Round Up 2021 – স্কুল বন্ধ থাকলেও থামেনি পড়াশোনা, রইল বছরের সেরা পাঁচ শিক্ষকের তালিকা

প্রাথমিক পর্যালোচনা থেকে জানা যায়, ২০২০ এবং ২০২১ এর করোনাকালীন (Covid-19) পরিস্থিতিতে লকডাউন (Lockdown) এবং ‘নিউ নর্মাল’ (New Normal) ইত্যাদির জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছাত্রসমাজ। অনলাইন মাধ্যমে পড়াশোনা (Online Study) চালু থাকলেও, অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকরী হয়নি এই পদ্ধতি। অনেকদিন আগে থেকে ‘নিউ নর্মাল’ (New Normal) শুরু হলেও, স্কুল চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং স্কুল খোলার পরও বিদ্যালয়মুখী না হওয়া বা তা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছেন, এমন অভিভাবকের সংখ্যাও প্রচুর।
করোনাকালীন পরিস্থিতিতে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, মোবাইল বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির অভাবে বহু ছাত্র-ছাত্রীই সঠিকভাবে ক্লাস করতে পারেনি, কিন্ত নতুন শ্রেনীতে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং সেই শ্রেনীর পাঠক্রম যথাযথভাবে বুঝে উঠতে পারছে না। এইরকম এক ‘শিক্ষার সার্কাস’ এর মাঝেও বেশ কিছু শিক্ষক আছেন, যাঁরা এই কঠিন পরিস্থিতিতে বেশ কিছু অভিনব উপায় খুঁজে বের করেছেন ছাত্র-ছাত্রীদের ‘স্কুলছুট’ (Drop Out) হওয়া থেকে বাঁচাতে বা প্রযুক্তির অভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের নতুন করে শেখাতে বা সাহায্য করতে । কখনও গ্রামের কোনো পরিত্যক্ত স্কুল বাড়ি, কখনও আবার ঘরে ঘরে গিয়ে পড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা।
১) ভারতী কালরা (Bharti Kalra) :
‘সর্বোদয়া বিদ্যালয়’ নামের একটি সরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের ভাইস-প্রিন্সিপাল (Vice-Principal) ভারতী কালরা এই বছর যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা মোবাইল ফোনের অভাবে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, এরকম ৩২১ জন ছাত্র-ছাত্রীকে স্মার্টফোনের ব্যবস্থা করেছেন। এমনকি এই কাজের জন্য তিনি ‘দিল্লি স্টেট টিচার্স অ্যাওয়ার্ড’ (Delhi State Teacher’s Award)-এও ভূষিত হন।
২) রঞ্জিত সিংহ দিশালে (Ranjit Singha Disaley) :
মহারাষ্ট্রের একটি পারিতওয়াড়ি নামের একটি ছোটো গ্রামের এই শিক্ষক ২০২০ সালে “গ্লোবাল টিচার’ (Global Teacher) পুরস্কার জিতেছেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অনুপাত সংখ্যায় বাড়ানোর জন্য এবং তাদের অ্যাকাডেমিক পারফরম্যান্সে (Academic Performance) উন্নতির জন্য তিনি এই পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি পারিতওয়াড়ি গ্রামের মেয়েদের বাল্যবিবাহ রুখতেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
৩) অরবিন্দ তিওয়ারি (Arvind Tiwari) :
ঝাড়খণ্ডের সিংভূম জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে অরবিন্দ (যিনি প্রথম জীবনে পেশায় একজন সাংবাদিক ছিলেন, পরবর্তীতে শিক্ষকতা শুরু করেন) একটি বিদ্যালয়কে একটি ট্রেনের কামরার মতন তৈরী করেন, যেই কামরার দেওয়াল জুড়ে বিভিন্ন ধরনের দৈত্য বা সাপ-লুডোর ছবি দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন। ফলস্বরূপ বর্তমানে ঐ প্রত্যন্ত গ্রামটির বিদ্যালয়ের ‘স্কুলছুট’ ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা শূন্য। এমনকি এই বছরে ঐ বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে মোট ২৬৯ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তিও হয়েছে।
৪) শক্তি প্যাটেল (Shakti Patel) :
মধ্যপ্রদেশের মান্ডলা জেলার প্যাটেল বিচিয়া ব্লকের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিভাগের শিক্ষক শক্তি প্যাটেলও এই বছর শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি প্রবর্তন এবং মহামারীর মধ্যে শিশুদের বিনামূল্যে নোটস প্রদানের জন্য জাতীয় শিক্ষক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন । তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য ১২৫ টিরও বেশি শিক্ষামূলক এবং প্রেরণামূলক ভিডিও রেকর্ড করেছিলেন এবং সেগুলি ইউটিউবে আপলোড করে কোভিড পরিস্থিতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়ক হয়ে উঠেছেন।
৫) আনন্দ কুমার (Anand Kumaar):
‘ সুপার ৩০ ‘ (Super 30)- এর প্রতিষ্ঠাতা , গণিতবিদ আনন্দ কুমারকে ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ টিচার সায়েন্টিস্ট’ ( NCTS ) দ্বারা ‘সারাভাই টিচার সায়েন্টিস্ট ন্যাশনাল অনারি অ্যাওয়ার্ড ২০২১ ‘ (Sarabhai Teacher Scientist National Honorary Award 2021’ প্রদান করা হয়েছে সুবিধাবঞ্চিত ছাত্র-ছাত্র-ছাত্রীদের কোচিং প্রদান করা এবং তাদের আইআইটি এন্ট্রান্সে (IIT Entrance) সফল হতে সাহায্য করার জন্য। বিহারের বাসিন্দা আনন্দ প্রায় দুই দশক ধরে সুবিধাবঞ্চিত ছাত্র-ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য করে চলেছেন।