আজ ২২শে শ্রাবণ, মৃত্যুতেই মৃত্যুঞ্জয়ী হয়েছেন রবি, ‘যাবে যদি যাও, অশ্রু মুছে যাও’
মেঘলা আকাশ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ঝাপসা হয়ে আছে চারদিক। এই বর্ষা যেন শুধু প্রকৃতির একার নয়, মন-প্রকৃতিকেও আচ্ছন্ন করে রেখেছে সে।

কৌশিক, কলকাতা: সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ঝাপসা হয়ে আছে চারদিক। এই বর্ষা যেন শুধু প্রকৃতির একার নয়, মন-প্রকৃতিকেও আচ্ছন্ন করে রেখেছে সে। আজ ২২শে শ্রাবণ। ১৯৪১ সালের এই দিনেই ইহলোক ত্যাগ করেন বাঙালির প্রাণের ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ। বাঙালির আত্মার আত্মীয়। এই বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণের ৮২ তম বার্ষিকী।
শোক আর সুখ। দুটি ভিন্ন অনুভূতি। কিন্তু এই দুটিকে একযোগে গাঁথার কারিগর রবীন্দ্রনাথ। মৃত্যুর শোক তাঁকে ছুঁয়ে গেছে বারবার। অল্প বয়সে মা’কে হারিয়েছেন। এরপর নতুন বৌঠান কাদম্বরী দেবী, তাঁর ভরসার জায়গা। লিখলেন: ‘… সেই অন্ধকারকে অতিক্রম করিবার পথ অন্ধকারের মধ্যে যখন দেখা যায় না তখন তাহার মতো দুঃখ আর কী আছে!’
স্ত্রী মৃণালিনী, বাবা দেবেন্দ্রনাথের মৃত্যুও দেখেছেন। আন্দেজ জাহাজে বসে লিখেছেন, ‘…তোমার আঁখির আলো তোমার পরশ নাহি আর,/ কিন্তু কী পরশমণি রেখে গেছ অন্তরে আমার—/ …সঙ্গীহীন এ জীবন শূন্যঘরে হয়েছে শ্রীহীন,/ সব মানি— সবচেয়ে মানি, তুমি ছিলে একদিন’।
কন্যা রেণুকা ও বেলা এবং পুত্র শমীর মৃত্যুও সহ্য করতে হয়েছে। শোকের আগুনে পুড়ে নিজেকে লোহার মতোই দৃঢ় করেছেন। ঝলসে উঠেছে তাঁর কলম, ‘যাবে যদি যাও, অশ্রু মুছে যাও’। উপনিষদের ভাবানুবাদ করতে বসে যেন মৃত্যুরই প্রতিধবণি শুনেছেন, তাঁর কলমে প্রাণ পেয়েছে শ্লোক, ‘শোনো বিশ্বজন, শোনো অমৃতের পুত্র যত দেবগণ/ দিব্যধামবাসী। আমি জেনেছি তাঁহারে মহান্ত পুরুষ যিনি/ আঁধারের পারে জ্যোতির্ময়।/ তাঁরে জেনে তাঁর পানে চাহি/ মৃত্যুরে লঙ্ঘিতে পার, অন্য পথ নাহি।’
রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুকে ‘সন্ততি’ বলে সম্বোধন করেছেন। কখনও বা ডেকেছেন ‘বন্ধু’ বলে। ভানুসিংহের পদাবলিতে অনায়াস সাবলীলতায় লিখেছেন, ‘মরণ রে তুহুঁ মম শ্যামসমান’। আসলে মৃত্যু তাঁর কাছে এক নতুন আলোক সঞ্চার, ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে/ তবু শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে/ তবু প্রাণ নিত্যধারা, হাসে চন্দ্র সূর্য তারা/ বসন্ত নিকুঞ্জে আসে বিচিত্র রাগে’।