“ছেলেকে বাড়ি ফেরাব কীভাবে?” রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দুশ্চিন্তায় কাতর কণ্ঠে প্রশ্ন মায়ের

গতকাল ভোরের দিকে রাশিয়া ইউক্রেনের ( Russia-Ukraine War ) বিরুদ্ধে বাজিয়েছে যুদ্ধ শঙ্খ। আর এই ঘটনার পর থেকেই একেবারে বিধ্বস্ত পরিস্থিতি গোটা ইউক্রেন জুড়েই। দেশের প্রতিটি বাসিন্দার মনে ঘনঘটা হয়েছে চিন্তার মেঘের। আর এই চিন্তা যে শুধুই ইউক্রেনের বাসিন্দাদের কুরে কুরে খাচ্ছে এমনটা মোটেই নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চিন্তা প্রভাব ফেলেছে বাংলার কিছু ঘরেও। বলা বাহুল্য, চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা সুবিধার্থে প্রতি বছরই ওই দেশে পাড়ি দেয় বাংলার বহু পড়ুয়া। রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর থেকেই তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের চিন্তায় উড়েছে ঘুম।

আজ যুদ্ধের দ্বিতীয় দিন। ইতিমধ্যে উঠে আসছে সেখানে আটকে থাকা বাংলার বহু পড়ুয়ার নাম। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘীর খাঁড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মন্ডল পাড়ার বাসিন্দা অর্ঘ্য মাঝি ডাক্তারি পড়তে গিয়েছেন ইউক্রেনে। কিন্তু সেখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় যথেষ্ট চিন্তায় পড়েছে তাঁর পরিবারের সদস্যরা। বাবা শিবশঙ্কর মাঝি ও মা বিশাখা মাঝির কার্যত ঘুম উড়েছে ছেলের চিন্তায়। গত অক্টোবর মাসেই পড়াশোনা সূত্রে সে পাড়ি দেয় ওই দূর দেশে। তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই রীতিমতো ( Russia-Ukraine War ) আতঙ্কে রয়েছে তাঁর পরিবার। ইউক্রেন থেকে ফোনে অর্ঘ্য জানিয়েছে, চারিদিকে বোমাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। যুদ্ধের জেরে ভীষণ ভাবে আতঙ্কিত সে। বাড়ি ফিরতে চায় সে। কিন্তু বিমান ভাড়ার বিপুল পরিমাণ অর্থ নেই তাঁর কাছে। এমনকি ইউক্রেনেও বিমান পরিষেবা বন্ধ বলে জানিয়েছে সে। ফলেই দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছে মাঝি পরিবারের। এই পরিস্থিতিতে তাঁর পরিবারের বক্তব্য, “অনেক কষ্ট করে ছেলেকে বিদেশে ডাক্তারি পড়তে পাঠিয়েছি। কিন্তু এখন এই পরিস্থিতি কীভাবে ওঁকে বাড়ি ফেরাবো এই নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছি।”

Russia-Ukraine Warঅর্ঘ্য মাঝির পাশাপাশি রায়দিঘীর কাশিনগর গ্রামের বাসিন্দা অর্কপ্রভ বৈদ্য নামে আরও এক ডাক্তারি ছাত্র আটকে রয়েছে ( Russia-Ukraine War ) ইউক্রেনে। সেখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় যথেষ্ট চিন্তিত ঐ পরিবারও। এই প্রসঙ্গে দু’দিন আগেই সে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি ভিডিও শেয়ার করে। প্রথমদিকে, সেখানকার পরিস্থিতি ঠিক আছে বললেও, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে বলে জানায় সে।

উল্লেখ্য, মাস খানেক আগেই পড়াশোনা সূত্রে ওই দেশে পাড়ি দিয়েছিল অর্কপ্রভ। কিন্তু পড়াশোনা ঠিক করে শুরু করার আগেই যেন ঘটে গেল বিপত্তি। যুদ্ধের ( Russia-Ukraine War ) দাবানলে প্রবেশ করে গেল গোটা দেশ। মেডিক্যালের পড়াশোনা উন্নত মানের হওয়ায় প্রতি বছরই বাংলা থেকে অনেক পড়ুয়াই পাড়ি দেয় সেই দেশে। বাকিদের মতোই সোনারপুরের এক বাসিন্দাও আপাতত আটকে রয়েছে ওখানে। সোনারপুরের বাসিন্দা পুষ্পক স্বর্ণকার। টার্নোপিল স্টেট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির পঞ্চম বর্ষের ছাত্র সে। ইউক্রেন থেকে ছেলের বাড়ি ফেরা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগে রয়েছে তাঁর গোটা পরিবার। যদিও ২৬ শে ফেব্রুয়ারির একটি বিমানের টিকিট পেয়েছে পুস্পক, কিন্তু সেই বিমান বাতিল হওয়ার প্রবল সম্ভবনা। কারণ, সেই বিমান সিল করে দেওয়ার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। সে জানিয়েছে, “ইতিমধ্যে পরিবারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে পেরেছি। এছাড়াও, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সকল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে ইউক্রেন সরকার।” যুদ্ধ পরিস্থিতির মাঝে ছেলে আটকে পড়ায় পরিবার বেশ আতঙ্কিত। সরকারের কাছে তাঁদের ছেলেকে তাঁদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার কাতর আর্জি জানিয়েছে পুষ্পকের পরিবার।

আরও পড়ুন….Ukraine: ‘বাবা কবে দেখা হবে…’ যুদ্ধে যাওয়ার আগে বাবাকে আর্জি মেয়ের

উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেনের ( Russia-Ukraine War ) যুদ্ধে চিন্তার মেঘ ঘনিয়েছে বসিরহাটের মণ্ডল পরিবারের মাথায়ও। তাঁদের একমাত্র সন্তান অর্পণ মন্ডল ইতিমধ্যে ইউক্রেনেই রয়েছে। যুদ্ধের মাঝে আটকে পড়ায় তাঁর পরিবার ভীষণ চিন্তিত। তাঁর মা কাতর কণ্ঠে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ছেলের পরিস্থিতি নিয়ে ভীষণ ভয়ে আছেন তিনি। আবার অর্পণের পাশাপাশি সেই দেশে পাড়ি দিয়েছিল বাংলার আরও এক পড়ুয়া, গোবরডাঙার বেরগুমের বাসিন্দা স্বাগতা সাধুকা। অর্পণের মতোই মেডিক্যালের পড়াশোনা করতে দূর দেশে পাড়ি তার। যেভাবে রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ চলছে তাতে রীতিমতো চিন্তায় রয়েছে স্বাগতার আত্মীয়-স্বজনরা।

 




Leave a Reply

Back to top button