পুতিনের হাঁটু কাঁপিয়ে দেওয়া প্রিগোজিন কে? রাঁধুনি থেকে কীভাবে হয়ে উঠলেন ওয়াগনার প্রধান

প্রিগোজিনের জীবন যেন বলিউডের সিনেমা

খাবারের ব্যবসায়ী থেকে পুতিনের ডানহাত। ধুমকেতুর মতোই উত্থান তাঁর। পতন, খসে পড়া তারার মতো। পুতিন তাঁকে ভাড়াটে সেনা নিয়ে তৈরি ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান নির্বাচন করেন। লড়াই করেন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে। কিন্তু মতিভ্রম। সেই পুতিনের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ ঘোষণা করে বসেন ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। যদিও শেষে বেলারুশের রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপে ঝামেলা মেটে। কিন্তু পুতিন ক্ষমা করেননি। প্রিগোজিনও আর পা রাখতে পারেননি রাশিয়ায়।

বিশ্বের কাছে ‘পুতিনের রাঁধুনি’ হিসেবেই পরিচিত প্রিগোজিন। পুতিনের মতো তাঁরও জন্ম সেন্ট পিটার্সবার্গে। সোভিয়েত জমানায় এই শহরের নাম ছিল লেনিনগ্রাদ। শৈশব খুব একটা সুখের ছিল না। ছোটবেলায় রাস্তায় চুরি, ছিনতাই করতেন। ধরা পড়ে জেলও খাটেন ৯ বছর। জেল থেকে বেরিয়ে হটডগ বিক্রি শুরু করেন। ঠেলাগাড়ি নিয়ে ঘুরতেন রাস্তায় রাস্তায়। পরবর্তীকালে কিছু টাকা জমিয়ে রেস্তোরাঁ খোলেন। প্রিগোজিনের রেস্তোরাঁর খাবারের স্বাদে মজেছিলেন স্বয়ং পুতিন। সেখান থেকেই বন্ধুত্ব।

Yevgeny Prigozhin,Vladimir Putin,Russia

২০১০ সাল নাগাদ মোটা টাকার সরকারি ঋণ পান প্রিগোজিন। বলাইবাহুল্য এই ঋণ পেতে সাহায্য করেছিলেন পুতিন। সেই টাকায় কারখানা খোলেন প্রিগোজিন। সেখান থেকে বিভিন্ন সরকারি স্কুলে লাঞ্চ সরবরাহ করা হত। শোনা যায়, সেই কারখানাকে সরকারি বরাত পাইয়ে দিতেও নাকি সাহায্য করেছিলেন পুতিন। শুধুমাত্র মস্কোতেই কয়েক লাখ ডলারের বরাত হস্তগত হয়েছিল প্রিগোজিনের সংস্থার।

এখানেই শেষ নয়, ক্রেমলিনে পুতিনের খাবারদাবারের দায়িত্বও ছিল প্রিগোজিনের সংস্থার উপর। সেই থেকেই বিশ্ব তাঁকে ‘পুতিনের রাঁধুনি’ হিসেবে চিনতে শুরু করে। এরপর রাশিয়া সেনার খাবার সরবরাহের দায়িত্বও বর্তায় প্রিগোজিনের উপর। অনেকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ বলেন, এই বরাত পাইয়ে দিতে পুতিন নাকি আইন ভেঙেছিলেন। যাইহোক প্রিগোজিনের সঙ্গে পুতিনের যে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তাতে সন্দেহ নেই।

২০১৪ সাল থেকে প্রিগোজিনের কপাল আরও খুলে যায়। দুহাতে টাকা আসতে শুরু করে। এই সময় ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমনের ভার পড়ে প্রিগোজিনের কাঁধে। ভাড়াটে সেনাদের নিয়ে একটি বাহিনী তৈরি করেন তিনি। নাম দেন ‘ওয়াগনার’। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, সুদান, লিবিয়া, মোজাম্বিক, ইউক্রেন ও সিরিয়াতেও রাশিয়ার হয়ে লড়াই করেছে এই বাহিনী। বেশ কয়েক বছরেই ‘কুখ্যাতি’ অর্জন করেন প্রিগোজিন। ২০২২-২৩-এ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ওয়াগনার বাহিনীকে যুদ্ধে পাঠান পুতিন।

ইউক্রেনে সাফল্যের সঙ্গেই যুদ্ধ করে ওয়াগনার বাহিনী। কিন্তু ওই যে বলে মতিভ্রম। তাই হয়েছিল প্রিগোজিনের। যুদ্ধের মাঝপথে খোদ পুতিনের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ ঘোষণা করে বসেন তিনি। প্রিগোজিনের অভিযোগ, তাঁর সাফল্য রুশ বাহিনী চুরি করছে। শুধু তাই নয়। প্রতিরক্ষা দফতরের উদ্দেশ্যেও তোপ দাগেন প্রিগোজিন। খোলাখুলি বলেন, ইউক্রেনকে হারাতে এতদিন সময় লাগার কথা নয়, কী করছে সেনা কর্তারা। শেষমেশ ক্রেমলিনের দখল নিতে বাহিনী নিয়ে রওনা হন প্রিগোজিন। সেই বিদ্রোহ অবশ্য কড়া হাতে দমন করেছেন পুতিন। তবে প্রিগোজিন এখন কোথায়, তার হদিশ কেউ জানে না।




Leave a Reply

Back to top button