রোড গ্রাফিক্সে নস্টালজিয়া! কলকাতার ফুটপাতে চোখ মেললেই দেখা মিলবে বাংলার কিংবদন্তিদের

রিমা শিয়ালী,কলকাতা: বাংলার হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন ঐতিহ্যের মধ্যে একটি হল বায়োস্কোপ ( bioscope ) । ঊনবিংশ শতাব্দীর মানুষের আবেগ হল বায়োস্কোপ। তবে সেই কাঠের বাক্সে চোখ দিয়ে গানের ছন্দে কাহিনী দেখা এখন অতীত হয়ে গেছে। সকলেই এখন মাল্টিপ্লেক্স চায়। তবে সম্প্রতি কলকাতার ফুটপাতের ( Kolkata foorpath ) রেলিং জুড়েই মিলতে পারে বায়োস্কোপের অনুভূতি।কলকাতার রাস্তাতেই চলন্ত গাড়ির জানলা দিয়ে বাইরে চোখ রাখলেই এখন দেখতে পাওয়া যাবে ফুটে উঠেছে রঙিন ছায়াছবির দৃশ্য ( Road Graphics ) ও কিংবদন্তি সব চরিত্র। তবে সেখানে অবশ্য কোনো কাঠের বাক্সও থাকবে না আর ছোট গোল খোপের থেকে কাহিনী দেখার সময় সুরেলা কন্ঠে গান করার জন্য বায়োস্কোপ চালকও থাকবে না।
সম্প্রতি কলকাতার রাস্তায় ফুটপাত জুড়েই দেখা মিলছে বিভিন্ন ধরনের গল্প এবং বাংলার অসংখ্য মনীষীর জীবন কাহিনী।পূর্বে বায়োস্কোপের ( bioscope ) মধ্যে দিয়ে যেরকম দেখা যেত ঠিক সেরকম।নিউটাউনের ( New town ) যে ১৭ কিমি দীর্ঘ রাস্তা আছে, তার দু’পাশ দিয়েই ইস্পাতের রেলিংয়ে অনেক রঙের সমাহারে ফুটে উঠছে ফরাসি শিল্পকলার ‘ফেন্স আর্ট’।তবে এসব চিত্র ( Road Graphics ) দেখতে হলে কষ্ট করে কাউকেই হাঁটতে হবে না।এমনকি গাড়ি থেকে নামার প্রয়োজনও পড়বে না।
এসকল চিত্র ( Road Graphics ) দেখতে কেবল চলন্ত গাড়ি থেকে বাইরের দিকে চোখ রাখতে হবে। ব্যাস্! তাহলেই পরপর দেখতে পাওয়া যাবে দেশের বিভিন্ন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের লড়াই, আত্মত্যাগের কাহিনী, শহিদদের স্মৃতিকথা থেকে বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতি এমনকি বাংলার নবজাগরণের কাহিনীও।বলতে গেলে সমস্ত কিংবদন্তি চরিত্র যেমন গান্ধীজি, নেতাজি থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ,মধুসূদন নজরুল, রামমোহন, বিদ্যাসাগরের জীবন এবং কর্মের নানা মুহূর্ত দেখা যাবে ফুটপাতের রেলিংয়ে চওড়া ইস্পাতের পাত জুড়ে। শুধু তাই নয়, গুপী গাইন বাঘা বাইন, হীরক রাজার দেশে প্রভৃতি অন্যতম চলচ্চিত্রের স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়ের নানা বর্ণময় চরিত্রকে এখানে ধূসর রঙের উপর রঙিন অবয়বের মাধ্যমে দেখা যাবে।
আরও পড়ুন: শেষলগ্নে সৌরভের ‘দাদাগিরি’র নবম সিজন! মনখারাপ সৌরভ ফ্যানেদের
হিডকোর ম্যানেজিং ডিরেক্টর তথা এনকেডিএর চেয়ারম্যান দেবাশিষ সেন রোড গ্রাফিক্সের ( Road Graphics ) মত এরূপ অভিনব একটি পরিকল্পনার কথা প্রথম ভাবেন। তাঁর কথা অনুযায়ী গতানুগতিক রেলিং ছেড়ে অন্যপথে হেঁটে কোনোকিছু নতুনত্বের সন্ধানে এই ফেন্স আর্ট শুরু করা হয়। তবে একেবারে রেলিংয়ের সামনে দাঁড়ালেই যে এসব চিত্র দেখতে পাওয়া যাবে এই ধারণা ভুল।বরং নিউ টাউনের ( new town ) রাস্তার এই চিত্র ( Road Graphics ) দেখতে মানুষকে তির্যক পথে আসতে হবে। ৪৫ ডিগ্রি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেই এই শিল্পকলার আমেজ পাওয়া যাবে।
সল্টলেক থেকে বিশ্ববাংলা সরণি ধরে নিউটাউনে ( new town ) ঢুকতে যে সেন্ট্রাল ব্রিজ পড়ে সেটা পার হলেই বাঁদিক থেকে দেখতে মিলবে এই বিশেষ চিত্রকলা।এই চিত্রশৈলীর দায়িত্বে আছেন অয়ন রায় ও সৌম্যজিৎ দাস নামে দুই তরুণ আর্কিটেক্ট। ছয় ইঞ্চি দূরত্বে ৫০ মিমি চওড়া ও ২৫ মিমি মোটা পাত রেলিংয়ে বসানো হয়েছে। অয়নের কথা অনুযায়ী ১২টি পাতে বিশেষ ল্যাটেক্স ব্যবহার করে স্কেচ প্যাড সফটওয়ার দিয়ে এক একটি চিত্র ( Road Graphics ) ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। প্রথম দফায় এমন রেলিং গিয়ে শেষ হবে টাটা ক্যানসার হাসপাতালের কাছে। ইতিমধ্যে ১কিমি রেলিংয়ে নেতাজি, সত্যজিৎ রায় এবং লালমোহন গাঙ্গুলির ফেন্স আর্ট সম্পূর্ণ হয়েছে।এবং দুর্গাপুজোর আগেই সব মিলিয়ে প্রায় ১৭ কিমি দীর্ঘ রাস্তার দু’পাশের এই রোড গ্রাফিক্স ( Road Graphics ) সম্পূর্ণ হবে বলেই আশা করছেন দেবাশিষ সেন।
আরও পড়ুন: ‘কাঁচা বাদাম’ পাল্টেছে জীবন, ইস্মার্ট জোড়ির মঞ্চে বাদামকাকুর বিয়ে দিলেন সুপারস্টার জিৎ