Barun Biswas: গগন কালো মেঘ ধুয়ে দিল না বরুণের রক্তকে! দশক পেরিয়েও অবহেলায় বরুণ বিশ্বাস

জয়িতা চৌধুরি, কলকাতাঃ প্রায় একদশক কেটে গেছে। কিন্ত সুটিয়ার গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী বরুন বিশ্বাসের ( Barun Biswas ) খুনিদের এখনও সাজা হয়নি। বনগাঁর আদালতে মামলার বিচারপর্ব কার্যত এখনও থমকে। এর আগে বহুবার সিবিআই তদন্তের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দা ও বরুনের পরিবার। যদিও উচ্চ আদালত তদন্তের দাবী নাকচ করে দিয়েছিল। এই বিষয়ে বরুনের দিদি প্রমিলা রায় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়ে ছিলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ন্যায়ের জন্য আদালতে লড়াই করে। আজও প্রতিদিন ভাইয়ের ছবির সামনে জবা ফুল রাখেন।
জবা ফুল প্রিয় ফুল ছিল তরুন প্রতিবাদী শিক্ষক বরুন বিশ্বাসের। তিনি আরও বলেন, ‘তৃণমূল সরকার থাকাকালীন ভাইয়ের খুনের বিচার পাব না। কারণ, এই সরকারের মন্ত্রীই খুনের পরিকল্পনায় জড়িত। সিবিআই তদন্তের দাবি হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছিল। আমরা ফের চেষ্টা করব।“ তিনি চান কেন্দ্রীয় সরকার মামলাটিতে হস্তক্ষেপ করুন। প্রসঙ্গত উল্ল্যেখ্য, বরুন খুনের মামলাটি চলছে বনগাঁ মহকুমা আদালতে। গত দশ বছরে মামলাটির অগ্রগতি ঘটেছে যৎসামান্যই।
খুনিরা শাস্তি না পাওয়ায়ে স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ ও হতাশ সুটিয়ার ( Sutia hang rape case ) গ্রামবাসীরা। বিচারপর্ব চলা নিয়ে বনগাঁ মহকুমা ( Bonga Mahakuma Court ) আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী সমীর দাস বলেন, ‘‘মামলাটি ফাস্ট ট্র্যাক-১ আদালতে চলছে। সেখানে দীর্ঘ দিন ধরে কোনও স্থায়ী বিচারক নেই। তা ছাড়া, সাক্ষীরাও ঠিকমতো আসছেন না বলে বিচারপর্ব ধীর গতিতে চলছে।“
তরুন প্রতিবাদী এই শিক্ষক বরুন বিশ্বাসের জন্ম উত্তর চব্বিশ পরগনার প্রান্তিক গ্রাম সুটিয়ায়। প্রতি বছর বর্ষায়ে যে গ্রাম ভেসে যেত বন্যায়। সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন জায়গা থেকে আসত রিলিফ ফান্ড । এই রিলিফ ফান্ডের দখলদারি নিয়েই উত্থান সুশান্ত চৌধুরী, বীরেশ্বর ঢালিদের মতো দুষ্কৃতিদের। প্রথমে, গ্রামে একের পর এস্ক্রিতিদের, তারপর রিলিফ ফান্ড দখল, গ্রামবাসিদের হুমকি, মারধোর, বাইক বাহিনী অকথ্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার লক্ষ্যেই বরুন বিশ্বাস গড়ে তুলেছিলেন সুটিয়া ধর্ষণ বিরোধী মঞ্চ।
ধর্ষিতা মেয়েদের বিয়ে দেওয়া, রাতের পর রাত বাইকে টহলদারী, সরকারের উপর মহলে একের পর এক চিঠি দিয়ে গ্রামে বিদ্যুৎ আনা, এ ছাড়াও একের পর এক চিঠি লিখে সরকারের টনক নড়িয়ে সিআইডি তদন্ত করিয়ে গ্রেপ্তার করান সুশান্ত, বীরেশ্বর সহ আরো অনেকে। মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় দোষীদের। তবে এখানেই তাঁর লড়াই শেষ নয়।
সুটিয়ায় প্রতিবছর বন্যা হওয়ার কারণও খুঁজে বের করেন তিনি। জানা গেছিল, ভাটার সময় কেটে নেয়া হয় মাটি । মাটি-মাফিয়ারা সেই মাটি বিক্রি করতো চড়া দামে । ফলে বর্ষাকালে অবশ্যম্ভাবী বন্যা । নতুন বাঁধ, নতুন রিলিফ ফান্ড , নতুন ঠিকাদার-একটা বিরাট, সংঘটিত অপরাধ চক্র । এর বিরুদ্ধেও বরুণ শুরু করেছিলেন প্রতিবাদ। কিন্ত দশ বছর আগে ২০১২ সালের ৫ই জুলাই রাত্রে গোবরডাঙ্গা স্টেশনেরঅ এক নম্বর প্লাটফর্মে গুলি বিদ্ধ হন তিনি।
৬ই জুলাই ভারী বর্ষা মাথায়ে নিয়েও শ’য়ে শ’য়ে শ’য়ে গ্রামবাসী এসেছিলেন তাদের মাস্টারদাকে চোখের জলে শেষ বিদায় জানাতে। তীব্র ক্রোধে ফুঁসতে থাকা স্থানীয় মহিলারা হাতে তুলে নিয়েছিলেন হাতা, খুন্তি, ঝাঁটা । ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি। কেন মারা গেলেন বরুণ? জেলে বসে সুশান্তই কি মারল? নাকি মাটি-মাফিয়া্রা? নাকি আরো কোন বড়ো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র? সব কিছুর উত্তর আজও আমাদের অজানা।