কানে আসে কিছু কান্না, আর্তনাদ! নিমতলা শ্মশান আজও হিম শ্রোত আনে শহরবাসীর শরীরে

দিনের আলোতেও শশ্মানের আশপাশ দিয়ে গেলে গা ছমছমে অনুভূতি আমাদের প্রত্যেকের হয়।অনেকেই বলেন শশ্মান শান্তির স্থান কিন্তু আমাদের মেনে নিতে অসুবিধা নেই যে কিছু না হলেও শশ্মানের বাতাসেই যেন মিশে থাকে হাহাকারের সুর আর অজানা ভয়ের হাতছানি।প্রিয়জনদের ছেড়ে আসার যন্ত্রনা আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসের মধ্যেই আত্মার অদৃশ্য উপস্থিতি যেন গ্রাস করে আমাদের শরীর-মন।

কলকাতার বাসিন্দারা নিমতলা মহা শশ্মানের নাম শোনেননি এমন কেউ নেই। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে রবীন্দ্রনাথ বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে এই শশ্মানে। কলকাতার বহু প্রাচীন শশ্মান গুলির মধ্যে এটি অন্যতম আর তাই এই শশ্মানের ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে নানা অলৌকিক অতিপ্রাকৃত ঘটনার। প্রতি অমাবস্যার রাতেই যেন জেগে ওঠে এই মহাশশ্মান!পাওয়া যায় এমন কিছু ভয়ংকর চিত্র যা শুনলে আপনার হাড়হিম হয়ে যেতে পারে।

nimtala (1)

১৮২৮ সালে আদি শশ্মান ঘাটটি তৈরি হয়েছিল পরে ১৮৭৫ সালে স্থানান্তরিত হয়ে বিডন স্ট্রিটের ওপর গড়ে ওঠে বর্তমানের নিমতলা মহা শশ্মান। শশ্মানের পাশাপাশি ঘরগুলিতে রয়েছে সেই প্রাচীন জীর্ণতার ছাপ যেখানে অন্তর্জলি যাত্রার জন্য মুমূর্ষু রোগীকে আনা হত এবং পরিবারের লোকেরা ঐ ঘরগুলিতে ঐ রোগীর গঙ্গাপ্রাপ্তির জন্য অপেক্ষা করত। দুর্ভিক্ষের সময় হতদরিদ্র লোকেরা মৃতদেহ সৎকার করতে না পেরে মুখে আগুন টুকু ছুঁইয়ে আধপোড়া দেহ ফেলে চলে যেত।তারপর শিয়াল,কুকুরে সেই মৃতদেহ টেনে নিয়ে যেত। প্রাচীন এই শশ্মান এমন বহু বীভৎস ঘটনার জ্বলন্ত চিহ্ন। সেই সব অতৃপ্ত আত্মাদের আর্তনাদ আজও সন্ধ্যে হলেই এই চত্বরের বাসিন্দারা টের পান।

এগুলোকে প্রাচীন লোক-কথা বলে উড়িয়ে দেন অনেকে।তবে আজও দিনের বেলা সারে সারে মৃতদেহের ভীড় লেগে থাকলেও, সন্ধ্যার পরে এই শশ্মানের ধারে কাছে একা কেউ যায় না। আর গেলেও দলবদ্ধ ভাবে যায়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর বহু মরদেহ আসে এখানে,তাই এই শশ্মানকে বলা হয় অশরীরীদের বিচরণ ক্ষেত্র। সন্ধ্যের পর এখানে যেসব অলৌকিক ভয়ার্ত অনুভূতি হয় তা আশেপাশের এলাকার প্রতিটি মানুষ স্বীকার করেন।শোনা যায়, বিশেষ করে অমাবস্যার রাতে অঘোরীরা এই শশ্মানে আসেন। পোড়া শবদেহের ওপর বসে তারা তন্ত্র সাধনা করেন। এমনকি মৃতদেহ থেকে তাজা রক্ত পান করেন তারা। রাতভোর চলে নানান অলৌকিক যাগযজ্ঞ। আর তার ফলেই জেগে ওঠে প্রেতাত্মারা। শশ্মান সংলগ্ন এলাকায় উপদ্রব চালায় এসব অশরীরী আত্মারা। কোনভাবে যদি এই দৃশ্য কারোর চোখে পরে তাঁর মানসিক স্থিরতাও হারিয়ে যেতে পারে। গাঁয়ে শিহরণ জাগানো এই অলৌকিক নিমতলা মহা শশ্মানকে তাই কলকাতার ভৌতিক জায়গাগুলির অন্যতম বলা যায়।




Leave a Reply

Back to top button