Viral Trend : ১১৭৬ হরে কৃষ্ণ-এ মাতোয়ারা নবীন প্রজন্ম, ইতিহাস নাকি গোটাটাই বোগাস

বিগত কয়েকদিন সোশ্যাল মিডিয়ায়(Social Media) একটি বিষয় প্রায় নজরে এসেছে সকলেরই। ১১৭৬ হরে কৃষ্ণ! ( Viral Trend ) এই নিয়েই মেতে রয়েছে সামাজিক মাধ্যম। ফেসবুক খুললেই দেখা যাচ্ছে, এমন পোস্ট করেছেন চেনা-জানা-অচেনা-অজানা অনেকেই। কিন্তু কেন? যারা এই পোস্ট শেয়ার ( Viral Trend ) করছেন তাঁদের বিশ্বাস, এই কথাটুকু লিখলেই নাকি পূরণ হবে মনোবাঞ্চা। এমন বিশ্বাসের জোয়ারে ভেসেই সামাজিক মাধ্যম ভরাতে শুরু করেন অনেকেই।
Viral Trend –টির ইতিহাস
কিন্তু কী এই ১১৭৬ হরে কৃষ্ণ? –এই প্রশ্নের উত্তর দিতেও দেখা গেছে বহু ব্লগার, ফেবু লেখক থেকে শুরু ইউটিউবার পর্যন্ত অনেককেই। কারোর বক্তব্য, ১১৭৬ হরে কৃষ্ণ নাকি কালী সন্তরণ উপনিষদে লেখক রঘুনন্দন ভট্টাচার্যের সৃষ্টি। তিনি ওই উপনিষদে ওই কথা লিখে গেছেন, যা লিখলেই নাকি রাতারাতি মনোবাঞ্চা ( Viral Trend ) পূরণ হবে। অবশ্য আরেক শ্রেণির বক্তব্য, ১১৭৬ সংখ্যাটি নাকি আসলে ভগবানের সংখ্যা। কেউ কেউ দাবি করেছেন, এটি নাকি এঞ্জেল সংখ্যা। ভাগবদগীতায় এই সংখ্যাগুলির আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা রয়েছে। যার সম্মিলিত অর্থ শ্রী কৃষ্ণের রাস্তায় হাঁটলে লক্ষ্যপূরণ হবে। তাই যে যেমন ভাবে পারছে যখন পারছে শুরু করে দিচ্ছে পোস্ট করতে। পোস্ট শেয়ারকারীর একটি বড় অংশ বর্তমানের তরুণ প্রজন্ম। স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনরত কিংবা সদ্যপ্রাক্তনী।
কী বলছে বিশেষজ্ঞরা
তবে সত্যিই কি তাই? গোটা ঘটনাটাই একটি ধর্মীয় ঘটনার ভিত্তিতে তৈরি? এই প্রশ্নের জবাবে ধর্ম, জ্যোতিষ এবং পুরাণ চর্চার বিশেষজ্ঞরা এই ব্যাখ্যাকে একেবারেই সিলমোহর দিতে রাজি নন। পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির বক্তব্য, কালী সন্তরণ উপনিষদ আসলে প্রাচীন উপনিষদকে নকল করে লেখা। তাই একে ঠিক করে উপনিষদও বলা যায় না। এর লেখক মোটেই রঘুনন্দন ভট্টাচার্য নন। নৃসিংহপ্রসাদের সংযোজন, ‘রঘুনন্দন শ্রীচৈতন্যের সমসাময়িক একজন পন্ডিত যিনি স্মৃতিশাস্ত্রকার। তাই তিনি ওই কালী সন্তরণ উপনিষদ লিখতে পারেন না। বড় জোর কোনও লেখায় এর উদাহরণ দিতে পারেন মাত্র।’ আর গীতায় কি এমন কিছু বলা আছে? নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির বক্তব্য, “আমি ছোটবেলা থেকে গীতা পড়ছি। কোথাও কোনও অধ্যায়ে এমন সংখ্যার রেফারেন্স নেই।“
কী বলছে ISKCON
তাহলে ফেসবুক জুড়ে চলা এই ভাইরাল স্রোতের তথ্য কি গোটাটাই ‘ভুয়ো’? এমনই দাবি নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির। তাঁর পাশাপাশি ইসকন মায়াপুরের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাসও একই দাবি করেন। তাঁর বক্তব্য, “জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার জন্যই এমন করা হচ্ছে। এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। এমন কথা লিখলে মনোবাঞ্চা পূরণ হবে, এটাও কোথাও বলা নেই। ইসকন মায়াপুর একে সমর্থন করে না, এটা পাগলের প্রলাপ।” ( Viral Trend ) রসিক গৌরাঙ্গ দাসের স্পষ্ট বক্তব্য, “কেউ যদি কাউকে খুন করতে চেয়ে এই কথাটি লিখে থাকে, তাহলে কি তার মনোবাঞ্চা পূরণ হবে? উত্তর হলো- না। এই ভাবে কোনও মনোবাঞ্চা পূরণ করা যায় না।” তাহলে কে কেন কোন উদ্দেশ্যে এমন পোস্ট ছড়াল, এই প্রসঙ্গে অবশ্য তিনি পুলিশের সাইবার বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাঁর সাফ বক্তব্য, অবিলম্বে এই বিভ্রান্তি বন্ধ করতে প্রয়োজন পুলিশি হস্তক্ষেপ।
আরও পড়ুন……Dudh Puli Recipe : মকর সংক্রান্তিতে বাড়িতেই হোক স্বাদের জাদু, রইল দুধ পুলি তৈরির রেসিপি
কী বলছে মনোবিদরা
প্রসঙ্গত, এই গোটা ঘটনায় আবার নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি এক অন্য মন্তব্য করে বসেন। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘নবীন প্রজন্ম নাসা থেকে ভাষা জানতে পারে। কিন্তু উপনিষদ ও গীতা সম্পর্কে এরা কিছুই জানে না। তাই মুর্খামি করছে।’ ( Viral Trend ) কিন্তু সমাজতত্ত্ববিদ প্রশান্ত রায় ও মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালরা এটিকে নবীন প্রজন্মের মুর্খামি হিসাবে দেখতে চান না। তাঁদের বক্তব্য, অতিমারি ও ঘরবন্দী দশায় সব কিছুই অনিশ্চিত। রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি- কোনও কিছু দিয়েই যখন মনোবাঞ্চা পূরণ হচ্ছে না। তখন ‘উইশ’ পূরণের এক ভিন্ন পথে হেঁটে দেখতে চাইছে নবীনরা। পাশাপাশি তাঁদের আরও দাবি, নবীনদের কাছে এখন কোনও আদর্শ উপস্থিত নেই। ফলত অবিজ্ঞান, কুসংস্কারের পথই এখন দিশাহীন নবীন প্রজন্মের কাছে বেঁচে থাকার রসদ।