ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে মদতদাতা পুতিন ঘনিষ্ঠ, রইল তালিকা

রাজকুমার মণ্ডল, কলকাতা  : প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ( Putin )  নিজের একান্ত ঘনিষ্ঠ মানুষদের সঙ্গে সাম্প্রতিক দুটি বৈঠকে যেভাবে দেখা গেছে। অথচ সেরকম বিচ্ছিন্ন অবস্থায় তাকে দেখা যাওয়ার ঘটনা বেশ বিরল। তিনি তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের থেকে অনেক দূরত্বে বসে আছেন। ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে পুতিনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কারা এবং যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব কাদের ওপর? ভ্লাদিমির পুতিনকে দেখলে একজন নিঃসঙ্গ মানুষ বলে মনে হয়। তিনি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে এমন ঝুঁকিপূর্ণ একটি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছেন, যা তার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে। কমান্ডার ইন চীফ বা সর্বোচ্চ অধিনায়ক হিসাবে, যেকোনো ধরণের যুদ্ধাভিযানের চূড়ান্ত দায়িত্ব তার উপরেই বর্তায়। তবে তিনি এক্ষেত্রে সবসময় তার অত্যন্ত অনুগত কিছু লোকজনের উপর নির্ভর করেন, যাদের মধ্যে অনেকেই রাশিয়ার নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থায় তাদের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।প্রেসিডেন্ট ( Putin ) হিসেবে তার মেয়াদকালের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তগুলোতে পরামর্শ দিচ্ছেন দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন সের্গেই শোইগু, যিনি ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ এবং পশ্চিমাদের তথাকথিত সামরিক হুমকি থেকে রাশিয়াকে রক্ষা করার জন্য এই লড়াই দরকার বলে পুতিনের কথারই পুনরাবৃত্তি করে গেছেন তোতাপাখির মতো।Putin

তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের ( Putin ) এতটাই ঘনিষ্ঠ যে, তার সঙ্গে শিকার করতে এবং মাছ ধরতে সঙ্গী হিসেবে সাইবেরিয়ায় যান।সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোগুই এখনও সবচেয়ে প্রভাবশালী। ২০১৪ সালে সামরিক অভিযান চালিয়ে ক্রাইমিয়া দখলের সাফল্যের কৃতিত্ব তাকে দেয়া হয়। সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউর দায়িত্বেও ছিলেন। নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ করে বিষক্রিয়ার দুটি ঘটনার জন্যও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। যুক্তরাজ্যের সলসবারিতে ২০১৮ সালের ভয়াবহ হামলা এবং ২০২০ সালে সাইবেরিয়ায় বিরোধী নেতা অ্যালেক্সই নাভালনির উপর প্রায়-প্রাণঘাতী হামলার পেছনেও ছিল তার নাম। জেনারেল গেরাসিমভও ক্রাইমিয়া দখলের সামরিক অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।রাশিয়া বিশেষজ্ঞ মার্ক গ্যালিওত্তি তাকে “রাশভারী, মারকুটে” স্বভাবের বলে বর্ণনা করেছেন। ১৯৯৯ সালের চেচেন যুদ্ধে সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর থেকেই তিনি ভ্লাদিমির পুতিনের সামরিক অভিযানে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে আসছেন। তিনি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান পরিকল্পনায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় ছিলেন। গত মাসে বেলারুসে সামরিক মহড়ার তত্ত্বাবধানেও ছিলেন তিনি।দুই নেতা হলেন সিকিউরিটি সার্ভিসের প্রধান আলেকজান্ডার বোর্টনিকভ এবং বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান সের্গেই নারিশকিন। তিনি পুতিনের তিন বিশ্বস্ত মানুষের একজন, যারা ১৯৭০ এর দশকে সেন্ট পিটার্সবার্গের সময় হতে তার সাথে কাজ করেছেন, যখন রাশিয়ার এই দ্বিতীয় শহরটি লেনিনগ্রাদ নামে পরিচিত ছিল।

প্রেসিডেন্টের ( Putin ) সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বৃত্তের ভেতরে থাকা সবাই সিলোভিকি বা বাস্তবায়নকারী হিসাবে পরিচিত, তবে এই তিনজন আরও বেশি ঘনিষ্ঠ।প্রেসিডেন্টের উপর নিকোলাই পাত্রুশেভের মতো প্রভাব খুব কম মানুষই রাখেন। তিনি কমিউনিস্ট যুগে তার সাথে তৎকালীন কেজিবি-তে কাজ করেছিলেন। পরে ১৯৯৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নতুন সংস্থা এফএসবি-এর প্রধান হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়।ইউক্রেনে আক্রমণের তিন দিন আগে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সেই উদ্ভট বৈঠকে মিস্টার পাত্রুশেভই বলেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের “প্রধান লক্ষ্য” রাশিয়াকে ভেঙে ফেলা।নিকোলাই পাত্রুশেভ ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। বেন নোবেল বলেছেন, “তিনিই সেদিন যুদ্ধের বড় হুংকারটা দিয়েছিলেন এবং এমন একটি ধারণা রয়েছে যে ওই কারণেই পুতিন আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। পুরানো লেনিনগ্রাদের ওই তিন জনের বাইরে, সের্গেই নারিশকিন তার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় প্রেসিডেন্টের সাথেই ছিলেন।সের্গেই নারিশকিন বহু দশক ধরে প্রেসিডেন্ট পুতিনের ছায়াসঙ্গী। ১৯৯০ এর দশকে সেন্ট পিটার্সবার্গে, তারপর ২০০৪ সালে মিস্টার পুতিনের অফিসে এবং অবশেষে পার্লামেন্টের স্পিকার হিসেবে। তিনি প্রেসিডেন্টের প্রতিটি কাজের পেছনে একটি আদর্শিক ভিত্তি দাঁড় করাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ভ্যালেন্টিনা মাতভিয়েনকো হলেন সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে আসা পুতিনের বিশ্বস্ত এবং অনুগত ব্যক্তিদের আরেকজন।পুতিনের ঘনিষ্ঠ মহলের মধ্যে তিনি এক বিরল নারী চরিত্র। রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে বিদেশে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে তার সভাপতিত্বে, আর এর মাধ্যমেই ইউক্রেনে সেনা অভিযানের পথ খুলে গেছে। তিনি ২০১৪ সালেও ক্রাইমিয়াকে দখল করার প্রচেষ্টায় সাহায্য করেছিলেন৷

আরো পড়ুনওয়ার্নে সর্বশ্রেষ্ঠ স্পিনার নন, শেন সম্পর্কে গাভাসকারের তিরস্কার

প্রেসিডেন্টের ( Putin ) একজন প্রাক্তন দেহরক্ষী, এখন রাশিয়ার ন্যাশনাল গার্ড, রোসগভার্ডিয়া পরিচালনার দায়িত্বে আছেন।রোমান সাম্রাজ্যের প্রাইটোরিয়ান গার্ডের আদলে এটি মাত্র ছয় বছর আগে গঠন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন, যা অনেকটা তার ব্যক্তিগত সেনাবাহিনী হিসাবে কাজ করবে।প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীকে এই বাহিনীর প্রধান হিসেবে বেছে নিয়েছেন, যাতে এটি সবসময় তার প্রতি অনুগত থাকে। ভিক্টর জোলোটোভ এরই মধ্যে এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা চার লাখে উন্নীত করেছেন।

পুতিন আর কার কথা শোনেন?

প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্টিন রাশিয়ার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কঠিন কাজের দায়িত্বে, তবে যুদ্ধের বিষয়ে তার তেমন কিছু বলার নেই।রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইয়েভজেনি মিনচেনকোর মতে, মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন এবং রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি রোসনেফ্টের প্রধান, ইগর সেচিনও প্রেসিডেন্টের বেশ ঘনিষ্ঠ।ধনী ব্যবসায়ী দুই ভাই বরিস এবং আর্কাডি রোটেনবার্গ, প্রেসিডেন্টের শৈশবের বন্ধু ছিলেন, তারাও দীর্ঘকাল ধরে তার ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন হিসেবে আছেন। ২০২০ সালে, ফোর্বস ম্যাগাজিন তাদের রাশিয়ার সবচেয়ে ধনী পরিবারের ঘনিষ্ঠ।




Leave a Reply

Back to top button