লড়াই করে জিতে নিয়েছেন নিজের অধিকার,তবু মনে পড়ে যায় সেই পুরনো ঘটনা
এবারের পুজো অনেক বেশি শান্তি দিচ্ছে তাকে। মনে এসেছে অনেকটাই বেশি জোর।

শিলিগুড়ি ও কলকাতা : এবারের পুজো অনেক বেশি শান্তি দিচ্ছে তাকে। মনে এসেছে অনেকটাই বেশি জোর। চারিদিকে যেনো অন্য বছরের তুলনায় আরও বেশি রঙিন লাগছে।
তিনি হলেন অনামিকা রায়। এখন তার যাতায়াতের দূরত্ব বেড়েছে যাওয়া আসা মিলিয়ে ৪০ কিলোমিটারে। শিলিগুড়ি থেকে পরই দিতে দিতে হয় কলকাতার উদ্দেশ্যে।সোম থেকে শনি জলপাইগুড়ি জেলার আমবাড়ি যেতে হয় তাঁকে। তিনি পেশায়আমবাড়ি হরিহর উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা। সকাল ১১টায় স্কুল বসে। তার অন্তত দেড় ঘণ্টা আগে তাঁকে বেরোতে হয় শিলিগুড়ির বাড়ি থেকে।
কোর্ট কাছারি আইন আদালতের পিছনে ছুটতে ছুটতে একসময় তাকে যুদ্ধ করে নিতে হয়েছিল নিজের জায়গা আদায় করার জন্য।আদালতের নির্দেশে সরকারি স্কুলে শিক্ষিকার চাকরি পাওয়ার পর এ বারই প্রথম পুজো অনামিকার। আইনি লড়াইয়ে তিনি যাঁর জায়গায় নিয়োগ পাওয়ার আর্জি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, তিনি আবার নিয়োগ পেয়েছিলেন অন্য এক জনের জায়গায়।
রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা। তাঁর নিয়োগ বাতিল করেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পরেশ-কন্যার জায়গায় চাকরি পেয়েছিলেন ববিতা সরকার। ববিতা কয়েক মাস স্কুলে পড়িয়েও ফেলেছিলেন। কিন্তু তার পরে আদালতে তথ্য দিয়ে অনামিকা দাবি করেন, ববিতা নন, আসলে স্কুলশিক্ষিকার ওই পদে নিয়োগ পাওয়ার কথা তাঁর। স্কুল সার্ভিস কমিশনের ‘বদান্যতায়’ তিনি তা থেকে বঞ্চিত।
তবে এরপর আদালত মামলা শুনে যেই অনামিকার চাকরি বাতিল করেছিলেন তাকেই আবারো নিয়োগ করলেন তার চাকরিতে। মামলায় খতিয়ে দেখার পর বিচারক জানতে পারলেন যে কমিশনই ভুলভ্রান্তি করে রেখেছে। সেখানে বিচার করে তিনিই ববিতার চাকরি বাতিল করে অনামিকাকে চাকরিতে নিয়োগ করার নির্দেশ দেন।
শিলিগুড়ির দুধ মোড়ের কাছের এক আবাসনে থাকেন অনামিকা।গত পুজোয় তিনি ছিলেন শহরের এক বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। যমজ সন্তানের মা অনামিকা। তাদের বয়স এখন দু’বছর চার মাস। ছেলে শুভাং। মেয়ে আনভি। তবে কাজের ব্যাস্ততায় এখন খুবই কম সময় দিয়ে পর্সজন তার দুই সন্তানকে। শাশুড়ি রয়েছেন বাড়িতে। স্বামী শুভজিৎ বিশ্বাস একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন।
তবে এবারের পুজো শান্তির হলেও কিছুতেই ভোলাতে পারছেননা কলকাতার রেড রোড মেয়ো রোডকে। কলকাতার রেড রোডকে। মেয়ো রোডকে। মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তি, গান্ধী মূর্তির পাদদেশে চাকরিপ্রার্থীরা বসে রয়েছেন দিন-রাত, রোদ-বৃষ্টি, পুজো-ইদ এক করে। রাস্তাতেই কেটে যাচ্ছে তাঁদের সপ্তাহ, মাস, বছর। অনামিকা বলছেন, ‘‘আমি চাই ওঁরাও আমার মতো যুদ্ধটা জিতুন। ওঁরাও ওঁদের হকের চাকরি পান। ওঁদের মতোই ছিল আমার গত বারের পুজো। আমি তাই বুঝি, কী যন্ত্রণা নিয়ে, কী বিষণ্ণতা বুকে চেপে ওঁরা পুজোর সময়ে ওখানে বসে রয়েছেন।’’ খানিক থেমে স্বগতোক্তির ঢংয়ে প্রশ্ন করেন, ‘‘ওঁদের পুজো আমার পুজোর মতো হবে? কবে হবে?’’তবে কি মায়ের মূর্তি পুজো শুধুই একটা মূর্তির পুজো? সেকি অনামিকার মনের কষ্টটা দেখতে পান শুনতে পান যে অনামিকা কি চায় ?