অনিল বিশ্বাস নাকি বিমান বসু! বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কার উপর বেশি ভরসা করতেন জানেন?

কাকে বিশ্বাস, কাকে ভরসা করতেন বুদ্ধদেব? জানুন অজানা কথা

চাঁদে কলঙ্ক আছে। কিন্তু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাদা ধুতিতে কেউ কালো দাগ লাগাতে পারেনি। এমনটাই বলেন বামপন্থীরা। সৎ মানুষ হিসেবেই তাঁর পরিচয়। কিন্তু প্রশাসনিক দক্ষতা? রাজনৈতিক দক্ষতা? জ্যোতি বসুর আমলে একটা কানাঘুষো চলত, বুদ্ধদেব উদ্ধত, অহংকারী। সিনেমা-সাহিত্য বোঝেন, প্রশাসন নয়। তখন তিনি সংস্কৃতিমন্ত্রী। নন্দন চত্বরে প্রায়শই বুদ্ধবাবুর সাদা অ্যাম্বাসাডার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেত। জ্যোতিবাবু নিজেও একবার বলেছিলেন, ‘ও সংস্কৃতিটা বোঝে। ওঁকে ওই নিয়েই থাকতে দিন’।

কালেচক্রে প্রশাসনের শীর্ষ পদে বসেন বুদ্ধদেব। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। সময়টা ২০০৬ সাল। প্রশাসনে সবাইকে দিয়ে-থুয়ে চলাটাই নীতি, রাজনীতিতেও। অর্থাৎ সবাইকে খুশি করে চলো, তুমিও খুশি থাকবে। দল এবং সরকারের মধ্যেও সামঞ্জস্য রাখতে হয়। জ্যোতি বসু এবং অনিল বিশ্বাস যেটাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাংলার সংবাদ জগতে একটা নতুন শব্দই তৈরি হয়ে গিয়েছিল ‘অনিলায়ন’।

Buddhadeb Bhattacharya,Anil Biswas,Biman Basu,CPIM,West Bengal

কিন্তু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সোজাসাপটা লোক। রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ তিনি সত্যিই বোঝেন না। দলের বিরুদ্ধে গিয়ে নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব এবং সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানা করতে চেয়েছিলেন। ৯০-এর দশকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের হাত ধরে যে উদার অর্থনীতির ছোঁয়া লেগেছিল দেশে, বাংলায় সেই হাওয়া তুলেছিলেন বুদ্ধদেব। পাশে থেকে সমর্থন জুগিয়েছিলেন অনিল বিশ্বাস। ঘুরিয়ে এ কথাও বলা যায়, তাঁর জন্যেই বুদ্ধদেবের কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছিল। দলের মধ্যে কট্টরপন্থীদের এক প্রকার ছেঁটে ফেলেছিলেন অনিল বিশ্বাস। বিরুদ্ধবাদীদেরও ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলেন। বামেদের অন্দরমহলে তখন সত্যিই উদার অর্থনীতির খোলা হাওয়া। বুদ্ধ-অনিল জুটি কার্যত সচীন-সেহওয়াগ স্টাইলেই ঝড় তুলেছিলেন বঙ্গ রাজনীতিতে।

কিন্তু অবস্থাটা পাল্টে যায় বিমান বসুর জমানায়। ২০০৬ সালে অনিল বিশ্বাসের মৃত্যুর পর রাজ্য সম্পাদক হন বিমান। দলে ফের কট্টরপন্থীরা মাথা চাড়া দিতে থাকে। বিমান নিজেও ফ্রন্টের বাইরে থাকা এসইউসি, পিডিএস, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন-সহ নকশালপন্থীদের ‘গুরুত্ব’ দিতে শুরু করেন। বুদ্ধবাবু যা কখনওই ভালো চোখে দেখেননি। এই নিয়ে দলের অন্দরে মতবিরোধও হয়। কার্যত বিমান এবং বুদ্ধ গোষ্ঠীতে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যায় ফ্রন্ট।

Buddhadeb Bhattacharya,Anil Biswas,Biman Basu,CPIM,West Bengal

তবে এই দ্বন্দ্ব কখনওই বাইরে আসেনি। তবে প্রখ্যাত এবং ‘বিতর্কিত’ সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায়কে এক সাক্ষাৎকারে বুদ্ধদেব যা বলেছিলেন, তাতে মতবিরোধটা স্পষ্ট বোঝা যায়। বোঝা যায় কালে তিনি বিশ্বাস করতেন, কার উপর নির্ভরশীল ছিলেন। ঠিক কী বলেছিলেন বুদ্ধদেব? সুমনের কলাম থেকে হুবহু তুলে দেওয়া হল –

‘অনিলদার আকস্মিক প্রস্থানে দৃশ্যতই বেশ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন বুদ্ধদেব৷ মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের পাশের অ্যান্টি-চেম্বারে একদিন এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বুঝেছিলাম তাঁর ব্যক্তিগত বেদনা কিংবা শূন্যতাবোধের গভীরতার কথা৷ ‘দেখুন অনিল কেবল আমার কমরেড ছিল না, একই বছরে একই দিনে আমরা দু’জনে জন্মেছি সেটাও বড় কথা নয়, আমরা দু’জনে পরস্পরকে খুব ভালো করে বুঝতে পারতাম৷ দল এবং সরকারের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী আর দলের রাজ্য সম্পাদকের এই বোঝাপড়াটা একান্তই জরুরি৷’
‘কেন বিমান বসুকে দিয়ে সে কাজ হবে না?’
আমার এই অপ্রত্যাশিত প্রশ্নটি শুনে বুদ্ধদেব কয়েক সেকেন্ড চুপ করে ছিলেন৷ তারপর বেশ অর্থবহ হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে বললেন, ‘বিমানদা হলেন বিমানদা৷’




Leave a Reply

Back to top button