বিধানচন্দ্র রায়ের পথেই হেঁটেছিলেন বুদ্ধদেব, সদিচ্ছাও ছিল ষোল আনা, কিন্তু..

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি সফল নাকি ব্যর্থ, সেটা ভবিষ্যতই ঠিক করবে

কৌশিক, হুগলীঃ গান্ধীজি যেমন জাতির জনক। বিধানচন্দ্র রায় তেমনই পশ্চিমবঙ্গের রূপকার। অতি বড় বাঙালিও এই নিয়ে দ্বিরুক্তি করবে না।

বিধানবাবু পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। নাড়ি টিপতে হত না। দেখেই নাকি বলে দিতে পারতেন রোগীর শরীরে কোন রোগ বাসা বেঁধেছে। তাঁকে নিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র গল্প এবং মিথ। স্বাধীনতার আগে বাঙালির শিক্ষা এবং তেজকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সঠিক দিশা দেখিয়েছিলেন তিনি। তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন বাংলাকে। কল্যাণী থেকে হিন্দ মোটর, দিঘা – একের পর এক কার্যকরী পদক্ষেপ তাঁরই নেওয়া।

Buddhadeb Bhattacharya,Bidhanchandra Roy,West Bengal
বাম-নিন্দুকেরা বলেন, বিধান রায়ের কাজ এবং স্বপ্নের সলিল সমাধি ঘটে সিপিএম জমানায়। সিটুর একের পর এক জঙ্গি আন্দোলনে শিল্পপতিরা বাংলা থেকে পাততাড়ি গোটাতে শুরু করেন। গঙ্গা তীরবর্তী জুট মিলগুলোয় লালবাতি জ্বলে। উঠে যায় বার্ন স্ট্যান্ডার্ড, ল্যাডলো, মার্টিনের মতো বড় কোম্পানি। ভারতের শেফিল্ড আখ্যা পাওয়া হাওড়া তখন শুধুই অতীতের ছায়ামাত্র। গ্রামে গঞ্জের অবস্থা আরও করুণ। লালগড়, জঙ্গলমহলে শুধুই দারিদ্র।

২০০৬ সালে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসে এই অবস্থাটাকেই পাল্টাতে চেয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। জ্যোতি বসুর দেখানো পথে নয়, বরং হেঁটেছেন বিধানচন্দ্র রায়ের পথে। তাঁর মতোই বুদ্ধদেবও অটো মোবাইল সেক্টরে বিপ্লব আনার চেষ্টা করেছিলেন। সিঙ্গুরে টাটাদের জমি দিয়ে আরও একটা হিন্দ মোটর তৈরি করতে চেয়েছিলেন। ন্যানোর হাত ধরে স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলাকে অটো হাব হিসেবে গড়ে তোলার। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

বাংলায় শিল্প টানতে মরিয়া ছিলেন বুদ্ধদেব। দলের নীতি-আদর্শের বিরুদ্ধে গিয়ে ‘পুজি’-র দ্বারস্থ হতে তিনি দুবার ভাবেননি। সিঙ্গুরের ঘটনার আগে নন্দীগ্রামে শিল্প হাব গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন বুদ্ধদেব। তৈরি হল স্পেসাল ইকনোমিক জোন। সালেম গোষ্ঠীর সঙ্গে কথা হল। জায়গাও ঠিক হয়ে গেল। সরকার জানাল, জমি অধিগ্রহণ করে কেমিক্যাল হাব তৈরি করা হবে। কিন্তু বিধি বাম। রুখে দাঁড়ালেন গ্রামবাসীরা। স্লোগান উঠল – রক্ত দেব, প্রাণ দেব, নন্দীগ্রাম দেব না।

তারপরের ইতিহাস, রক্তে লেখা। একযোগে আন্দোলন দমনে নামল সিপিএমের ঠ্যাঙারে বাহিনী এবং প্রশাসন। সিঙ্গুরের ইতিহাসও তাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনশন থেকে বিরোধী শক্তি যে ইন্ধন পেয়েছিল তা মেটানোর কোনও চেষ্টা করেনি বুদ্ধদেবের সরকার। বরং পেশি শক্তির আস্ফালনে সদিচ্ছার ভরাডুবি হয়। বুদ্ধদেব চেয়েছিলেন, বিধান রায়ের মতো বাংলার রূপকার হতে। তাঁর সদিচ্ছারও কোনও খামতি ছিলেন না। কিন্তু দিনের শেষে তেমনটা ঘটেনি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি সফল নাকি ব্যর্থ, তা অবশ্য ভবিষ্যতই ঠিক করবে।




Leave a Reply

Back to top button