Ham Radio : রেডিও চেনাল ঘর, বেতারের হাত ধরেই পুরনো ঠিকানায় ৫ মানসিক ভারসাম্যহীন

প্রত্যুষা সরকার, কলকাতা: কলকাতা (Kolkata) শহরে এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের নিজের কোনো বাসস্থান নেই। রাস্তার ধারের ফুটপাথ অথবা গাছের তলা এটাই তাদের বাসস্থান। এরকমই পাঁচ জন অসহায় মানুষ পড়ে ছিলেন কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায়। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বাড়ি থেকে হঠাৎ নিরুদেশ জান তারা। বেশ কয়েক বছর রাস্তায় কাটানোর পর অবশেষে বাড়ি ফিরলেন তারা। ‘হ্যাম রেডিও’ ( Ham Radio ) নামক প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘরে ফিরলেন ওই পাঁচ জন। রাস্তা থেকে মানুষগুলির স্থান হয়েছিল পার্ক সার্কাসের চার নম্বর সেতুর কাছে মিশনারিজ় অব চ্যারিটির ‘প্রেমদান’ ক্যাম্পাসে (Missionaries of Charity’s ‘Premdan’ on campus)। সেখানেই বেশ কয়েক বছর ধরে ছিল ওই পাঁচ মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির ঠিকানা। অবশেষে খোঁজ মিলেছে তাঁদের পরিজনদের। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব’-এর সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস জানান, হ্যাম রেডিয়োর প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এক দিনে পাঁচ জনের পরিবারের খোঁজ মেলে। এমন সাফল্য এই প্রথম।
কী ভাবে হয়েছিলেন নিখোঁজ ?
মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন ওই পাঁচ জন। তার পরে কী ভাবে তাঁরা কলকাতায় পৌঁছন, কেউ জানে না। মিশনারিজ় অব চ্যারিটির ‘প্রেমদান’ ক্যাম্পাসের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মী দীপঙ্কর ভট্টাচার্য দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন ক্যাম্পাসের এই রকম মানুষদের। এক সংবাদ মাধ্যমকে দীপঙ্করবাবু জানান, ওই পাঁচ জনের মধ্যে তিন জনকে রাস্তা থেকে তুলে এনেছিলেন মিশনারিজ় অব চ্যারিটির সিস্টারেরা। বাকি দু’জনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে পুলিশ।
প্রিয়জনদের ফিরে পেয়ে খুশির হাওয়া স্বজনহারাদের পরিবারে
পাঁচ জনের মধ্যে দু’জন শেখ আশরাব (৩৫) ও আজিজুর (২২)। আশরাবের বাড়ি হাওড়ার সাঁকরাইলে এবং আজিজুরের বাড়ি মালদহের চাঁচলে। বাকি তিন জন ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে সুভাষ সেনের (৬৫) বাড়ি অসমের শিলচরে, স্বরূপকান্তি সিংহ (৪৩) অসমের করিমগঞ্জে ও মহেন্দ্রকুমার রবিদাসের (২১) ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের বাসিন্দা। ইতিমধ্যেই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন আশরাব, আজিজুর ও মহেন্দ্র। সুভাষ এবং স্বরূপকান্তিও আপনজনের কাছে ফেরার অপেক্ষায়।
আরও পড়ুন- প্রতীক্ষার অবসান, শীঘ্রই মুক্তি পাচ্ছে রোমহর্ষক সিরিজ ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যানের’ তৃতীয় পর্ব
কীভাবে হয়েছিল মানসিক চিকিৎসা
মিশনারিজ় অব চ্যারিটির ‘প্রেমদান’ ক্যাম্পাসে থাকা অবস্থাই মানসিক চিকিৎসা হতে থাকে তাদের। চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠায় তাঁদের বাড়ি ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় (Ham Radio )। দীপঙ্করবাবু বলেন, ওই পাঁচ জনকে বাড়ি ফেরানোর জন্য সম্প্রতি তিনি যোগাযোগ করেন হাওড়ার কদমতলায় অবস্থিত মিশনারিজ় অব চ্যারিটির ‘নবজীবন’ ক্যাম্পাসের ব্রাদার সাজন জোসেফের সঙ্গে। তাঁর কাছ থেকেই অম্বরীশবাবুর ফোন নম্বর পেয়ে যোগাযোগ করেন তিনি।
সবশেষে বাড়ি ফেরার পালা
গত বুধবার বাড়ির লোক এসে নিয়ে গিয়েছেন সাঁকরাইলের বাসিন্দা আশরাবকে। এক সংবাদ মাধ্যমে তাঁর কাকিমা সাবেরা বেগম বলেন, “২০১৯ সালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল আশরাব। গত মঙ্গলবার দুপুরে হ্যাম রেডিয়োর (Ham Radio) মাধ্যমে ভিডিয়ো কলে আমাদের সঙ্গে ওর কথা হয়। মাকে দেখে চিনতে পেরে কেঁদে ওঠে ও।’’ এরপর গত বৃহস্পতিবার দিদি-জামাইবাবুর সঙ্গে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন মহেন্দ্র। পরিবারের লোক সূত্রে খবর, পাঁচ-ছ’বছর ধরে নিখোঁজ ছিলেন মহেন্দ্র। কয়েক দিন আগে হ্যাম রেডিয়োর(Ham Radio) মাধ্যমে ভিডিয়ো কলে ওই যুবকের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। শনিবার আপনজনের সঙ্গে বাড়ি ফিরেছেন চাঁচলের আজিজুরও। তাঁর খুড়তুতো ভাই সানাউল্লা বলেন, “প্রায় দু’বছর ধরে আজিজুর নিখোঁজ ছিল। আমরা অনেক চেষ্টা করেও ওর সন্ধান পাইনি। এখন আজিজুরের খোঁজ পেয়ে আমরা খুবই খুশি।”
সুখবরের মধ্যেও অন্য সুর
এবার বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় শিলচরের প্রৌঢ় সুভাষবাবুও। ছেলে গুড্ডু সেন শীঘ্রই বাবাকে তিনি বাড়ি নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। এত ভালো সব খবরের মাঝে শোনা যাচ্ছে অন্য কথা। করিমগঞ্জের বাসিন্দা স্বরূপকান্তির ভাই স্বরাজ সিংহ জানিয়েছেন, “তিন-চার বছর হল মেজদা নিখোঁজ। মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় দাদা অশান্তি করত। আমাদের ওকে ফেরানোর ইচ্ছে নেই।”
আরও পড়ুন- Latest Bollywood Gossip : গুজবে কান দেবেন না , জানালেন বনি কাপুর