কার হাতে থাকছে হুগলীর ১২টি পুরসভার স্টেয়ারিং, ফিরে দেখা পূর্ববর্তী পুরযুদ্ধ

পথিক সেনগুপ্ত, কলকাতা : রাত পেরলেই বঙ্গে নির্বাচন। হাতে পড়ে রয়েছে ঘণ্টাখানেক। আলো ফুটতেই বাংলার ১০৮টি পুরসভায় শুরু হয়ে যাবে ( Municipal Poll ) নির্বাচনী যজ্ঞ। নির্বাচনের অন্তিম লগ্নে একনজরে দেখে নেওয়া যাক হুগলীর সরগরম ১২টি পুরসভা-

উল্লেখ্য, হুগলির ১২টি পুরসভার ২৩২৬ টি বুথের মোট ভোটার সংখ্যা ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৭৮০ জন। ১২ টি পুরসভা যথাক্রমে, হুগলি চুঁচুড়া পৌরসভা, বাঁশবেড়িয়া , শ্রীরামপুর, বৈদ্যবাটি, চাঁপদনি, ভদ্রেশ্বর, রিষরা, কোন্নগর, আরামবাগ, উত্তরপাড়া, তারকেশ্বর ও ডানকুনি পুরসভা। রাজ্যে নির্বাচনী ঘন্টা বাজার পর থেকেই উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। এমতাবস্থায় ( Municpal Poll ) কালকের দিনটাই নির্বাচন করতে চলেছে আগামী হুগলীর ১২টি পুরসভার স্টেয়ারিং যাবে কার হাতে?

ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগে সর্বদা উচিত পিছন ফিরে ইতিহাসের দিকে তাকানো। গতবারের পুর নির্বাচনের দিকে তাকালে দেখা যাবে তৃণমূলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা। তবে আগের তুলনায় বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে অনেকটা। তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গদিতে বসে থাকলেও। সেই গদির পায়া ভাঙতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনেই দেখা গিয়েছিল সেই দৃশ্য। একদা বঙ্গে পিছিয়ে থাকা বিজেপি পরিণত হল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলে। অপরদিকে, বামেরা শূন্য রানেই আউট হয়ে গেল।

ফিরে দেখা ২০১৫-এর ফলাফল –

হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভায় মোট ওয়ার্ড রয়েছে ৩০ টি। তার মধ্যে মোট ভোটার সংখ্যা ১লাখ ২৮ হাজর ২০১২ জন। ভোট হবে মোট ৩৯৪ টি বুথে। ২০১৫ সালের পুর নির্বাচনে ( Municpal Poll ) তৃণমূল জয় লাভ করেছিল ২৫টি আসন সহকারে। সিপিআই(এম) –এর ঝুলিতে গিয়েছিল ৩ টি আসন। পাশাপাশি, কংগ্রেস পেয়েছিল ১টি আসন। ফরওয়ার্ড ব্লকও ১টি আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃণমূল পুর বোর্ড গঠন করেছিল এবং শেষ পৌরপ্রধান ছিলেন গৌরী কান্ত মুখার্জি। এদিকে, বাঁশবেড়িয়া পুরসভায় মোট ওয়ার্ড রয়েছে ২২টি। ভোট হবে ২১৮ টি বুথে। মোট ভোটার সংখ্যা ৭৬ হাজার ২৩০ জন। ২০১৫ সালে এই পুরসভাতেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে জয় লাভ করেছিল তৃণমূল। গতবারের নির্বাচনে তৃণমূলের আসন সংখ্যা ছিল ১৭টি। নির্দলের ঝুলিতে গিয়েছিল ২ টি আসন বিজেপি পেয়েছিল ১টি আসন। সিপিআই(এম) ১টি আসন ও ফরওয়ার্ড ব্লক ১টি আসন।

Municipal Poll 2022পাশাপাশি, শ্রীরামপুর পুরসভার মোট আসন সংখ্যা ২৯ টি। ৩৪৮ টি বুথে মোট ভোটার রয়েছে ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৩৪১ জন । ২০১৫ সালের পুরসভা নির্বাচনের ফলাফল ছিল, ( Municpal Poll ) তৃণমূল ২২টি আসন, সিপিআই(এম) ৪টি আসন, নির্দল ২টি আসন, কংগ্রেস ১টি আসন। শ্রীরামপুরের আগের পুরসভা এলাকা বৈদবাটি পুরসভার ২৩ টি ওয়ার্ডে ১২৯ টি বুথে ভোট হবে। মোট ভোটার সংখ্যা ১লাখ ৬ হাজার ৭০৭ জন। ২০১৫ সালের হওয়া পুর নির্বাচনের ফলাফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল তৃণমূল। সেই বার তৃণমূল পেয়েছিল ১৩ টি আসন, নির্দল ৩ টি আসন, ফরওয়ার্ড ব্লক ৩ টি আসন এবং কংগ্রেস ও সিপিআই(এম) পেয়েছিল যথাক্রমে ৩টি ও ১টি আসন।

ভদ্রেশ্বর পৌরসভার মোট আসন সংখ্যা ২১ টি। ২০৮  টি বুথে মোট ভোটার রয়েছে ৮৫ হাজার ৪২২ জন। ২০১৫ সালের পুরসভা নির্বাচনের ফলাফল ছিল, তৃণমূল ১১ টি আসন। সিপিআই(এম) ৫ টি আসন। বিজেপি পেয়েছিল ২ টি আসন। কংগ্রেস ১ টি আসন। সিপিআই ১ টি আসন। নির্দল ১ টি আসন। এদিক, রিষরা পৌরসভার মোট আসন সংখ্যা ২৩ টা। মোট ভোটার ৯৮ হাজার ৩৮৯ জন। ভোট হবে ২৫৬ টি বুথে। ২০১৫ সালের পুরসভা নির্বাচনের ফলাফল ছিল, তৃণমূল পেয়েছিল ১৯ টি আসন।নির্দল পেয়েছিল ২ টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছিল ১ টি আসন। সিপিআই পেয়েছিল ১ টি আসন। একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে পুরোবোর্ড গঠন করে তৃণমূল। পুরপ্রসাসক হন জাহিদ হাসান খান।

Municipal Poll 2022 কোন্নগর পৌরসভার মোট আসন সংখ্যা ২০টি। ১৫০ টি বুথে ভোট দেবেন ৬২ হাজার ৪১০ জন। ২০১৫ সালে সেখানে পুরসভা নির্বাচন ফলাফল ছিল, তৃণমূলের ঝুলিতে ১১টি আসন, কংগ্রেস ৪ টি আসন, সিপিআই (এম) ৪ টি আসন, বিজেপি ১টি আসন। কোন্নগর পেরিয়ে উত্তরপাড়া ( Municpal Poll ) পুরসভায় মোট আসন সংখ্যা ২৪ টি। মোট ভোটার সংখ্যা ২১হাজার ৩৬৬ জন। ভোট হবে ১৬৬ টি বুথে। গতবারের নির্বাচনে সেখানে সংখ্যা গরিষ্ঠতার সঙ্গে ১৫টি আসন নিয়ে জয় লাভ করেছিল তৃণমূল, সিপি (এম) পেয়েছিল ৪টি আসন। নির্দল ৩ টি আসন ও কংগ্রেস ২ টি আসন।

রাজনীতি দৃষ্টিভঙ্গীতে হুগলীর সর্বোচ্চ উত্তেজিট এলাকা আরামবাগ পুরসভায় মোট আসন রয়েছে ১৯টি। মোট ভোটার সংখ্যা ৫৭ হাজার ৯৫৯ জন। ২০১৫ সালে হওয়া পুরসভা নির্বাচনের ফলাফল ছিল তৃণমূলের অবিসংবাদী জয়। পাশাপাশি, ডানকুনি পুরসভার মোট আসন সংখ্যা ২১টি। ভোটার রয়েছে ৭৮ হাজার ৬৫০ জন। ভোট হবে ৯৭ টি বুথে। ২০১৫ সালের পুরসভা নির্বাচনের ফলাফল ছিল, তৃণমূল ১১ টি আসন, সিপিআই(এম) ৮ টি আসন, কংগ্রেস ১ টি আসন, নির্দল ১ টি আসন।

চাঁপদানি পুরসভায় মোট আসন রয়েছে ২২টি। আগামীকাল ২৪০ টি বুথে ভোট দেবেন ৯৭ হাজার ৬৪৮ জন। গতবারের নির্বাচনে ২২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ১৩টি, নির্দল পেয়েছিল ৪টি আসন, বিজেপি ২টি, কংগ্রেস ও বঙ্গ বাম যথাক্রমে ২টি ও ১টি। এদিকে, তারকেশ্বর পুরসভায় মোট আসন সংখ্যা ১৫ টি। বুথ রয়েছে ৫০ টা মোট ভোটার ৭৮ হাজর ৬৫০ জন। ২০১৫ সালে আরামবাগের মতোই এখানে অবিসংবাদী জয় লাভ করেছিল তৃণমূল।

আরও পড়ুন………রুশ বিপ্লবের সঙ্গে মিশে গিয়েছে বাংলার গল্প, যুদ্ধ আবহে এই অচেনা বাঙালির জীবন যুদ্ধের কথা জেনে নিন

২০১৫ সালের নিরিখে পুরভোটে হুগলির মোট আসন সংখ্যা ছিল ২৬৯ টি। তার মধ্যে তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছিল ১৯১ টি আসনে। দ্বিতীয় স্থানে ছিল বামেরা তাদের মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩৮ টি। কংগ্রেস পেয়ে ছিল ১৬ টি আসন। বিজেপি ৬ টি ও নির্দল ১৮ টি আসন।

উল্লেখ্য, ২০১৫ পেরিয়ে এবার পাড়ি ২০২২-এ। রাজ্যে ফের বেজে উঠেছে পুরভোটের কাঁসর। দীর্ঘ সাত বছরে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অন্দরেই পরিবর্তন হয়েছে বিপুল। পরিবর্তিত হয়েছে বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। এবারের পুরভোটে চমক দিয়ে বেড়েছে তৃণমূল ছেড়ে আসা নির্দলীয়দের সংখ্যা। এই পরিস্থিতি ফের হুগলীর ১২টি পুরসভার স্টেয়ারিং কার হাতে যেতে চলেছে তাই নিয়ে রয়েছে নানা মতভেদ।




Leave a Reply

Back to top button