরফে লেখা হয়েছিল বন্দে মাতরম।
১৯০৭ সালের ২২ জুলাই জার্মানির স্টুটগার্টে ভিখাজি কামা, বীর সাভারকর ও শ্যামজি কৃষ্ণ বর্মার উদ্যোগে একটি ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল।যার ওপরে ছিল ইসলামের প্রতীক সবুজ রঙ,পতাকার মাঝে হিন্দু ধর্মের প্রতীক হিসেবে গেরুয়া ও লাল রঙে বৌদ্ধ চিহ্ন কে মাথায় রেখে রঙিন করা হয়েছিল। সবুজ রঙের ওপর ব্রিটিশ ভারতের আটটি প্রদেশের প্রতীক হিসেবে আটটি পদ্মের সারি আঁকা হয়েছিল। মাঝে দেবনাগরী হরফে বন্দে মাতরম কথাটি লেখা হয়েছিল।১৯০৭ সালের প্যারিসে দ্বিতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মাদাম কামা এবং তার নির্বাসিত বিপ্লবীদের দল। এটির সঙ্গে প্রথম পতাকার খুব মিল ছিল, তবে উপরের অংশে কেবল একটি পদ্মই ছিল। আর ছিল সাতটি নক্ষত্র ছিল, যা সপ্তর্ষিমন্ডলের প্রতীক।
১৯১৭ সালে বাল গঙ্গাধর তিলক ও অ্যানি বেসান্ত হোমরুল আন্দোলনের নতুন একটি পতাকার প্রচলন করলেন। এই পতাকায় পাঁচটি লাল এবং চারটি সবুজ অনুভূমিক রেখা পর্যায়ক্রমে আঁকা ছিল। সপ্তর্ষি মন্ডলের সাতটি তারার স্হান হয়েছিল তাদের উপর।এক কোণে অর্ধচন্দ্র ও তারা ছিল।
সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির অধিবেশন চলাকালীন ১৯২১ সালে বিজয়ওয়াড়ায় এক অন্ধ্রপ্রদেশের যুবক একটি পতাকা নিজের হাতে বানিয়ে গান্ধীজীর কে উপহার দেন। দুই রঙের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছিল এই পতাকা। লাল হিন্দু ও সবুজ মুসলমান ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। গান্ধীজি পতাকাটি গ্রহণ করেন।
স্বাধীনতার দিকে ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে ভারত। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আর ও জটিল হচ্ছে। সশস্ত্র সংগ্রাম থেকে বিশ্বযুদ্ধ সবদেখে নিয়েছে ভারত। পতাকার ইতিহাসেও ১৯৩১ সালটি গুরুত্বপূর্ণ।১৯৩১ এর পতাকাটি ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনীর যুদ্ধের প্রতীকও ছিল। এই পতাকায় বর্তমান পতাকার মতোই গেরুয়া, সাদা এবং সবুজ রঙ ছিল। তারই সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর চরকা ছিল এর কেন্দ্রে। গেরুয়া রঙ ত্যাগের, সাদা সত্য ও শান্তির প্রতীক এবং সবুজ বিশ্বাস ও প্রগতির প্রতীক রূপে গৃহীত হয়েছিল।
১৯৪৭ সাল ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গঠন হল গণপরিষদ। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, সরোজিনী নাইডু, চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী, কেএম মুন্সি ও বিআর আম্বেদকর ছিলেন সেই পরিষদে। নেতৃত্বে ছিলেন রাজেন্দ্র প্রসাদ। গেরুয়া সাদা সবুজে সেজে উঠল পতাকা। সম্রাট অশোকের ধর্মচক্রকে পতাকার প্রতীক হিসেবে চরকের জায়গায় গৃহীত করা হয়। কংগ্রেস পার্টির পতাকা হয়ে ওঠে ভারতের জাতীয় পতাকা। ১৯৪৭ এর ১৫ আগস্ট স্বাধীন ভারতে প্রথমবার এই পতাকাটি উত্তোলন করা হল।