International Mother Language Day: আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি- ভাষাদিবস নাকি শহীদ দিবস, জেনে নিন ভাষা দিবসের ইতিহাস

প্রত্যুষা সরকার, কলকাতা:  ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি। আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ( International Mother Language Day )। বাংলাদেশ সহ পশ্চিমবঙ্গ তথা সমস্ত বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এ দিনটি বাংলাদেশে শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। তবে কি এই একুশে ফেব্রুয়ারি? সারা বাংলা জুড়ে কেনো এই দিনটি উজাপিত করা হয়? জেনে নিন ভাষা দিবসের ইতিহাস।

International Mother Language Day

International Mother Language Day: মাতৃভাষা দিবস আন্দোলন 

১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮, বৃহস্পতিবার) বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে পূর্ব পাকিস্তান এর ছাত্ররা। আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে শহীদ হন অনেক তরুণ। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো রফিক, জব্বার, শফিউল, সালাম, বরকত সহ অনেকেই।

International Mother Language Day: কেন এই আন্দোলন হয়েছিল

সবাই ভালোবাসে তার মাতৃভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতে। আর এই মাতৃভাষায় যখন কেউ হস্তক্ষেপ করে নিজের ভাষা জোর করে চাপতে চায় তখন হয় সমস্যা। এরকম সংকট দেখা গেছিলো পূর্ব বাংলা যখন ছিল পাকিস্তানের অন্তর ভুক্ত।স্বাধীনতার পর উর্দু ভাষাকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ পূর্ব বাংলার উপর। তখনই বাংলা ভাষার অবস্থান নিয়ে বাঙালির আত্ম-অম্বেষায় যে ভাষাচেতনার উন্মেষ ঘটে। তারই সূত্র ধরে বিভাগোত্তর পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকায় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে শুরু হয় ভাষা-বিক্ষোভ। ১৯৪৮ সালের মার্চে এ নিয়ে সীমিত পর্যায়ে আন্দোলন হয় এবং ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তার চরম প্রকাশ ঘটায়।

 International Mother Language Day: আন্দোলনের কারণ 

১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মুসলিম লিগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমীন ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। ২১ ফেব্রুয়ারী সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে বেরিয়ে পরে রাজপথে। সেখানে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ হতাহত হন কয়েকজন ছাত্রযুবা। এই ঘটনাই ক্ষুব্ধ হয় ঢাকার সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদ জানাতে ঢাকাবাসী সমবেত হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে। নানা নির্যাতন সত্ত্বেও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরা প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রাজপথে নেমে আসে। তারা অংশগ্রহণ করে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায়। ভাষাশহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠে একটি স্মৃতি স্তম্ভ। যা সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয়। একুশে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়।

International Mother Language Day: বাংলা ভাষার স্বীকৃতি

এই আন্দোলন ক্রমে বাড়তেই থাকে। এরপর ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৭ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি।

আরও পড়ুন- International Mother Language Day : বাংলা ভাষার বিক্ষোভে শহীদের স্মৃতিতে আজও শোকাহত বাংলা, ছবিতে ভাষা দিবস

International Mother Language Day: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

স্বীকৃতি ভ্যাঙ্কুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে। এরপর ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে তাদের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এবং এতে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস  হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।

আরও পড়ুন- Anis Khan : “রাজ্য পুলিশের উপর আস্থা নেই”, আনিস মৃত্যু রহস্যে বাড়ছে জল্পনা




Leave a Reply

Back to top button