আভিজাত্যের মুখে আগুন! খাটো শাড়ি-খালি পায়েই পদ্মশ্রী গ্রহণ করে নিজের ‘জাত’ চেনালেন তুলসী
রাষ্ট্রপতি ভবনের (Rastrapati Bhavan) লাল ঝকঝকে কার্পেটের ওপর দিয়ে খালি পায়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দাপটের সঙ্গে হেঁটে এলেন ৭২ বছর বয়সী একজন সাদামাটা উপজাতি মহিলা, তুলসী গৌড়া (Tulsi Gowda)। কর্ণাটকের হালাক্কি উপজাতির (Halakki Tribe Karnataka) এই ছিমছাম গড়নের বৃদ্ধা নিজস্ব ভঙ্গিতে সবার উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের (President Ramnath Kobind) হাত থেকে গ্রহণ করলেন পদ্মশ্রী পুরস্কার।
এই মুহুর্তে সোশ্যাল মিডিয়ার “সেনসেশন” তুলসী মাত্র বারো বছর বয়স থেকেই বৃক্ষরোপণ করতে শুরু করেন, আজ বাহাত্তর বছর বয়সে দাঁড়িয়ে মোট ৩০ হাজারেরও বেশি বৃক্ষরোপণ করেছেন নিজের হাতে। বাল্যজীবন থেকেই প্রকৃতিপ্রেমী তুলসীর নখদর্পণে আজ বিশ্বের যে কোনো গাছের গুণাগুণ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও ইতিহাস।
বন দফতরের ভলেন্টিয়ার হিসাবে কাজ করতেন তুলসী। পরবর্তীকালে বন সংরক্ষণের প্রতি তাঁর আগ্রহে মুগ্ধ হয়ে বন দফতরের চাকরিতে তাঁকে নিযুক্ত করেন বন দফতরের আধিকারিকেরা। একইসাথে তাঁর মায়ের নার্সারীতেও কাজ করতেন তুলসী। বৃক্ষরোপণ ও বন সংরক্ষণের জন্যই নিজের সারাজীবন উৎসর্গ করেছেন তুলসী গৌড়া। তাঁকে ‘অরণ্যের এনসাইক্লোপিডিয়া’ ও বলা হয়ে থাকে। বর্তমানে তিনি আজও যুব সম্প্রদায়কে বন সংরক্ষণের কাজে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন।
সোমবার রাষ্ট্রপতি ভবনে সেরা নাগরিকের জন্য ১০২ জনকে পদ্মশ্রী, ১০ জনকে পদ্মভূষণ এবং ৭ জনকে পদ্মবিভূষণ সম্মানে সম্মানিত করা হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে চর্চিত নাম হল তুলসী গৌড়া। আদিবাসী শাড়ি পড়ে, সাদামাটা ভঙ্গিমায় নিজের উপজাতিকে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। কোনদিনও স্কুল-কলেজের মুখ না দেখা তুলসী জিতে নিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ নাগরিকের সম্মান।
রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাত থেকে পদ্মশ্রী পুরস্কার নিচ্ছেন তুলসী – এই চিত্রে মুগ্ধ নেটিজেন থেকে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী থেকে রাষ্ট্রপতি সকলেই তাঁর(তুলসী গৌড়ার) পুরস্কার পাওয়ার মুহূর্তের ছবিটি ট্যুইট করেছেন। তুলসী গৌড়ার প্রধানমন্ত্রীকে সৌজন্য দেখানোর ছবিটিই সবচেয়ে বেশি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। নেটদুনিয়ার এক বিশিষ্ট ব্যক্তি সেই ছবিটি ট্যুইট করে লিখেছেন, “রাষ্ট্রপতি ভবনের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের এই ছবিটিই সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে।”
দেশের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ট্যুইট করে বলেন, “সমাজের ভিতরে থেকে যাঁরা সমাজকে অনন্য করে তুলছেন, তাঁদের পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হচ্ছে দেখে খুবই ভালো লাগছে। তাঁদের অবদান দেখে মনে হয়, এখনও অনেক কিছু করা বাকি রয়েছে। নিজেকে যোগ্য বলে মনেই হয় না।’ জন্মের পর থেকে দারিদ্র,অশিক্ষা পেরিয়ে তুলসীর জীবনের এই নিঃশব্দ বিপ্লব এবং অবশেষে নিজের শিকড়কে আগলেই যুদ্ধ জয়ের কাহিনী আপামর মিডিয়াবাসীকে কেবল মুগ্ধ করেনি, এক জীবনযুদ্ধের শিক্ষাও দিয়ে গেছে।