ওপারে প্রান গিয়েছিল মাতৃভাষার দাবিতে, এপারে প্রান গেল শিক্ষার দাবীতে- আনিস আসলে কার

‘আনিস ভোটের সময় আমাদের অনেক সাহায্য করেছে’… সাংবাদিক বৈঠকে বসে অকাতরে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, আনিস ভোটের সময় তৃনমুল কংগ্রেসকে সাহায্য করেছে। হ্যাঁ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই আনিসের ( Anis Khan) কথাই বলছেন, যার মারা যাওয়া নিয়ে আবার নিন্দুকদের মতে খুন নিয়ে রাজ্য রাজনীতি সরগরম। আনিসের পিতার অবশ্য বক্তব্য, সর্বভারতীয় তৃনমূল কংগ্রেসের গুন্ডারাই পুলিশ সেজে এসে তার ছেলেকে ( Anis Khan) খুন করেছেন। তাহলে, কে খুন করল আনিসকে?
ভারতের সবচেয়ে প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ঢুকতে গেলেই ছাত্রছাত্রীদের স্বাগত জানায় মরা গরুর দুর্গন্ধ। ‘সংখ্যালঘু উন্নয়ন বোর্ড’ দ্বারা পরিচালিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফান্ড আসে না, শিক্ষকরা পড়ান না আর ছাত্রছাত্রীরা পায় না ভাল সুযোগ সুবিধা। ছাত্রছাত্রিদের আন্দোলনের আজ ১৮০ দিন। আনিসও ( Anis Khan) এঁদের মধ্যেই একজন ছিলেন। আনিসদের দাবী ছিল খুব সাধারণ, চাই ভাল শিক্ষ্যা, চাই ভাল চাকরি। কিন্তু তার ভাগে আসল মৃত্যু। আর সেই মৃত্যুর রঙে রঙ্গমঞ্চ সাজিয়ে বসল রাজনৈতিক দলগুলি। বিরোধিদের দাবী, ‘খুন করেছে তৃনমূলের গুন্ডারা’। আর আজ মমতা ব্যানার্জী বলেই দিলেন, ‘আনিস ভোটের সময় আমাদের অনেক সাহায্য করেছে’। তাহলে, আনিস ( Anis Khan) কার?
এদিকে আবার আজ ভাষা দিবস। আজকের দিনের একটি জাতী চিৎকার করে বলে উঠেছিল, ‘মানছি না, মানব না’। অতুলপ্রসাদদের সুরে গেয়ে উঠেছিল, “মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা! তোমার কোলে, তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালবাসা!” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে নেমে পড়েছিল। এরফলে পুলিশ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এমনকি তাদের লাঠিপেটা করে এবং মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের স্থান থেকে গুলি চালান।
২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে চারজন যুবক নিহত হন রফিক, সালাম, বরকত ও আব্দুল জব্বার। আর আজ ফের এক ছাত্র নিহত হয়েছে নাম, আনিস খান ( Anis Khan)। রফিক, সালাম, বরকত ও আব্দুলের মৃত্যুতে জেগে উঠেছিল হিন্দোল, পরিণতি ছিল বাংলাদেশ নামক স্বাধীন দেশ। আনিসের মৃত্যুতেও হিন্দোল জেগেছে কিন্তু সেই হিন্দোলের পরিণতি কেবলই রাজনীতি।
আসলে মারা যাবার পর, আনিস এখন সবার। ও হিন্দু নয়, মুসলিমও নয়, সিপিআইএমের নয়, সিপিআইএমেলের নয়, তৃনমূল কংগ্রেসেরও নয়, ডান-বাম কোন দিকেরই নয়; আনিস এখন স্রেফ ভোটমুখী রাজনীতির একটি হাতিয়ার। আনিস বেঁচে থাকাকালীন কে কতটা দাম দিয়েছেন তা জানা নেই কিন্তু মারা যাবার পর তার দাম একেবারে বাংলার শীর্ষ আকাশে। ‘ঘন্টাখানেকে’র ‘কথাবার্তা’য় এখন শুধু ‘আনিস’ই আনিস থাকলেও উত্তর পাওয়া গেল না, আসলে আনিশ কার?