Kolkata Tram: আধুনিকতার চাপে ট্রাম আজ হারিয়ে যাওয়া ‘হেরিটেজ’, কেমন ছিল এই ‘ট্রিং ট্রিং’ স্বপ্নের যাত্রাপথ?

“ট্রিং ট্রিং” আজও হয় তো শহরের বুক দিয়ে হেঁটে যেতে গিয়ে এই শব্দ কানে বাজলেই মনটা ফিরে যাবে সেই পুরনো দিনে। বাবার হাত ধরে কলকাতা আসা, পায়ে হেঁটে প্রদক্ষিণ, পয়সা বাঁচাতে ট্রামে ঘোরা। সে যেন এক কাল ছিল। তবে এখন দুনিয়া অনেক বদলে গিয়েছে। কিছু মাস আগে শিয়ালদহ মেট্রো নিয়ে ধুমধাম করে গোটা শহরে উৎসবের মরশুম। এই শিয়ালদহ থেকেই এক সময় চালু হয়েছিল ট্রাম ব্যবস্থা। মেট্রোর আগমন মানুষকে অন্তর থেকে যতটা উৎসাহিত করেছে, কলকাতা প্রথম ট্রাম ঠিক ততটাই আনন্দ দিয়েছিল শহরবাসীকে।
শিয়ালদহ মেট্রো তৈরি নিয়ে মানুষের মধ্যে যে হইচই তৈরি হয়েছিল এই একই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল প্রায় দেড়শো বছর আগেও। সাল ১৮৭৩, তখনও শীতের মরশুম। ফেব্রুয়ারি মাস। ঘোড়ায় টানা ট্রামের মধ্যে দিয়ে শহরে বুকে প্রথম যাত্রা শুরু। মানুষের মনে একটা প্রবল বেগ তৈরি করে শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট মোট ৩.৯ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে শুরু হয়েছিল যাত্রা।
উল্লেখ্য, তখন শহরে দ্রুত গতির কোনও গণপরিবহন ছিল না। ঠেলা রিকশা, ঘোড়ার গাড়ি এই ছিল গণপরিবহনের উপায়। তবে পরবর্তীকালে সময়ের হাত ধরে কয়েক বছরেই বদলে যায় ট্রামলাইনের নকশা। শিয়ালদহ থেকে প্রথমে বউবাজার তারপর ডালহৌসি হয়ে আর্মেনিয়ান ঘাট। এই ছিল ট্রামের যাত্রাপথ। তখনও শহরে বিদ্যুৎ আসেনি, ফলত ঘোড়ায় টানা ট্রামের চলাচলই বেশি ছিল।
এরপর ১৯০২ সালে শহরে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাম চালু হয়। ধর্মতলা থেকে শুরু করে খিদিরপুর পর্যন্ত লাইন পাতা হয়। এরপর সময় যত এগিয়েছে, তার সঙ্গে বেড়েছে ট্রাম লাইনের সংখ্যা। মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে এই ট্রাম। দিন যায়, সময় পেরিয়ে যায়, ধীরে ধীরে সমাজে উঁকি মারতে শুরু করে আধুনিকতা। সেই নতুনের ছোঁয়ায় একেবারে বদলে যায় শহর কলকাতার মানুষের জীবন। বন্ধ হতে শুরু করে কলকাতা ট্রাম ব্যবস্থা। এক গহিন অন্ধকারে এক প্রকার ভাবে যেন হারিয়ে যায় কলকাতার এই ঐতিহ্য। অবশ্যই পুরোপুরি ভাবে শেষ হয়ে যায়নি। বর্তমানে আবার নতুন করে পথচলা শুরু করেছে এই ট্রাম পরিষেবা। এক নতুন স্বপ্নকে সঙ্গী করে শহর জুড়ে চালু হয়েছে একাধিক ট্রাম প্রকল্প। নতুন স্বপ্ন নিয়ে সেজে ওঠে তিলোত্তমার সেই ‘ট্রিং ট্রিং’ স্বপ্নেরা।