টাকার অভাবে ছাড়তে হয়েছে স্কুল! তরমুজ বিক্রি করে কোনমতে দিন কাটাচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র

অনীশ দে, কলকাতা: কোভিড আবহের পর যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির দরজা যখন আবার ছাত্রছাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় তখন সমাজের একটি কঠোর বাস্তব উঠে আসে আমাদের সামনে। আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা ছাত্রছাত্রীদের একাংশ স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয়। তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত হয় আবার অনেক ছাত্রীদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় (School dropouts in west bengal)। এই ক্ষেত্রে স্কুলছুট ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনার জন্য রাজ্য সরকার নানান ভাবে প্রচার চালালেও তা বিফলে যায় (School dropouts in west bengal)।

এহেন পরিস্থিতিতে জলপাইগুড়িতে দেখা মিলল এমন এক বালকের যাকে শিক্ষার পথ ছেড়ে বেছে নিয়ে হয় উপার্জনের পথ। তরমুজ বিক্রি করে পয়সা উপার্জন করাই তার অন্যতম উদ্দেশ্য এখন।  পড়াশুনা করতে ভালো লাগলেও স্কুলে যাওয়া আর সম্ভব না। বাংলা ও ভূগোল ভালোবাসলেও এখন আর পড়তে পারে না (School dropouts in west bengal)। কিন্তু এর পিছনে কারন কী? এর উত্তরে বছর বারোর সেই বালক জানায়, “আসলে অনেকদিন তো স্কুল বন্ধ তাই আর যাওয়া হয়নি। এখন আর ইচ্ছেও নেই”।

এর পাশাপাশি সেই বালক আরও জানায় যে তার বাবাও তরমুজ বিক্রি করেন। ২ জন মিলে বিক্রি করায় কোনমতে সংসার চলে যায়। অন্যদিকে ছেলেটির মা একপ্রকার মেনে নেন যে দারিদ্রতার কারণেই ছেলেকে পড়াতে অক্ষম তারা। চোখের পাশে জমা জল নিয়ে বলেন, ” খুব ইচ্ছে ছিল ছেলেটাকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করব। কিন্তু, করোনা এসে আমাদের সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে গিয়েছে।”

school student

তিনি আরও জানান, “দু’বছর আগে লকডাউনের সময়ে কেরল থেকে কাজ ছেড়ে চলে আসেন আমার স্বামী। তারপর থেকেই আর কোনো কাজের সুযোগ পাননি। এমনকি, এইটুকু ছেলেটাকেও এখন কাজ করতে হচ্ছে।” এইরকম হাজারো ছেলে মেয়েকে আজ পড়াশুনা ছেড়ে বেছে নিতে হয়েছে অন্য জীবন। খাস কলকাতা শহরের দ্বাদশ শ্রেণীর এক ছাত্র পড়াশুনা ছেড়ে এখন টোটো চালাতে বাধ্য হয়েছে।

আরও পড়ুন:‘বাপ বাপ হোতা হ্যায়’! মহেশ বাবুকে কটাক্ষ ‘মাচো ম্যান’ সুনীল শেট্টির

পড়াশুনার প্রতি তার আর তেমন টান নেই, এমনটিই বলেছেন সেই ছাত্র। সে জানায়, “স্কুলে যেতে এখন আর ইচ্ছে করে না। টোটো চালানোর পরে রাতে বাড়িতে বই নিয়ে পড়তে বসলেও মন দিতে পারিনা পড়ায়”। দীর্ঘ দুই বছরের ব্যবধানে মহামারী পাল্টে দিয়েছে সাধারন মানুষের জীবনের রোজনামচা। কিন্তু রাজ্যের বেশিরভাগ গরীব ঘরের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশুনা থেকে বিমুখ হলে সমাজের উন্নতি অনেকটাই খর্ব হবে, এমনটাই মনে করেন জলপাইগুড়ি জেলা জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধর্মচাঁদ বারুই। তিনি জানান, “পড়াশোনার প্রতি পড়ুয়াদের আগ্রহ বাড়াতেই হবে। এ ক্ষেত্রে দুঃস্থ পড়ুয়াদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’’




Leave a Reply

Back to top button