মৃত্যুর খবরে কেঁপে উঠেছিল রেডিও, ভাষা দিবসে আজও রক্তাক্ত স্মতির পাতায় হারিয়ে যান বছর বিরাশির চিত্তরঞ্জন বাবু

রাখী পোদ্দার, কলকাতা : আমরা যারা বাংলা ভাষায় কথা বলি তাঁদের কাছে ২১শে ফেব্রুয়ারি ( 21 February) খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এদিন বাঙালিদের কাছে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। এদিন যেমন একধারে অত্যন্ত আনন্দের একটি দিন, তেমনই অপর ধারে এর সাথে জড়িত রয়েছে এক বেদনাদায়ক ইতিহাস। বেদনাদায়ক বলার কারণ এদিন নিজদের মাতৃভাষা ( International Mother Language Day) হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বহু মানুষ যেমন দিয়েছিল নিজেদের রক্ত। তেমনই আনন্দের এই দিনটি কারণ তাঁদের দেওয়া রক্ত বৃথা যায়নি। তাঁদের এই বলিদানের জন্যই আজ আমরা পেয়েছি বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর ( UNESCO) প্যারিস অধিবেশনে ( Paris session) ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ( International Mother Language Day) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তারপর ২০০০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি থেকে প্রত্যেক বছর পালিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

 

International Mother Language DayInternational Mother Language Day : স্কুলের কথা মনে পড়লেই আজও আনমোনা হয়ে যান চিত্তরঞ্জন বাবু

সালটা ছিল ১৯৫২ , ২১শে ফেব্রুয়ারি বরিশালের মালিখালি হাইস্কুলে তখন চলছিল ক্লাস সেভেনের ক্লাস। হঠাৎই বাইরে থেকে এক আর্তনাদ ভেসে আসে স্কুলের অংক শিক্ষক বঙ্কিমবাবুর। স্কুলে একমাত্র তিনি রেডিও চালাতে পারতেন। স্কুলে রাখা এলাকার সেই একটি মাত্র রেডিওতে ভেসে আসে এই খবর। ভাষা আন্দোলনে শহীদ হয়েছে বাংলার পাঁচ যুবক। দেখতে দেখতে সত্তরটা বছর পার হয়ে গিয়েছে। বয়সের ভার সেই ঘটনার স্মৃতিকে একটুও মলিন করতে পারেনি বিরাশি বছরের চিত্তরঞ্জন বাইন বাবুর ( Chittaranjan Bain)। নিজের সল্টলেকের বাড়িতে বসে স্মৃতিচারণ করলেন চিত্তরঞ্জন বাবু। তিনি বললেন, পাঁচ যুবকের শহিদ হওয়ার সেই খবর তাঁদের স্কুল থেকে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল সম্পূর্ণ বরিশালের হাটে বাজারে। পরের দিন ছাত্রনেতা নীরদ নাগ এসে স্কুল চত্বরে জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়েছিলেন।

ওপারে প্রান গিয়েছিল মাতৃভাষার দাবিতে, এপারে প্রান গেল শিক্ষার দাবীতে- আনিস আসলে কার

International Mother Language Day : কথায় ভাসে সম্প্রীতির সুর

আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি “বিশ্ব ভাষা দিবস” ( International Mother Language Day)। আজ থেকে সত্তর বছর আগে যার সূচনা হয়েছিল ঢাকায়। মাতৃভাষার স্বীকৃতির দাবিতে গর্জে উঠেছিল সমগ্ৰ বাংলা। নির্বিচারে হত্যা করা হয় আন্দোলনরত যুবকদের। চিত্তরঞ্জন বাবুর মতে, আজকের দিনে বাঙালির মন ধর্মের নামে সংকীর্ণতায় ভরে গেছে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনও তাঁর একশো জন বন্ধুর মধ্যে ষাট জনই মুসলমান। কই, তাঁদের তো কখনও তাঁরা নিজেদের থেকে আলাদা করে ভাবেননি। সম্প্রতি ২০১৮ সালেই বাংলাদেশে গিয়ে পাঁচ মাস ঘুরে বেড়িয়ে ছিলেন বন্ধুদের বাড়ি। এছাড়াও উদাস চোখে তিনি বলেন, ছোটবেলায় ফরিদপুর, বরিশাল, ঢাকায় এমনটা ছিল না। বসন্তপঞ্চমীর দিন হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে যুবতীদের বাসন্তী রঙের শাড়িতে উদ্বেল হতে দেখেছেন তাঁরা। কিছু বিভেদকামী মানুষের প্ররোচনায় এখন এ-সব হচ্ছে।

International Mother Language Day: আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি- ভাষাদিবস নাকি শহীদ দিবস, জেনে নিন ভাষা দিবসের ইতিহাস

International Mother Language Day :বর্তমানে ভারতেই রয়েছেন চিত্তরঞ্জন বাবু

 

বর্তমানে ভারতেই রয়েছেন চিত্তরঞ্জন বাবু। কথার ফাঁকে মাঝে মধ্যেই তাঁর গলায় শুনতে পাওয়া যায় বন্ধু রহমানের কথা। মুজিব রহমানকে তিনি প্রথম দেখেছিলেন সাত বছর বয়সে। সেটাই ভারতের স্বাধীনতার বছর। পরের বছর পাকিস্তান ( Pakistan) থেকে জিন্না এসে বলে গেলেন, পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের ( Bangladesh) সরকারি ভাষা হবে কেবলমাত্র উর্দু। তাঁদের কেও পড়তে হত উর্দু। আর সেই থেকেই ভাষা নিয়ে জন্মাতে আরম্ভ করল ক্ষোভ।




Leave a Reply

Back to top button