ইউরোপ জয় করবে বাঙালি, বাংলা ভাষা শিখছে জার্মান, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, সুইজারল্যান্ডের পড়ুয়ারা
১৯১৩ সালে নোবেল পেলেন রবীন্দ্রনাথ। বাংলা ভাষার প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এরপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে।

কৌশিক, কলকাতা: ১৮৬১ সাল। সিপাহী বিদ্রোহের আগুন তখনও নেভেনি। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ফুটছে বাংলা। ঠিক সে সময় বাংলা সাহিত্য জগতে দুটি ঘটনা ঘটে। মেঘনাদ বধ কাব্য রচনা করলেন মধুসূদন দত্ত। আর সে বছরই জন্ম নিলেন এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯১৩ সালে নোবেল পেলেন রবীন্দ্রনাথ। বাংলা ভাষার প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
এরপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে। নতুন শতাব্দীতে পা রেখেছে পৃথিবী। বাঙালিরও আন্তর্জাতিকীকরণ হয়েছে। পোশাকআসাক থেকে মুখের ভাষা, সবেতেই। আরও একটা জিনিস হয়েছে, সেটা হল বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকীকরণ। পৃথিবীর সবচেয়ে ‘মিষ্টি ভাষা’ হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেল মেট্রো স্টেশনের ফুটে উঠেছে বাংলা ভাষা। এটা আন্তর্জাতিকীকরণ নয় তো কি!
সমগ্র ইউরোপেই বাংলা ভাষার প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে। জার্মান থেকে পোল্যান্ডের মানুষ বাংলা ভাষা শেখার জন্য উদগ্রীব। অতিকথন নয়, এটাই বাস্তব। গ্রীষ্মকালে ইউরোপে দুই সপ্তাহ ধরে বাংলা ভাষা শিক্ষার ক্যাম্প হয়। নানা দেশ থেকে ছাত্রছাত্রীরা আসেন। শেখেন বাংলা ব্যকরণ, চেনেন রবীন্দ্রনাথ-বঙ্কিমচন্দ্রদের। আহা, আ মরি বাংলা ভাষা।
বাংলা ভাষা শেখানোর এই কাজে এগিয়ে এসেছে ইউরোপের তিনটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়। জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাগের চার্লস বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ইনস্টিটিউট। গত পাঁচ বছর ধরে যৌথ ভাবে বাংলা ভাষা শিক্ষার ক্যাম্প করছেন তাঁরা। করোনার সময় দুইবছর স্থগিত ছিল। গত বছর থেকে ফের শুরু হয়েছে।
প্রতি বছর আগস্ট মাসে ক্যাম্প হয়। ছাত্রছাত্রীদের বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন শিক্ষকরা। শেখানো হয় কথ্য বাংলা। দেখানো হয় বাংলা সিনেমা। শুধু তাই নয়, বাঙালি রান্নার সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় পড়ুয়াদের। এ বছর মোট ১৬ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ছিলেন জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, চেক প্রজাতন্ত্র, ক্রোয়েশিয়া, সুইজারল্যান্ড ও পোল্যান্ড থেকে আসা নাগরিকরা। বয়স মোটামুটি ১৫ থেকে ৭১ বছর।
‘জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না’ বলা মা-বাবারা যদি এই ক্যাম্পে যেতেন, কী হত বলুন তো!