Guru Nanak Jayanti – আবির্ভাবেই লুকিয়ে অগণিত রহস্য, জেনে নিন গুরু নানকের জীবনের অজানা কথা

জীবনকে স্বচ্ছভাবে দেখার ৩টি মন্ত্র। ‘বন্ধ চাকো’, অর্থাৎ সকলের সঙ্গে মেলামেশা করো, ‘কিরাত করো’ অর্থাৎ সত্‍ জীবনযাপন করো ও ‘নাম জাপনা’ বা ঈশ্বরের (GOD) নাম জপো। মানসিক বিকাশের জন্য ভ্রমণের বিকল্প নেই। দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াও। অগণিত মানুষ এই পথ অনুসরণ করেছেন, অনুপ্রাণিত হয়েছেন। আধ্যাত্মিক যুক্তি ও অভ্যন্তরীণ শান্তির জীবনযাপনের জন্য বেছে নিয়েছেন এই মন্ত্রগুলিই। মানুষের কাছে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ইক ওঙ্কার (Ek Onkar) (এক ঈশ্বর) এর বার্তা। বিশ্বাস করতেন যে স্রষ্টা তাঁর প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে বাস করেন। তিনিই নানক(NANAK)।

শিখ ধর্মের প্রবক্তা ও  প্রথম গুরু হলেন গুরু নানক যিনি বাবা নানক নামেও পরিচিত । প্রতি বছর সারা পৃথিবীজুড়ে কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে তাঁর জন্মদিবস উপলক্ষে পালন করা হয়  ‘গুরু পুরব ‘ বা ‘ গুরু নানক জয়ন্তী ‘। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের অন্তর্গত লাহোরের নিকটে অবস্থিত ‘রায় ভর দি তালবন্দী’ গ্রামে, ১৪৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই এপ্রিল গুরু নানকের জন্ম। তাঁর বাবা মেহতা কল্যাণ দাস বেদী ভূমি রাজস্ব বিভাগে কর্মরত ছিলেন , এবং মা ছিলেন তৃপ্তা দেবী।

know about Guru Nanak, founder of Sikh religion

সারা জীবন ধরে ঈশ্বর সাধনাই ছিল নানকের একমাত্র লক্ষ্য। লেখাপড়া ছেড়ে তিনি প্রথমে কেরানীর কাজ করতেন। পরবর্তীতে বিয়ে করেন ‘সুলক্ষণী দেবী’র সাথে। নানকের ঘরে জন্ময় নেয় দুই পুত্রসন্তান, শ্রীচান্দ ও লক্ষ্মী চান্দ। কিন্তু সংসারের মায়া নানককে আটকে রাখতে পারেনি,  স্ত্রী সহ দুই সন্তানকে ত্যাগ করে তিনি রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন সত্য ও  ঈশ্বরের বাণী প্রচার ও অনুধাবনের প্রয়াস নিয়ে। বাণী প্রচারের সঙ্গী হিসাবে তিনি তার মুসলমান বন্ধু রাবাব(এক বিশেষ বাদ্যযন্ত্র)বাদক মারাদোনাকে নিয়ে মক্কা ,মদিনা , শ্রীলঙ্কা, বাগদাদ সহ ভারতের বাইরের বিভিন্ন স্থানে সহজ ও আঞ্চলিক ভাষায় ঈশ্বরের বাণী প্রচার করতে থাকেন।

guru nanak jayanti 2021,Guru Nanak,Guru Nanak Dev Ji,নানক,শিখ,স্বর্ণ মন্দির,কারতারপুর,Nanak,Sikh,Golden Temple,Kartarpur

এছাড়াও তার জীবন জুড়ে ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের অন্ত নেই, থিক যেমন সাগরের জলের শেষ নেই। লঙ্গর খানার প্রচলন, যেখানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক ছাদের নিচে আহার করতে পারবে। আজ সমস্ত গুরুদুয়ারাতে লঙ্গর দান হয়। ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে লাহোর থেকে ২৫ কিমি দূরে বিটি রোডের ধারে থাকা জলাশয়ের নাম রাখেন অমৃত সায়র ,নানক জলাশয়ের পাশে এক শিখ মন্দির গড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন কিন্তু ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দের ২২শে সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের করতাপুর নামক গ্রাম থেকে হঠাৎ তিনি তার বন্ধু মারাদোনা সহ নিরুদ্দেশ হয়ে যান ফলত ওই মন্দির আর স্থাপন হয়না। অবশেষে ১৫৮৮ খ্রিস্টাব্দে শিখ গুরু অর্জুন সিং অমৃত সায়রের পাশে নানকের ইচ্ছা অনুযায়ী মন্দিরের প্রথম প্রস্তর স্থাপন করেন , যার নাম হয় ” স্বর্ণ মন্দির “।

আরও পড়ুন- কে ছিলেন গুরু নানক, জেনে নিন শিখ ধর্মগুরুর কিছু অপার কীর্তি সম্পর্কে

গুরু নানকের জন্মদিবস তিনদিন ধরে বিশ্বজুড়ে পালন করেন শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষেরা। প্রথমদিন দিবসের প্রারম্ভ হয় গ্রন্থ ‘গুরু গ্রন্থসাহিবের’ মাধ্যমে, যার পাঠ ৪৮ ঘণ্টা ধরে করা হয় যাকে ‘অখন্ড পাঠ’ বলে। দ্বিতীয় দিন গ্রন্থসাহিবের পাঠ শেষে শুরু হয় প্রভাতফেরি ‘নগর কীর্তনে’। এই নগর-কীর্তন গুরুদুয়ারা থেকে বিভিন্ন লোকালয়ের দিকে এগিয়ে চলে , জনসমাবেশের মাঝ দিয়ে চলে একটি পালকি যার মধ্যে গুরু নানকের ছবি ফুল দিয়ে সুসজ্জিত থাকে এবং পালকির সামনে ৫ জন সহস্র রক্ষী নিশান সাহিব পতাকা বহন করে নিয়ে যায় । কীর্তনের সাথে চলতে থাকে ধর্মীয় গান এবং ‘ গাটকা ‘ যা শিখ মার্শাল আর্ট নামে পরিচিত। দুপুরে গুরুদুয়ারার লঙ্গরে ভক্তদের উদ্দেশ্যে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গুরু নানকের জন্মদিন যদিও ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই এপ্রিল কিন্তু শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষেরা তিথি অনুসারে গুরু নানকের জন্মদিবস পালন করেন।




Back to top button