খালি পেটেই ছুটেছেন স্কুলে, আজ ইউপিএসসিতে দ্বিতীয় রাঙ্ক করে দেশের আইএএস অফিসার তিনি

ঘরে কারেন্ট নেই। নুন আনতে পান্তা ফোরানোল অবস্থা। হাল ছাড়েননি তিনি। লড়েছেন, জিতেছেন আজকে আইএএস আলিপুরদুয়ারের এই তরুণ।

শুভঙ্কর, উত্তরবঙ্গ: বৃষ্টি হলেই ঘরে জল পড়ে, অভাব প্রতিদিনের সঙ্গী। দু’বেলা খাবার ঠিকমত জোগাড় হত না। বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করলেও নিজেদের ঘরের অবস্থা খারাপ। মা-বাবাকে দেখেছেন খুব কষ্ট করতে। সেই কষ্টকে সঙ্গে নিয়ে দাঁতে-দাঁত চেপে লড়াই করেছেন। হাল ছাড়েননি কোন অবস্থাতেই। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলেন এই অবস্থা ঘুঁচাবেনই। ২০২২ সালের দেশের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা ইউপিএসসিতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন আলিপুরদুয়ারের বাপ্পা সাহা। তাঁর লড়াই পথ দেখাচ্ছে এইভাবে থাকা আরও অনেক মেধাবী ছাত্রদের।

বাড়ির কষ্ট বাবা-মায়ের অসহায় মুখ দেখে মনে মনে জেদ চেপে রেখেছিলেন বাপ্পা। ঠিক করেন এমন কাজ করবেন যাতে আর কোনওদিন এই অভাব তাদের সঙ্গে না থাকে। শিক্ষকদের মাইনের টাকা ঠিকঠাক দিতে পারতেন না। বরাবরই মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত। একটা ভাঙাচোরা সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেলে নির্ভর করে কয়েক কিলোমিটার দূরে স্কুলে যেতেন। প্রতিদিন টিফিনে খাবার জুটতো এমন নয়। লড়াই ছাড়েননি। আজ দেশের রত্ন তিনি। ছেলেবেলায় আলিপুরদুয়ার শহরের দুর্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাতেখড়ি তাঁর। এরপরে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন গোবিন্দ হাই স্কুলে। মাধ্যমিকের দুরন্ত রেজাল্ট চোখ ধাঁধিয়ে দেয় সকলকে। ৯১% নম্বর পান তিনি। এরপর উচ্চমাধ্যমিকেও নজর কাড়া সাফল্য। ‌৯৪.৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে পাশ করেন। অসাধারণ রেজাল্ট তবে উচ্চশিক্ষা কি করে হবে সেই নিয়ে একটা চিন্তা থেকে গিয়েছিল। তবে ভাল নম্বর থাকায় কলেজ পেতে অসুবিধা হয়নি। অনেক শিক্ষকরা বিনা পয়সায় পড়িয়েছেন তাকে। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। সেখানেও অসাধারণ সাফল্য। গোল্ড মেডেল পান বাপ্পা। এগ্রিকালচারে বিএসসি পড়ার সময় স্কলারশিপ পান তিনি। সেই কলারশিপের টাকা সম্বল করে এমএসসি এবং সর্বভারতীয় ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন বাপ্পা। ‌ আর সেখানেই বাজিমাত। মাত্র ২৩ বছর বয়সে সর্বভারতীয় এই পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান করেন তিনি। আজ তিনি দেশের একজন আইএএস অফিসার। জানলে অবাক হবেন দীর্ঘদিন বাড়িতে কারেন্ট ছিল না। সম্প্রতি সেই সংযোগ নেওয়া হয়েছে। বাবা কোনও মতে বাড়ি পাকা করেছেন। তবে এখন দুঃখের দিন শেষ। প্রবল অর্থনৈতিক সংকটের পরেও লড়াই চালিয়ে আজ প্রতিষ্ঠিত বাপ্পা সাহা। নিজের শিকড়কে ভুলে যাননি তিনি। স্থানীয় দুস্থ বাচ্চাদেরকে নিয়ে কাজ করতে চান এই আইএএস অফিসার।

Alipurduar,bappa saha,UPSC,IAS officer,second rank in UPSC

চোখে আঙুল দিয়ে সবাইকে দেখিয়েছেন বাংলা মাধ্যমের ছাত্র হয়েও বিভিন্ন প্রতিকূলতার সত্বেও মেধা দিয়ে স্থান দখল করা যায়। নিজের কষ্টকে বুঝতে পেরে এমনই আরও অভাবী মেধাবী ছাত্রদের নিয়ে থাকতে চান প্রথমবারই ইউপিএসসি পাশ করে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা আইএএস বাপ্পা সাহা।




Leave a Reply

Back to top button