প্রয়াত নারায়ণ দেবনাথ, এক নজরে দেখে নিন বাঁটুল থেকে নন্টে-ফন্টে স্রষ্টার অমর কিছু সৃষ্টি

মঙ্গলবার সকাল দশটা দক্ষিণ কলকাতার মিন্টো পার্কের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বিছানায় শুয়ে রয়েছেন এক প্রবীণ ব্যাক্তি ( Narayan Debnath ) । সকাল থেকেই হৃদযন্ত্রের সমস্যা হচ্ছিল প্রবল। সময়ের কাঁটা খানিকটা পেরোতেই কানে এলো এক হতাশাজনক সংবাদ।
শেষ এক অধ্যায়ের
চলে গেলেন প্রখ্যাত কমিকস শিল্পী নারায়ণ দেবনাথ ( Narayan Debnath ) । বয়স তখন ৯৬। গত ২৪ ডিসেম্বর তাঁকে দক্ষিণ কলকাতার মিন্টো পার্কের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ফুসফুস থেকে কিডনির সমস্যা বাড়ছিল। রক্তে কমছিল অক্সিজেনের মাত্রা। অবস্থার বিপজ্জনক অবনতি হওয়ায় ১৬ জানুয়ারি তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়।
শারীরিক ব্যাধি নিয়ে ভুগছিলেন শিল্পী
বয়সজনিত একাধিক সমস্যায় ভুগছিলেন শিল্পী ( Narayan Debnath ) । এর আগেও বহুবার তাঁকে নানা কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসার ভার নিয়েছিল রাজ্য সরকার। তৈরি হয়েছিল চিকিৎসকদের একটি আলাদা দল। কিন্তু এবার আর বাড়ি ফেরা হল না বাঙালির কিশোরবেলার বন্ধুর। চলে গেলেন এক না ফেরার দেশে।
অধ্যায়ের প্রথম পাতা
সাল ১৯২৫ হাওড়ার শিবপুরে জন্ম নারায়ণ দেবনাথের ( Narayan Debnath ) । অল্প বয়স থেকেই শিল্পের প্রতি ভীষণ ঝোঁক। বাড়িতে অলংকার তৈরির চল থাকায় অল্প বয়স থেকেই নকশা তৈরি কাজে লেগে পড়েছিলেন তিনি। আর সেই থেকেই আঁকা হয়ে ওঠে তাঁর নেশা। এরপর স্কুলের পাঠ চুকিয়ে তিনি আর্ট কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ডামাডোলে বন্ধ হয়ে যায় আর্ট কলেজে পড়া। তারপরে একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার হয়ে কাজ করেন তিনি।
কমিকসের জগতে আগমন
বাংলা কমিকসের জগতে তাঁর আগমন ঘটে দেব সাহিত্য কুটিরের সম্পাদক মন্ডলীর উৎসাহে। বাংলা কমিকসের জীবন্ত বিস্ময় নারায়ণ দেবনাথের ( Narayan Debnath ) তিন জনপ্রিয় কমিকস সিরিজ হাঁদাভোঁদা (১৯৬২), বাঁটুল দি গ্রেট (১৯৬৫) এবং নন্টে ফন্টে (১৯৬৯)। ৫৫ বছরের বেশি সময় ধরে প্রায় নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কমিকস সৃষ্টি করে তিনি বিস্মিত করেছেন সকলকে। এই তিনটি কমিকস সিরিজের কাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্য ও চিত্ররূপ সবই তাঁর একার হাতে তৈরি। বলে রাখা ভালো, এমন নজির বিশ্ব কমিকসে খুব বেশি নয়।
পাড় হল অর্ধ শতাব্দী
হাঁদাভোঁদা, বাঁটুল দি গ্রেট ইতিমধ্যে অর্ধ শতাব্দী অতিক্রম করেছে, এবার পালা নন্টে ফন্টের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের। ১৯৬৯ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি কিশোরপাঠ্য পত্রিকায় প্রকাশ পায় দুই কিশোরবন্ধু নন্টে আর ফন্টের কান্ডকারখানা। সাদাকালো বইয়ের আকারে প্রকাশ পায় ১৯৮১ সালে। প্রথমদিকে, এদের একে অপরের পেছনের লাগার প্রবণতার কাহিনী শিল্পী তুলে ধরলেও পরেরদিকে, মনোরঞ্জন ঘোষের ‘পরিবর্তন’ উপন্যাসের অনুপ্রেরণায় নন্টে ফন্টে কমিকসে যোগ হয় সুপারিন্টেডেন্ট স্যার ‘পাতিরাম হাতি’- সহ বোর্ডিং স্কুলের কান্ডকারখানা। এর পরে সাল ১৯৭২ সালে নন্টে ফন্টে কমিকসে আগমন ঘটে কেল্টুদা চরিত্রের।
বাংলা কমিকসের সৃষ্টিকর্তা
তবে নন্টে-ফন্টে, হাঁদা-ভোঁদা ছাড়াও আরও একাধিক কমিকস তৈরি করেছেন শিল্পী। বাহাদুর বেড়াল, ম্যাজিশিয়ান পটলচাঁদ থেকে শুরু করে একাধিক কমিকসের স্রষ্টা ( Narayan Debnath ) তিনি। আজও তাঁর ছোট্ট বসার ঘরের আলমারিতে নন্টে-ফন্টে, বাঁটুল, হাঁদা ভোঁদা-সহ একাধিক কমিকস, কাহিনীর এবং পুরস্কারের বসবাস। কিন্তু দুঃখের কথা এই যে, সেই ঘরে চেয়ারে গা এলিয়ে আর বসে থাকতে দেখা যাবে না আর তাঁকে। ঘর জুড়েই পড়ে থাকবে অজস্র কাহিনী, কমিকস ও তাঁর জীবনের সেই প্রতিটা পাতা। যা হয়তো তাঁর সেই ছোট্ট ঘরটির সাথে বাঙালির মনের এক গহিন কোণেও থেকে যাবে চিরকাল।
আরও পড়ুন…….Year Ender 2021: ফেলে আসা কিছু স্মৃতি, কিছু মন খারাপ, চলতি বছরে বিদায় নিলেন যাঁরা