Digha Jagannath Temple: খাজার বদলে অন্য প্রসাদ জগন্নাথ দেবের ভোগে!
পুরীর সমুদ্রসৈকত ও জগন্নাথ মন্দির বরাবরই বাঙালির অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এবার দীঘার সমুদ্রসৈকতে পুরীর আদলে গড়ে উঠছে জগন্নাথ মন্দির, যার নির্মাণ প্রায় শেষের পথে।

Jagannath Temple Digha: পুরীর আদলে গড়ে উঠছে বাংলার নতুন তীর্থস্থান, তবে থাকছে বিশেষ চমক! পুরীর ( Puri ) জগন্নাথ মন্দির এবং সমুদ্রসৈকত বরাবরই বাঙালির অন্যতম প্রিয় ভ্রমণস্থল। ওড়িশার উপকূলে অবস্থিত এই মন্দিরের মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। এবার পুরীর আদলেই বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকত দীঘায়( Digha ) তৈরি হচ্ছে এক বিশাল জগন্নাথ মন্দির। প্রায় সম্পূর্ণতার পথে থাকা এই মন্দিরের স্থাপত্য ও পরিবেশ হবে পুরীর মন্দিরের মতোই, তবে থাকছে কিছু বিশেষত্ব, যা একে অনন্য করে তুলবে।
বাংলার জগন্নাথ মন্দিরে বিশেষ প্রসাদ
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান প্রসাদ হিসেবে রয়েছে বিখ্যাত খাজা, যা দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ। তবে দীঘার জগন্নাথ মন্দিরে খাজার পরিবর্তে বাংলার ( Bangla ) নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি প্রসাদ হিসেবে থাকছে ক্ষীরের গজা। শুধু গজাই নয়, কালীঘাটের ( Kalighat ) প্রসিদ্ধ প্যারা সন্দেশ ও গুঁজিয়াও থাকছে প্রসাদের তালিকায়। বাংলার স্বাদ ও সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই করে তৈরি হচ্ছে এই নতুন ভোগ তালিকা, যা মন্দিরের অন্যতম বড় আকর্ষণ হতে চলেছে।
২০ একর জমির ওপর ২৫০ কোটি টাকার মন্দির
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের তুলনায় দীঘার এই মন্দিরের পরিসর আরও বড়। প্রায় ২০ একর জমির ওপর ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে এই মন্দির কমপ্লেক্স, যেখানে শুধু জগন্নাথ মন্দিরই ( Jagannath Mandir ) নয়, থাকছে আরও নানা ধর্মীয় স্থাপনা। মন্দিরের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিশাল মার্বেলের বিগ্রহ। পুরীর নিয়ম মেনে এখানেও নির্মিত হচ্ছে বিমলা দেবীর মন্দির ও রাধাকৃষ্ণ মন্দির।
বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে এই মন্দিরের বিগ্রহ তৈরি করা হচ্ছে নিম কাঠে, যা দারুব্রহ্ম হিসেবে পরিচিত। এই বিগ্রহ তৈরি করছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন)। পুরীর মন্দিরের মতোই দীঘার মন্দিরেও মন্দিরের দৈনন্দিন সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান পালিত হবে।
পুরীর মতোই ধ্বজা ও স্বর্গদ্বার, থাকছে চৈতন্যদ্বার
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে প্রতিদিন ধ্বজা পরিবর্তনের নিয়ম রয়েছে। দীঘার মন্দিরেও সেই একই রীতি অনুসরণ করা হবে। পুরীর মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এখানেও বিশেষ কিছু দ্বৈতাপতিদের দায়িত্ব দেওয়া হবে ধ্বজা পরিবর্তনের জন্য। প্রতিদিন নতুন ধ্বজা উত্তোলন হবে মন্দিরের শীর্ষে, যা পর্যটকদের জন্যও এক বিশেষ দর্শনীয় বিষয় হবে।
পুরীর স্বর্গদ্বারের মতো এখানেও প্রধান প্রবেশপথ থাকবে, যার নাম রাখা হয়েছে চৈতন্যদ্বার। এই গরুড় স্তম্ভের সামনে দাঁড়িয়েই ভক্তরা মন্দির দর্শনের প্রথম অভিজ্ঞতা পাবেন।
ভোগ নিবেদন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
জগন্নাথ মন্দির মানেই ভোগ নিবেদনের এক বিশাল পরম্পরা। পুরীর মন্দিরে প্রতিদিন ৫৬ প্রকারের ভোগ নিবেদন করা হয়। দীঘার মন্দিরেও বিশেষ ভোগঘর থাকবে, যেখানে রোজ ভোগ রান্না হবে। থাকছে পর্যাপ্ত স্টোররুম, রেস্টরুম এবং বিশেষ ডালা ঘর, যেখানে ভক্তরা তাদের পুজোর সামগ্রী রেখে মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন।
প্রথম রথযাত্রা এবার দীঘাতেও!
এবারই প্রথমবার দীঘার এই নতুন মন্দিরে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা ( Rath Yatra ) অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। পুরীর রথযাত্রার প্রতিটি নিয়ম মেনেই দীঘার মন্দিরেও এই উৎসব পালিত হবে। মন্দির পরিচালনার জন্য তৈরি হয়েছে বিশেষ ট্রাস্টি বোর্ড, যেখানে থাকছেন জেলা পরিষদ, সরকারি আমলা, ইস্কনের চারজন সদস্য ও সনাতনী ট্রাস্টের পাঁচজন সদস্য।
রাজ্য সরকারের আশা, দীঘার এই নতুন তীর্থস্থান শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ হবে না, বরং এটি দীঘার পর্যটন ব্যবসাকেও আরও সমৃদ্ধ করবে। বাংলার মানুষের সঙ্গে পুরীর জগন্নাথ দেবের যে আত্মিক সংযোগ রয়েছে, তা এবার আরও শক্তিশালী হবে দীঘার নতুন জগন্নাথ মন্দিরের মাধ্যমে।
অক্ষয় তৃতীয়ার দিন শুভ উদ্বোধন!
এই ঐতিহাসিক মন্দিরের শুভ উদ্বোধন হতে চলেছে অক্ষয় তৃতীয়ার ( Akshaya Tritiya ) দিন, যা অত্যন্ত শুভ দিন হিসেবে বিবেচিত হয়। এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে দীঘার ( New Digha ) এই জগন্নাথ মন্দির, যা ধর্মপ্রাণ মানুষদের জন্য এক বিশাল আশীর্বাদ হয়ে উঠবে।