যুদ্ধ বিধ্বংসী মনোভাবের জেরে পড়ল কোপ, বিদেশী কোম্পানির ঝাঁপ বন্ধতে আর্থিক সঙ্কটে রাশিয়া

ইউক্রেনে হামলা (Russia Ukraine War) শুরুর পর থেকেই কয়েক ধরনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছে রাশিয়া। মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিশ্বের নামীদামি সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও। এ তালিকায় এবার যোগ দিয়েছে কোমল পানীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কোকাকোলা, পেপসি ও ম্যাকডোনাল্ডস এর মতো নামী ব্র্যান্ড।
ইউক্রেনের উপর হামলা (Russia Ukraine War) ঘোষণা পর থেকেই রাশিয়ার উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে চলেছে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। প্রাথমিক ভাবে যা ছিল আমেরিকা ও পশ্চিমী দেশগুলোর তরফে কেবলমাত্র অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, দিনে দিনে তা ক্রমশ সামাজিক বয়কটের সমতুল্য হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
আমেরিকা ও তার বন্ধু পশ্চিমী দেশগুলোর অভ্যন্তরে সেই দেশের বিভিন্ন বহুজাতিক, যারা রাশিয়াতেও রমরমিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠতে শুরু করেছে। এই প্রেক্ষিতে কোক, পেপসি, ম্যাকডির উপর রাশিয়ায় ব্যবসা বন্ধের জন্য চাপ ক্রমশ বাড়ছিল। আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দুনিয়ায় এই সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত হতে শুরু করায় পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নেয়। সেই দেশের জনপ্রিয় তারকাদের একটি অংশ সরাসরি দেশবাসীর কাছে এই সংস্থার পণ্য বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছিলেন। তাঁরা বলছিলেন, যতদিন এই সংস্থাগুলো রাশিয়ায় ব্যবসা চালিয়ে যাবে, তত দিন তাদের বয়কট করা হোক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্ভবত সেই চাপের কাছে মাথা নত করেই আপাতত রাশিয়ায় তাদের সমস্ত কার্যকলাপ বন্ধ করে দিল কোক, পেপসি, স্টারবাকস, ম্যাকডোনাল্ডস।
অপরদিকে ইউক্রেনে রুশ হামলার (Russia Ukraine War) দিকে ইঙ্গিত করে পেপসি জানিয়েছে, রাশিয়ায় পেপসি কোলা, সেভেন আপ ও মিরিন্ডা বিক্রি করবে না তারা। তবে শিশুদের ফর্মুলা দুধের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি চালু থাকবে।রাশিয়ায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার কোকাকোলার এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইউক্রেনে এই মর্মান্তিক ঘটনার (Russia Ukraine War) অযৌক্তিক প্রভাব যেসব মানুষ সহ্য করছেন, আমরা তাদের পাশে আছি।’ একই দিনে রাশিয়ায় আপাতত ব্যবসা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কফি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান স্টারবাকস। এর কিছু সময় আগে মার্কিন ফাস্ট ফুড চেইন ম্যাকডোনাল্ড’স জানায়, রাশিয়ায় তাদের রেস্তোরাঁগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হবে।
ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর সম্প্রতি অ্যাপল, জারা, এইচঅ্যান্ডএমসহ কয়েকটি বৈশ্বিক কোম্পানি রাশিয়ায় বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে আছে সুইডেনভিত্তিক আসবাব নকশা ও গৃহসজ্জা পরিষেবা প্রতিষ্ঠান আইকিয়া, ইলেকট্রনিকসামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্যামসাং, যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিলাসবহুল ফ্যাশন হাউস বারবেরি ও অনলাইন ফ্যাশন খুচরা বিক্রেতা বুহু, ব্রিটিশ বহুজাতিক গাড়ি কোম্পানি রোলস রয়েস, অ্যাস্টন মার্টিন ল্যাগোন্ডা ও জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক গাড়ি নির্মাতা জেনারেল মোটরস ও অনলাইন স্ট্রিমিং পরিষেবা কোম্পানি নেটফ্লিক্সের মতো নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স রাশিয়ায় তাদের কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। চীনা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকও রাশিয়ায় লাইভ স্ট্রিমিং ও নতুন কনটেন্ট আপলোড স্থগিতের ঘোষণা করেছে । নেটফ্লিক্সের মুখপাত্র বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা রাশিয়ায় তাদের সার্ভিস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তবে এই পরিস্থিতিতেও খানিক ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে কেএফসি এবং পিজা হাট। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, রাশিয়ায় তারা নিজেরা ব্যবসা করে না। সত্ত্ব কিনে সেখানকার লোকেরাই তাদের নাম ব্যবহার করে ব্যবসা চালায়। তাই বাকিদের মতো ঘোষণা করে তাদের পক্ষে রাশিয়া ছাড়ার প্রশ্ন নেই। যদিও এই সংস্থা দুটি জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ তারা মানবোন্নয়নের পিছনে খরচ করবে। প্রসঙ্গত, রাশিয়ায় হাজারেরও বেশি কেএফসি-র দোকান রয়েছে।
রাশিয়া নতুন করে আইন পাস করার কারণে কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তাদের কাজ স্থগিত করেছে দেশটিতে। সেসব প্রতিষ্ঠান হলো বিবিসি, ব্লুমবার্গ নিউজ, কানাডার সিবিসি, জার্মান পাবলিক ব্রডকাস্টার এআরডি ও জেডডিএফ এবং ইতালির রাই।
এ দিকে তাবড় সংস্থা যখন রাশিয়া থেকে পাততাড়ি গুটোতে ব্যস্ত, তখন বিবিসি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তারা মস্কো থেকে আবার ইংরেজি ভাষায় সংবাদ সম্প্রচার শুরু করে দিচ্ছে। ক্রেমলিনের নতুন সংবাদমাধ্যম সংক্রান্ত আইনের কারণে কিছুদিন আগেই বিবিসি রাশিয়ায় সম্প্রচার বন্ধের ঘোষণা করেছিল। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের দাবি, নয়া আইন অত্যন্ত কঠোর। যদিও বিবিসি জানিয়েছে, রাশিয়ার মাটি থেকে সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবেই তারা নতুন আইন মেনে নিচ্ছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম সুইফটের লেনদেনও বন্ধ হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে রাশিয়ার ইউক্রেনের ওপর আগ্রাসন (Russia Ukraine War) ভারী পড়তে চলেছে তাদের অপরই। চাপের মুখে রাশিয়া কি সিদ্ধান্ত নেয়, সেই দিকেই নজর বিশ্ববাসীর।
আরও পড়ুন গেরুয়াতেই মত্ত চার রাজ্য, নেপথ্যে কোন রাজনৈতিক সমীকরণ দেখছে বিশেষজ্ঞরা
আরও পড়ুন বিরাট ক্যাপ্টেন, বেঙ্গালুরু কোহলিকে দলে চাইছে এই কারণেই