National Pollution Day- বিশ্ব দূষণের তালিকায় প্রথম পাতায় ভারতের নাম, ইঙ্গিত ভয়াবহ ভবিষ্যতের

অহেলিকা দও, কলকাতা– আজ ৬৭ তম “জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস(National Pollution Control Day)”। প্রতি বছর এই দিনে অর্থাৎ ২ ডিসেম্বরে “জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস” পালন করা হয়। ১৯৮৪ সালে আজকের দিনেই ভোপালে ভয়াবহ দুঃখজনক দূর্ঘটনাটি (Bhopal Gas Leak Tragedy) ঘটেছিল। মানুষকে সচেতন করতে, পরিবেশ দূষণ (Environmental Pollution) রোধ করতে এবং পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কিত তথ্য দেওয়ার জন্য আজকের দিনটিতে “জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস” হিসেবে পালন করা হয়। ভারতবর্ষকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ (Pollution Control) করতে রয়েছে একাধিক আইন (Act)। কিন্তু আইন করেও কি কোনো ফলাফল হচ্ছে? পরিবেশ দূষণ কি আদেও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে?
ভোপালে ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড নামের একটি কারখানা থেকে বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানেট (MIC) গ্যাস লিকের কারণে প্রাণহানি হয় বহু মানুষের। আজও সেই ঘটনার প্রভাব ভারতের বুকে স্থায়িত্ব বজায় রেখেছে। এই দূর্ঘটনার জেরে ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ঘটনাটি ঘটে বহু বছর কেটে গেলেও তার প্রভাবকে কোনো ভাবেই সরানো যায়নি ভারতের বুক থেকে। যতটা পরিমাণ ক্ষতি হয়েছিল মানুষের ঠিক ততটাই ক্ষতি হয়েছিল আবহাওয়ার। এমনকি সেই ক্ষত এখনও চিরস্থায়ী। দূষণের প্রসঙ্গে ভারতের রাজধানী দিল্লিকেও ভুলে যাওয়া যাবে না। কিছুদিন আগেই ফের প্রতিবারের ন্যয় খবরের পাতায় দিল্লি দূষণের নাম। বাতাসে দূষণের মাত্রা এতটাই যে নিঃশ্বাস নেওয়াও দায়। দিল্লি বক্ষ চিরে প্রবাহিত যমুনা নদীতে রাসায়নিক প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় তৈরি হয়ে গিয়েছিল ফেনা। কিন্তু, এতো কিছু সত্ত্বেও সচেতনতা নিয়ে ভাবানো যায়নি মানুষকে।
আজ জাতীয় দূষণ দিবসে, জেনে নেওয়া যাক দেশে সর্বোচ্চ দূষিত শহরগুলির(আজ সকালের রিপোর্ট অনুযায়ী) নাম-
১. সাঁকরাইল, পশ্চিমবঙ্গ – ৩৯৮
২. জৌনপুর, উত্তরপ্রদেশ – ৩৬৯
৩. পিতমপুরা মনিটরিং স্টেশন, দিল্লি – ৩৬০
৪. পাটনা, বিহার – ৩৫১
৫. দারভাঙ্গা, বিহার – ৩৩৬
প্রতি বছর শীতকালে ভারতের উত্তরের এলাকাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গে। এই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণগুলি হল-
খড় পোড়ানো – কৃষি জমির আশেপাশের এলাকাগুলো পারালি পোড়ানো নামে পরিচিত।অক্টোবরের শেষের দিকে কৃষকরা তাদের খরিফ ফসল কাটা শুরু করে এবং তারা তাদের খড় পুড়িয়ে দেয়।আগেকার দিনে তারা এই খড় উপড়ে ফেলে দিত। কিন্তু এখন তারা খড় পুড়িয়ে ফেলে। এই সমস্যাটি প্রতি অগ্রহায়ণ মাসে ভারতের ক্ষতি করে।
বায়ু দূষণ – এটি প্রধানত মেট্রোপলিটন শহরগুলিকে বেশি প্রভাবিত করে।
আগুনের সামনে তাপ পোহানো – শীতকালে মানুষেরা গরম ভাব আনার জন্য কয়লা, কাঠ, আবর্জনা ইত্যাদি ব্যবহার করে আগুন জ্বালায়। ফলস্বরূপ ধোঁয়া নির্গত হয়ে শহরগুলিকে দূষিত করে। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে এই প্রভাব বেশি। তবে দিল্লি সরকার সম্প্রতি তাদের জন্য বৈদ্যুতিক হিটার বিতরণের ব্যবস্থা করা সত্ত্বেও শহরের দূষণের স্তরের কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।
যানবাহন এবং শিল্প – এই দূষণ খুব ব্যপক হারে ভারতে দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিল্লি বিগত কয়েক বছরগুলিতে এই সমস্যার মোকাবেলা করেছে। প্রতি বছর এই দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েক দিনের জন্য দিল্লির আশেপাশে কিছু শিল্প-কারখানা বন্ধ রাখা হয়।
প্রসঙ্গত, বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে প্রায় প্রতিটি মানুষই স্বাস্থ্য সচেতন। শরীরের যত্ন নিয়ে চিন্তিত থাকেন অধিকাংশ মানুষজন। এই পরিস্থিতি দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যকে ভীষণভাবে ক্ষতি করে। আর এই ক্ষতিকারক প্রতিটি দূষণের মধ্যে শীর্ষ তালিকায় রয়েছে বায়ু দূষণ। ভারতে বায়ু দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব মারাত্মক। স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং হৃদরোগ ইত্যাদি হয় বায়ু দূষণের কারণেই। বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশ বায়ু দূষণের কারণেই হয়। ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ২০১৯ সালে ভারতে প্রায় ১৬.৭ লাখ মৃত্যু হয়েছিল বায়ু দূষণের কারণেই। শুধু স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, অর্থনীতিক কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এবার এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে একটি প্রশ্ন তাহলে বারংবার মাথা চাগাড় দিয়ে ওঠে, কীভাবে তৈরি করা যেতে পারে একটি দূষণমুক্ত পরিবেশ?- একটি দূষণমুক্ত পরিবেশ তৈরিতে পালন করতে হবে একাধিক নিয়ম। যেমন, নিজের ব্যাক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার কমিয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা। এছাড়াও, বৈদ্যুতিক আলোর অপব্যবহার না করা। যেকোনো পণ্য যা পুনর্ব্যবহারের যোগ্য সেটিকে পুনরায় ব্যবহার করা, প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা টানা। দাবানল এবং ধূমপানের বিষয়ে সচেতন থাকা, এসির পরিবর্তে ফ্যান ব্যবহার করা, চিমনির জায়গায় ফিল্টার ব্যবহার করা, পটকা বা বাজি না ফাটানো। এছাড়াও, ক্ষতিকারক রাসায়নিকযুক্ত পণ্যের ব্যবহার এড়িয়ে চলা এবং বনায়ন বাস্তবায়ন।