পর পর খুন চারজনকে, খুনের বর্ণনা দিয়েই লিখেছিলেন উপন্যাস

প্রত্যুষা সরকার, কলকাতা: ভারতের উত্তরে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চিন। সেখানেই জিঝিয়াং প্রদেশের পাহাড়ের কোল ঘেঁষা ছোট্ট একটি শহর হুজোউ।বছরের প্রায় সব সময়ই এখানে লেগে থাকে পর্যটকদের আনাগোনা ( china writer )। আর এই সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘটে যায় এক মর্মান্তিক ঘটনা। ছোট্ট একটি অতিথিশালায় নির্মমভাবে খুন হলেন চার ব্যক্তি। খুনিকে খুঁজতে হিমসিম খাচ্ছে চিন, এমন সময় নিজের দোষ স্বীকার করতে লিখে ফেললেন একটা উপন্যাস।

সালটা ১৯৯৫ সালের ২৯ নভেম্বর, হোটেলের মালিক সহ খুন হল আরও তিন। তাদের মধ্যে ছিলেন মালিকের স্ত্রী, ১৩ বছরের নাতি-সহ এক পর্যটক। প্রত্যেককেই একইভাবে খুন করা হয়েছে। করোটিতে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। আর এই খুনের রহস্যের সমাধান করতেই রীতিমতো কালঘাম ছুটে যায় চিনা পুলিশের। তবুও জানা যায়নি কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। ছোট্ট এই শহুরে হটেলে তখনও শুরু হয়নি সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা। এমনকি ছিল না কোনো রেজিস্টারও। অবশেষে এই মামলার সমাপ্তি হল ২০১৭ সালে, একটি থ্রিলার উপন্যাস দিয়ে। যেখানে অপরাধী, স্বয়ং গ্রন্থের লেখক লিউ ইয়ংবিয়াং। উপন্যাসের শুরুতেই ছিল এক অদ্ভুত প্রিফেস। ‘দ্য বিউটিফুল রাইটার হু কিলড’। গল্পে খুনির আসনে লিউ বসিয়েছিলেন এক তরুণী লেখিকাকে। তবে দিয়েছিলেন নিজের লোপাট করা সমস্ত প্রমাণ।

china writer

ইয়ংবিয়াং-এর সম্পূর্ণ উপন্যাস ‘দ্য গিল্টি সিক্রেট’- প্রকাশিত হয়েছিল ২০১০ সালে। যে গল্পের মূল কাহিনিই ছিল চিনের হুজোউ হত্যাকাণ্ড। তবে প্রকাশিত হওয়ার পরই শুরুতে একেবারেই বিষয়টা নজরে আসেনি পুলিশ প্রশাসনের। কারণ ওই হত্যাকাণ্ডের পর অনেক কনস্পিরেসি থিওরির বই প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু বার বার রহস্যভেদে ব্যর্থ হওয়ার পর এই উপন্যাসের ( china writer ) স্মরণাপন্ন হতে হয় ভারপ্রাপ্ত ডিটেক্টিভকে। তবে লেখকই যে খুনি, তা একেবারেও বুঝতে পারেননি ডিটেক্টিভ। তবে, উপন্যাসটি থেকে অপরাধের জাল ছিড়তেই আস্তে আস্তে খুলতে থাকে দরজা। শেষ পর্যন্ত একটি পোড়া সিগারেটের বাট এবং জিন টেকনোলজি তাঁকে পৌঁছে দেয় লিউয়ের কাছে।

এরপর গ্রেপ্তার হন লিউ। তবে শুধু লিউ নয়, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাঁর আরও এক সঙ্গী ওয়াং মোউমিং। গ্রেপ্তারের পর হাঁসি মুখেই লিউ স্বীকার করে নেন গোটা ঘটনা। এমনকি জোর গলায় জানান, এই দিনটির জন্যই এত বছর অপেক্ষা করছিলেন তিনি। দুজনেই নিজেদের কর্মক্ষেত্রে বেশ সুপ্রতিষ্ঠিত। একজন আইনজীবী অন্য জন লেখক। তাহলে হঠাৎ এই খুন কেন করলেন তাঁরা? এর পিছনের কারণই বা কি? লিউ স্বীকার করেন, যে সময় এই খুনের ঘটনা ঘটে তখন দু’জনেরই বয়স ছিল বেশ কম। বিলাসবহুল জীবনের জন্য অর্থের চাহিদা সেসময় অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়া তাঁদের। তবে স্রেফ চুরি করতেই হুজোউ প্রদেশের ওই হোটেলে পর্যটকের বেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা। লক্ষ্য ছিল, রাতের বেলায় অন্যান্য অতিথিদের অর্থ হাতানো। কিন্তু সমস্যা বাঁধল অন্য জায়গায়। ছিনতাইয়ের সময় ঘুম ভেঙে যায় এক পর্যটকের। সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা না করে, ওই ব্যক্তিকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। এরপর ওই ব্যক্তির গোঁঙানিতে তখন ঘুম ভেঙে যাগ হোটেলের মালিকের। খুনের সব প্রমাণ মুছে ফেলতেই বাকি তিনটে খুন। কিন্তু কাউকে হত্যা করা পরিকল্পনা ছিল না তাঁদের।

আরও পড়ুন – চকোলেট থেকে হেট স্টোরি! নকল থেকে বিতর্ক, একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত বিবেক

গ্রেপ্তারের পর আদালতে নিজের বিচারের সময় ন্যূনতম সাফাইটুকুও দেননি লিউ। মাথা পেতে নিয়েছেন সমস্ত সাজা কিংবা বলা ভালো মৃত্যুদণ্ড। তবে এরপর তার কি হয়েছিল, আদৌ এখনও তিনি জীবিত আছেন কিনা— তার কোনো তথ্যই আর প্রকাশ করেনি চিন সরকার। এমনকি মূল বইটিরও অস্তিত্ব মুছে দেয় প্রশাসন। তবে একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে ‘দ্য গিল্টি সিক্রেট’ ( china writer )। আজও একই ভাবে জনপ্রিয়।

আরও পড়ুন – প্র্যাঙ্কস্টার সেন ওয়ার্ল্ড বিটার, ঘরকুনো ছেলে লক্ষ্য বিশ্ব খেতাবের দোরগোড়ায়




Leave a Reply

Back to top button