অতিমারি কাটিয়ে ফের ফিরছে বইমেলার আসর, একনজরে কলকাতা বইমেলার নির্ঘন্ট
‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না’। সৈয়দ মুজতবা আলির এই বিখ্যাত উক্তিটিই তামাম বইপ্রেমীর মূলমন্ত্র। কাজেই বইকে ঘিরে গড়ে ওঠা বইমেলা যে বইপ্রেমীদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় উৎসব এ আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে চলতি সাল অর্থাৎ২০২১ এ করোনা অতিমারির জন্য কলকাতা বইমেলা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। যথারীতি বইপ্রেমীরা তাদের প্রিয় বইমেলা উৎসবে সামিল না হতে পেরে যথেষ্ট হতাশ ছিলেন।
তবে গত দুইবছরের সমস্ত হতাশা কাটিয়ে বইপ্রেমীদের কাছে খুশির বার্তা এলো রাজ্য সরকারের তরফে। আগামী ৩১শে জানুয়ারি থেকে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা, এমনটাই ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে দশদিনের জায়গায় বইমেলার সময়সীমা কিছু কমবে কিনা এমনটা এখনই নিশ্চিতভাবে জানা যাচ্ছে না। “বইমেলার সময়সীমা এখনো আলোচনার স্তরে আছে, পাশাপাশি মহামারী পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেও নির্দিষ্ট কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হবে” এমনটাই বুকসেলার্স গিল্ডের তরফে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়।
২০২০র পর আবারও সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কেই বসতে চলেছে ২০২২ কলকাতা বইমেলার আসর। ২০২১ এ কলকাতা বইমেলার প্রস্তাবিত থিম কান্ট্রি ছিল বাংলাদেশ। অতিমারির কারণে ২০২১ এর বইমেলা বাতিল হয়ে গেলেও থিম কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশকেই রাখা হচ্ছে ২০২২ এর আসন্ন বইমেলার থিম কান্ট্রি হিসেবে। যদিও ২০২১ এ জানুয়ারির বদলে জুলাই মাসে বইমেলা আয়োজন করার পরিকল্পনা ছিল গিল্ড এবং সরকারের তরফে, কিন্তু অতিবৃষ্টি এবং কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি।
জুলাইয়ের পর কয়েক মাস একাধিক জেলায় ছোটখাটো বইমেলা বা বড় প্রকাশকদের তরফে দুই তিন দিন ব্যাপী বই উৎসবের আয়োজন করা হলেও ২০২২ এর আন্তর্জাতিক বইমেলা হবে কিনা এই নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যাচ্ছিলো। তবে বইমেলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে ছোট থেকে বড় সকল প্রকাশকই। গত দেড় বছরে বইয়ের ব্যবসায় যথেষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে প্রকাশনা সংস্থাগুলি। স্বাভাবিক ভাবেই পাঠক, লেখক প্রকাশক সকলেই অবসাদের শিকার হয়ে পড়ছিলেন। সেই কারণে আন্তর্জাতিক বইমেলার ঘোষণা খুবই প্রয়োজনীয় ছিল এমনটাই মনে করেন ধানসিঁড়ি প্রকাশনার সম্পাদক শুভ বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে বইমেলার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আরো একটা প্রশ্ন উঠে আসছে। এমনিতে পয়লা বৈশাখ বা পুজোর আগে নতুন পত্রিকা বা বই প্রকাশের ব্যস্ততা থাকলেও বইমেলা প্রকাশক থেকে লেখকদের জন্য মূল আকর্ষণ। সেই কারণে বইমেলার প্রায় ছয়মাস আগে থেকেই ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় লেখক থেকে প্রকাশক মহলে। তবে এবছর সময় খুবই কম। হাতে মাত্র তিনমাস। এর মধ্যে কি আদৌ দ্রুততার সঙ্গে সমস্তটা সামাল দিতে পারবেন প্রকাশকরা?
যদিও এ প্রশ্নের উত্তরে যথেষ্ট আশাবাদী প্রকাশকরাই। তাদের কথায় অনেক লেখকই তাদের আসন্ন বইয়ের নামকরণ থেকে প্রচ্ছদের কাজ শুরু করে দিয়েছেন আগে থেকেই। পাশাপাশি করোনা বিধি মেনেই দ্রুততার সঙ্গে বইমেলার প্রস্তুতি নিতে হবে এবং প্রকাশনার মডেলেও কিছু পরিবর্তন আসবে এমনটাই প্রকাশকদের মত। সব মিলিয়ে আসন্ন বইমেলার ঘোষণা হতে না হতেই চাঙ্গা পাঠক থেকে প্রকাশকমহল