যৌনাঙ্গে গরম ডিম! কৃষকের কাছে আজও অনুপ্রেরণা নাচোলের রানী

Ila mitraব্রিটিশ আমলে ক্ষুদিরাম, ভগৎ সিং, সুর্য সেনের পাশাপাশি বৃটিশ সিংহের কলজেতে কাঁপন ধরিয়েছিলেন এমন তেজস্বিনী নারীর সংখ‍্যাও নেহাত কম নয়। মাতঙ্গিনী হাজরা, কল্পনা দত্তরা তাদের অনমনীয় জেদের সামনে বৃটিশরাজকে নতজানু হতে বাধ‍্য করেছেন বারবার। এমনই আরেক তেজস্বিনী বিপ্লবী নারী ইলা মিত্রের ( Ila mitra) সাহসিকতার কাহিনী আজ ফিরে দেখার পালা।

Ila mitraIla Mitra – জমিদারবাড়ির চার দেওয়াল বাঁধতে পারেনি ইলাকে

বিশ শতকের কৃষক বিদ্রোহের অন‍্যতম নেত্রী ছিলেন ইলা মিত্র যিনি পরবর্তীকালে হয়ে উঠেছিলেন ‘নাচোলের রানী’। তবে গল্পের শুরুটা প্রথম থেকেই এতটা মসৃণ ছিল না। কুড়ি বছর বয়সে নাচোলের রামচন্দ্রপুরে জমিদার মহিমচন্দ্র মিত্রের বাড়িতে বউ হয়ে আসেন কুড়ি বছরের ইলা। প্রথম দিকে অন্তঃপুরবাসিনী গৃহবধূ হয়েই দিন কাটছিলো তার। তবে যে মেয়ের হৃদয়ে বিপ্লবের আগুন জ্বলছে তাকে কি জমিদারবাড়ির চার দেওয়াল বেঁধে রাখতে পারে!

Ila Mitra – কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান

বেথুন কলেজের ছাত্রী ইলা অল্প বয়সেই যোগ দিলেন কমিউনিস্ট আন্দোলনে। বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ইলার আদি নিবাস যশোরের বাগুটিয়া গ্রামে। বাবা ছিলেন উচ্চপদস্থ ইংরেজ সরকারের কর্মচারী। তবু কলেজে ভর্তি হয়েই ইলা গ্রহণ করে ফেললেন কমিউনিস্ট পার্টি এবং মহিলা সমিতির সদস্য পদ। রাওয়াল বিল বা হিন্দু কোড বিল এর বিরুদ্ধে আন্দোলনও শুরু করেন তিনি। প্রাণশক্তিতে ভরপুর যুবতী ইলা বাস্কেটবল এবং ব‍্যাডমিন্টনও খেলতেন। এমনকি জাপান অলিম্পিকের জন‍্যও মনোনীত হয়েছিলেন। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় জাপান জয় অধরা থেকে গেল। এরপর ১৯৪৫ সালে পেলেন মনের মানুষ রমেন্দ্রনাথ মিত্রকে। জমিদার বাড়ির সদস্য হয়েও তিনি ছিলেন মনেপ্রাণে কমিউনিস্ট।

Ila Mitra – মাঠে ময়দানে লড়াকু ইলা

বিয়ের পর কিছুকাল স্থগিত ছিল পড়াশোনা, আন্দোলনের মঞ্চ। তবে সমাজ বদলের স্বপ্ন যার চোখে তিনি তো মুক্তির ডানা মেলবেনই। তাই শ্বশুরবাড়ির কাছেই একটি স্কুলে শিক্ষিকার কাজে যোগ দিলেন ইলা। ছাত্রীসংখ‍্যা তিনজন থেকে বেড়ে মাত্র কয়েক মাসেই পঞ্চাশে পৌছালো। এই স্কুলকে কেন্দ্র করেই তিনি জড়িয়ে পড়েন তেভাগা আন্দোলনের সঙ্গে। ১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষ শুরু হলে সারা ভারতের কৃষকদের শোচনীয় অবস্থা হয়। তাদের ওপর শোষণ আরো বেড়ে যায়। তখন ইলা রাজশাহী নাচোলের কৃষকদের সংগঠিত করতে থাকেন দুই তৃতীয়াংশ ফসলের দাবিতে। দেশভাগের সময়ে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা রোধ করতেও সক্রিয় ভুমিকা নেন তিনি।

Ila mitraIla Mitra – কৃষক বিদ্রোহের অগ্নিকন‍্যা

১৯৫০ সালে দেশভাগের পর পুর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয় নাচোল। ইলার নেতৃত্বে কৃষক বিদ্রোহ বিরাট আকার ধারণ করে। এই সময়ে পাকিস্তান সরকার প্রায় দুহাজার সেনা পাঠায় আন্দোলন দমন করতে। এই সময়েই সাঁওতালের পোশাক পরে পালাতে গিয়ে রহনপুরে ধরা পড়ে যান ইলা। নাচোল এবং রাজশাহীতে প্রচণ্ড পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন ইলা। তাকে উলঙ্গ করে যৌনাঙ্গে গরম ডিম ঢুকিয়ে দেবার পাশাপাশি ধর্ষণের মতো নারকীয় অত‍্যাচার চলে। কিন্তু তাতেও ইলার মুখ থেকে বের করা যায়নি একটিও শব্দ।

Ila mitraপরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ইলার নিঃশর্ত মুক্তির আবেদন জানালে পাকিস্তান সরকার প‍্যারোলে তাকে কলকাতা আসার অনুমতি দেয়। আটমাস টানা চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে কলকাতাতেই থেকে যান ইলা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাইভেটে এম এ পাশ করে সিটি কলেজে শুরু করেন অধ‍্যাপনার কাজ। তার অনূদিত বই ‘হিরোশিমার মেয়ে’ লাভ করেছিল সোভিয়েত ল‍্যান্ড নেহেরু পুরষ্কার। ২০০২ সালে প্রয়াত হন কৃষক বিদ্রোহের অগ্নিকন‍্যা, নাচোলের রানী ইলা মিত্র। আজও কৃষক আন্দোলনের ক্ষেত্রে অলক্ষ‍্যে প্রেরণা জোগাচ্ছেন ইলা এমনটাই মনে করে উপমহাদেশের কৃষক সমাজ।

আরও পড়ুন- চোখের কালচে দাগে নষ্ট সৌন্দর্য, জেনে নিন সহজে মুক্তি পাবার ৫ ঘরোয়া উপায় – https://thebengalichronicle.com/home-remedies-cure-under-eye-dark-circle/




Leave a Reply

Back to top button