মহালয়ার ভোরে ‘যা দেবী সর্বভূতেষু’ শুনে বড় হয়েছে বাঙালি, সেটা কার কন্ঠ জানেন?
সবার বুকের মধ্যে টুপটাপ শিউলি ঝরছে। মহালয়া। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের হাত ধরে শুরু বাঙালির দেবীপক্ষ।

আগের দিনই রেডিওয় ঝাড়পোঁছ হয়েছে। লাগানো হয়েছে নতুন ব্যাটারি। বছরের এই একটা দিনই তো রেডিও চলে! রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়েছে সবাই। ভোর হওয়ার আগে উঠতে হবে। ঘড়িতে অ্যালার্ম দেওয়া হয়েছে।
ঠিক ভোর ৪টের সময় নব ঘুরিয়ে রেডিও চালু করলেন জেঠ্যুমণি। বাড়িয়ে সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে। রেডিও-র ভিতর থেকে বেজে উঠল মেঘমন্দ্র গলা, ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে অলোক মঞ্জীর, ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা…’। সবার বুকের মধ্যে টুপটাপ শিউলি ঝরছে। মহালয়া। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের হাত ধরে শুরু হল বাঙালির দেবীপক্ষ।
মহালয়া আর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, একে অপরের সমার্থক। তাঁর চণ্ডীপাঠ দিয়েই বাঙালির দেবীপক্ষের শুরু। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র শুধু বাচিকশিল্পী নন, তিনি একাধারে বেতার সম্প্রচারক, গায়ক, নাট্যকার, অভিনেতা এমনকী নাট্য পরিচালকও। চণ্ডীপাঠকে গীতি আলেখ্যে রূপ দিয়েই তিনি বাঙালি হৃদয়ে অমরত্ব লাভ করেছেন। আজ, ৪ আগস্ট সেই মহামানবের জন্মদিন।
১৯০৫ সাল। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন আছড়ে পড়েছে বাংলায়। সেই উত্তাল সময়ে কলকাতার আহিরীটোলায় জন্ম নেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। বাবা রায় বাহাদুর কালীকৃষ্ণ ভদ্র, তিনি আবার ভাষাতত্ত্ববিদও। বীরেনবাবুর সংস্কৃত শিক্ষা ঠাকুমা যোগমায়াদেবীর কাছে। মাত্র ৮ বছর বয়স থেকেই ছোট্ট ছেলেটি চণ্ডীপাঠ শুরু করেন। স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর। আবৃতিও করতেন ছোট থেকেই। তাঁর কন্ঠের তারিফ করতেন সকলেই।
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কর্মজীবন শুরু হয় রেলে। হ্যাঁ, রেডিওতে নয়। তবে রেডিওর প্রতি তাঁর দূর্দমনীয় আকর্ষণ ছিল। রেডিওয় বন্ধুবান্ধবও ছিল অনেক। অফিস ছুটির পর তিনি সোজা চলে যেতেন রেডিওর বন্ধুদের আড্ডায়। পরশুরামের লেখা ‘চিকিৎসা সংকট’কে নাট্যরূপ দিয়েছিলেন বীরেনবাবু। তা সম্প্রচার হয়েছিল আকাশবাণীতে। সেখান থেকেই তাঁর রেডিওতে পথচলা শুরু।
আগে সুর করে চণ্ডীপাঠ হত না। একদিন রেডিও-র আড্ডায় হঠাৎ সুর দিয়ে গলা খেলিয়ে চণ্ডীপাঠ করতে শুরু করেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। কিছুক্ষণ পর থেমেও যান। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। জহুরীর চোখে সেই কন্ঠ চিনে নিয়েছিলেন বাণীকুমার। রেকর্ডিং রুম থেকে ছুটে এসে তিনি বলেছিলেন, ‘আহা থামলে কেন, বেশ তো হচ্ছিল, থামলে কেন…’। ব্যস, তাঁর পরের ঘটনা ইতিহাস। আজ সেই কিংবদন্তীর ১১৮ তম জন্মবার্ষিকী।