কাজ শেষে আলো বন্ধ হতেই কোন অজানা ভয় গ্রাস করে এই লালবাড়িকে! রাইটার্স বিল্ডিংয়ে নাকি আজও ভূতের বাস

রাখী পোদ্দার, কলকাতা : তিলোত্তমার শহর কলকাতা ( Kolkata)। এই কলকাতা শহর নিয়ে বহু কাহিনী শোনা যায় লোকমুখে। এই কলকাতা শহরে এমন বহু জায়গা আছে যেগুলিকে ভূতুড়ে বলে মনে করা হয়। এর মধ্যে কিছু জায়গা নিয়ে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়েছে গুজবও। আবার এমন কিছু জায়গা এই তিলোত্তমার শহরে সত্যি আছে যেখানে ঘটেছে কিছু ব্যাখ্যা হীন ঘটনা। এসব স্থানগুলির অন্যতম ভূতুড়ে জায়গার কথা না বললেই নয়। আর সেটা হল রাইটার্স বিল্ডিং ( Writers Building) বা মহাকরণ। এই বিল্ডিং সম্পর্কে মানুষের মুখে নানা কাহিনী শুনতে পাওয়া যায়। রাইটার্স বিল্ডিং বা মহাকরণ কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ একটি ইমারত। প্রায় ৩২০ বছর ধরে বিভিন্ন সরকারের উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়ে রয়েছে এই বিল্ডিং। বর্তমানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ কারবার নবান্ন থেকে চালিত করা হলেও একটা সময় রাজ্যের প্রশাসনিক কার্যালয় ছিল এই রাইটার্স বিল্ডিং ( Writers Building)। ১৭৭৬ সালে টমাস লিন নামক এক ইংরেজি বিল্ডিংটি তৈরি করেন। এখানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীদের থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। রাইটার্স বলতে তখনকার সময়ে এই কর্মচারীদের বোঝানো হত। তাই এই বিল্ডিং এর নাম রাখা হয় রাইটার্স বিল্ডিং।
শোনা যায়, এই বিল্ডিংটি এতটাই বড় যে এখানে এমন বহু ঘর রয়েছে যেগুলি কখনো খোলাই হয়নি। সেইসময় ইংরেজরা নিরীহ ভারতীয়দের এখানে ধরে এনে অত্যাচার করত কখনও কখনও তাদের মেরেও ফেলত। শোনা যায় ইংরেজদের এই অত্যাচারের কাহিনী আজ লেখা রয়েছে এই মহাকরণের গায়ে। রাইটার্স বিল্ডিং ( Writers Building horror stories) প্রশাসনিক কাজ করার জন্য চালু করার পর থেকেই এখানে ঘটতে থাকে বেশ কিছু অলৌকিক ঘটনা। হঠাৎ হঠাৎ শুনতে পাওয়া যায় তীব্র চিৎকারের আওয়াজ আবার কখনো এই বিল্ডিংএ অনুভূত হয় প্রচণ্ড শীত। আবার কখনো জুতোর শব্দ শুনতে পাওয়া যায় এই বিল্ডিংএ। এই অদ্ভুত ঘটনা ঘটার ফলেই সন্ধ্যের পর থেকে এই বিল্ডিংএ কেউ থাকতে চাইতেন না আর। সন্ধ্যে সাতটার পর বিল্ডিংয়ের ব্যস্ততম অফিসেও চলাচল বন্ধ হয়ে যায় মানুষের। লোকমুখে প্রচলিত যখন অধিক রাতে কেউ এই বিল্ডিং এর পাশ দিয়ে যাতায়াত করেছেন তারাও লক্ষ্য করেছেন এই বিল্ডিং এ কোন ছায়ামূর্তি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
শোনা যায়, বিল্ডিংএর ৫ নম্বর ব্লকটি মোটেও সুবিধার নয়। রাত বাড়তেই এখানে শোনা যায় ঘোড়ার পায়ের আওয়াজ, বুটের ঠক ঠক আওয়াজ। ইতিহাস ঘাটতে দেখা যাবে এখানেই রয়েছে সেই কুখ্যাত কলা বাগান। যেখানে ইংরেজরা নিরীহ ভারতীয়দের মেরে পুতে দিত। একবার কয়েকজন ইংরেজকেও এই জায়গায় কবর দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। এখানে চলত ঘোড়ায় টানা গাড়ির খেলা, বন্দুকের খেলা। মানুষকে হত্যা করা ছিল এখানের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা।
এমনকি ১৯৩০ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বিনয়, বাদল, দীনেশ ( Binay, Badal, Dinesh) রাইটার্সে হানা দিয়ে হত্যা করেন সিম্পসন ( Simpson) সাহেবকে। শোনা যায় এরপর থেকে নাকি সিম্পসন সাহেবের অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায় এই বিল্ডিংএ। ইতিহাসের ভয়ংকর কিছু কাহিনী এবং রক্তে মাখা দেওয়ালগুলি হয়তো তাই আজও জেগে তাদের পুরোনো কাহিনী শোনানোর জন্য। তবে এই ঘটনা কতটা সত্যি তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি আজও। তবে যা রটে তার কিছুটা অবশ্যই ঘটে। যাই হোক সব মিলিয়ে রাইটার্স বিল্ডিংএ অশরীরী আত্মার অস্তিত্ব অস্বীকার করতে পারে না কেউই। সত্যি মিথ্যা ও অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে ৩২০ বছর ধরে তিলোত্তমার বুকে দাঁড়িয়ে আছে এই রাইটার্স বিল্ডিং।