Garfa- মৃত বাবার সঙ্গে বাস ছেলের, “রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া” এবার গরফায়

নেহা চক্রবর্তী, কলকাতা- ২১ শতক নাকি বিজ্ঞানের যুগ। কিন্তু এই উনবিংশ শতাব্দীতেও উঠে আসে কুসংস্কারের নানান রূপ। এরমধ্যেও আবার ভাগ, যে শহরের মানুষের মধ্যে কুসংস্কারের প্রভাবটা কম। কিন্তু যদি প্রশ্ন হয়, দক্ষিণ কলকাতার রবিনসন স্ট্রিট? ফিরে যেতে হবে ২০১৫ সালের ঘটনায়, রবিনসন স্ট্রিটের বুকে হওয়া হার হিম করা সময়ে। প্রতিটা সংবাদপত্রের হেডলাইনে তখন নরকঙ্কালের ছবির সাথে একটি ব্যক্তির মুখ, নাম পার্থ দে। অভিযোগ ছিল তার উপরে অনেকগুলিই, তার মধ্যে প্রথমত ছয় মাস ধরে মৃত দিদির সাথে থাকছিলেন তিনি, কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। পার্থর বাবা আত্মহত্যা করেছিলেন গায়ে আগুন লাগিয়ে। সেই অগ্নিদগ্ধ দেহও তিনি দিদির মৃতদেহের মতন ঘরে রেখে দিয়েছিলেন। শবদেহের পাশে রীতিমতো খাবার সাজিয়ে খেতে দিতেন প্রতিদিন। গন্ধ যাতে বাইরে না পৌঁছায় তার জন্য “এয়ার সীল” ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন প্রতি ঘরে। মামলা চলে বহুদিন।

২০১৫ সালের পর রকম কাণ্ড আরও বহু জায়গায় ঘটেছে যেমন ট্যাংরায় কেউ তার মায়ের মৃতদেহ আগলে ছিলেন বহুদিন, হাওড়ায় কেউবা তাঁর স্বামী ও বোনের মৃতদেহ আগলে বসে আছেন দিনের পর দিন । এসমস্ত ঘটনায় সংবাদপত্রের হেডলাইন হয়েছে “রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া”। এই ছায়াই আবার ফিরে এলো গরফায়। কেপি রায় রোডের বাসিন্দা কৌশিক তার বাবার মৃতদেহকে  তিনমাস ধরে আগলে রয়েছেন। ছেলের বিশ্বাস এভাবে আগলে রাখলে বাবা একদিন বেচে উঠবেন। গরফার বহু দিন যাবত বসবাস সংগ্রাম দে ওরফে কৌশিকের বাবার। সল্টলেকের একটি রিসার্চ সেন্টারে কর্মরত সংগ্রামবাবু,  তাঁর স্ত্রী অরুণা দে ও ছেলে কৌশিককে নিয়ে থাকতেন কেপি রায় রোডের বাড়িতে। অরুণা দেবী হাঁটতে সক্ষম নন।

আরও পড়ুন- হিন্দু নির্যাতন ক্রমেই বাড়ছে পাকিস্তানে, গুরুপুরবে যৌন নিগ্রহের পর হত্যা শিশুকে

অপরদিকে কৌশিক মানসিক ভারসাম্যহীন। এরূপ অবস্থায় সংগ্রামবাবুর মারা যাওয়া একটা জটিল রহস্যের সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেশী সূত্রে খবর , অনেকদিন ধরেই সংগ্রামবাবুর কোনও খোঁজ নেই  তার কথা জিজ্ঞেস করলেই সেটা এড়িয়ে চলে যেত কৌশিক। সন্দেহের দানা বাঁধতে শুরু করেছিল প্রতিবেশীদের মনে ,অবশেষে তারা গরফা থানার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ তদন্ত পৌঁছে হতভম্ব হয়ে পড়ে । তাঁরা দেখেন একই বিছানায় শুয়ে আছে দেহের মাংস গলে  প্রায় কঙ্কালে পরিণত হওয়া সংগ্রাম দে ,পাশে শুয়ে আছেন তাঁর স্ত্রী আর খাটের এককোণে বসে আছেন কৌশিক।

Son was living with dead body in Garfa

ইতিমধ্যেই কৌশিককে আটক করেছে পুলিশ , চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। আপাতত খবর পাওয়া গেছে তিনমাস ধরে বাবাকে সে আগলে ছিল কারণ তাঁর  বিশ্বাস এভাবে বাবা জীবিত হয়ে উঠবে আবার। আপাতত অরুণা দেবী ওরফে কৌশিকের মা কেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ । মৃত্যুর কারণ কি খুন নাকি অন্যকিছু তদন্ত চলছে তার এখনও কিছুই স্পষ্ট নয় । সংগ্রাম বাবুর দেহ আপাতত ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে । অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার মানুষকে কতটা ভুল পথে চালিত করছে তার প্রমাণ থেকে গেলো আবারও।




Back to top button