26/11 – প্রাণ বাজি রেখে লড়েছিলেন মুম্বাই হামলায়, ১৩ বছর পরে আজও হিরো মেজর উন্নীকৃষ্ণন
রাখী পোদ্দার, কলকাতা : বলিদানই হল এদের পরম ধর্ম। আর দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করাই হল এদের একমাত্র কাজ। প্রতি পদক্ষেপে এদের দিতে হয় কঠিন পরীক্ষা। পাকিস্তানি লস্কর-ই-তৈয়বা সন্ত্রাসীদের (Pakistani Lashkar-e-Taiba terrorists) ২৬/১১ মুম্বাই হামলার (Mumbai Attack) পর আজ তেরো বছর পেরিয়ে গেছে। সহিংসতার তিক্ত স্মৃতির পাশাপাশি, ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মীদের সাহসিকতা, বিশেষ করে প্রয়াত এনএসজি কমান্ডো মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণানের ( Sandip Unnikrishnan) নাম ভারতীয়দের হৃদয়ে চিরকালের জন্য খোদাই হয়ে গিয়েছে। আজও ভারতীয়দের মনে রয়ে গিয়েছে তাঁর অভূতপূর্ব সাহসিকতা ও তাঁর বলিদানের কথা।
৩১ বছর বয়সী সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণান ২৮ শে নভেম্বর ২০০৮ সালে দেশের জন্য সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর এতো বছর পরও বেঙ্গালুরু ( Bengaluru) এবং কর্ণাটকে (karnataka) তাঁকে একজন বীর নায়কের ভূমিকায় পুজো করা হয়। বেঙ্গালুরুর বেশ কয়েকটি বড়ো অটো স্ট্যান্ড, অনেক জংশন, এবং বেশ কয়েকটি বাস ডিপোতে অন্যান্য জাতীয় বীরদের সাথে গর্বের সহিত তাঁরও ছবি কাটআউট, পোস্টার এবং ব্যানারগুলিতে প্রদর্শন করা হয়। এমনকি বেঙ্গালুরুতে তার নামে একটি রাস্তার নামকরণও করা হয়েছে।
২৮ শে নভেম্বর যেদিন তিনি দেশের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছিলেন সেদিনকেই স্বরণে রেখে বেঙ্গালুরুর কান্নামঙ্গলা সেনা ঘাঁটিতে সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণানের আবক্ষ মূর্তি( Bust) উদ্বোধন করা হবে। আর এই ইভেন্টের জন্য গর্বিত উন্নিকৃষ্ণানের পরিবার অপেক্ষায় দিন গুনছেন। তাঁর বাবা, কে. উন্নীকৃষ্ণান, একজন অবসরপ্রাপ্ত ইসরোর (ISRO) অফিসার। তিনি বলেন, আমি এই অনুষ্ঠানের জন্য অপেক্ষা করছি কারণ এটি সেনা কর্মীদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে৷ যেখানে সন্দীপ উন্নীকৃষ্ণানও একসময় যুক্ত ছিলেন৷ এই অনুষ্ঠানে জওয়ান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হকলেই উপস্থিত থাকবেন৷ তিনি বলেন যে এটি একটি সুন্দর ব্রোঞ্জের একচেটিয়া আবক্ষ মূর্তি। ২৮ শে নভেম্বর একটি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান হতে চলেছে, যেদিন সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণান শহিদ বরণ করেছিলেন।
উন্নিকৃষ্ণানের বাড়ির দ্বিতীয় তলাটিকে একটি ছোট জাদুঘরে (Museum) রূপান্তরিত করা হয়েছিল যেখানে তাঁর ইউনিফর্ম সহ সমস্ত সেনাবাহিনীর জিনিসপত্র রাখা হয়েছিল। লোকেরা বীর জওয়ানের জিনিসপত্রের এক ঝলক দেখার জন্য এবং তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সারিবদ্ধ ভাবে আসত। কিন্তু এখন তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণানের বাবা কে. উন্নীকৃষ্ণান বলেন যে, “ আমি এখন সংরক্ষণাগারে সর্বজনীন প্রবেশ নিষেধ করেছি,”। তিনি আরও বলেন, যে ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ছেলের ছবি পোস্ট করা হচ্ছিল তা তেনার একদমই পছন্দ হয়নি।
তাঁর বাবা আরও বলেন, সন্দীপ উন্নীকৃষ্ণন সবসময় তার সহযোদ্ধাদের যত্ন নিতেন এবং তাদের আর্থিকভাবে সাহায্যও করতেন। যদিও সে পর্যাপ্ত পরিমাণেই বেতন পেতেন, তার অ্যাকাউন্টে খুব বেশি টাকাও ছিল না। তবুও সন্দীপ অনেক দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করেছিলেন। সন্ত্রাসীদের নির্মূল করার জন্য অপারেশন চালানোর সময় সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণনের শেষ বার্তাটি ছিল: “উপরে আসবেন না, আমি তাদের সামলে নেব।”