রক্তশূন্য তাদের শৈশব! রাজ্যে নেই চিকিৎসা, এ কোন বেহাল দশায় বঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা?

রাজ্য জুড়ে স্বাস্থ্যের বেহাল দশা। সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ( Mamata Banerjee ) তৃতীয় বারের মতো বঙ্গের শাসক পদে বসার পর থেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উন্নতির জন্য রাজ্য জুড়ে চালু করেন স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। কিন্তু বর্তমানে সেই প্রকল্প নানা জায়গায় ভরাডুবির শিকার। কোথাও স্বাস্থ্যকার্ড গ্রহণে আপত্তি জানাচ্ছে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকন্দ্র। কোথাও আবার স্বাস্থ্যকার্ড হাতে পেয়ে সাপের পাঁচ পা দেখছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মুনাফার লোভে অহেতুক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয় যাচ্ছে রোগীর উপর। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে উঠে আসা এই সকল অভিযোগ প্রশ্ন তুলেছিল রাজ্যের বেহাল স্বাস্থ্য পরিস্থিতির দিকে।
এমতাবস্থায় সেই তপ্ত আগুনে ঘি ঢেলে দিল এন.আর.এস ( NRS ) । রাজ্য জুড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে রক্তশূন্য এক রত্তিদের সংখ্যা। ব্লাড ক্যান্সারে ভুগছে অজস্র শিশু। যার জেরে ভির বেড়েছে এন.আর.এস হাসপাতালের শিশু বিভাগে। কিন্তু সেই দিকে কোনও রকম নজর নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। কারোর নাক দিয়ে রক্ত ঝড়ছে, তো কেউ গা এলিয়ে শুয়ে আছে মায়ের কোলে। হাসপাতাল সুপারের দাবি, তাঁরা ব্লাড ক্যান্সার জনিত চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ। প্রাথমিক চিকিৎসা টুকু প্রদান করতে পারবে। তাছাড়া আর কিছু সম্ভব নয়।
হাসপাতালের এই দশা যেন প্রশ্ন চিহ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে। প্রসঙ্গত, সিপিএম জমানা বিনাশ ঘটিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের শাসন ব্যবস্থার হাল ধরার পর লোকমুখে একটি কথা ভীষণ ভাবে শোনা যেত। তা হল, ‘সিপিএমের যাওয়ার পর থেকে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে।’ কিন্তু আজ সময়ের সঙ্গে যেন বেহাল রাজ্য স্বাস্থ্য পরিষেবা।
প্রসঙ্গত, শুধুই এন.আর.এস নয়! এক সময়ের উৎকর্ষ মানসিক হাসপাতালও আজ প্রশ্ন চিহ্নের মুখে। পাভলভ মানসিক চিকিৎসা হাসপাতাল ( Calcutta Pavlov Hospital ) নিয়ে রয়েছে ভুরি ভুরি অভিযোগ। তার মধ্যেই আবার সম্প্রতি আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে এই হাসপাতালকে কেন্দ্র করে। রাজ্যে উচ্চমানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নজীর ছিল এই পাভলভ মানসিক হাসপাতাল। কিন্তু আজ রাজনীতির ঘেরাটোপে আজ এন.আর.এস-এর শিশুগুলির মতোই এটিও যেন ‘রক্তশূন্য’। উৎকর্ষ মানের চিকিৎসা প্রদানের জন্য পরিচিত এই মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে ঘন্টার পর ঘন্টা অভুক্ত থাকেন মানসিক রোগীরা। হাসপাতালে কোনও ডায়েট কমিটি নেই। এদিকে হাসপাতালে মাসিক খরচ ছাপিয়ে ১৫ লক্ষ টাকা। দিনের দিন অভুক্ত পড়ে রয়েছেন অনেক রোগী। হাসপাতাল জুড়ে আবর্জনা। লোহার বিছানা রয়েছে, কিন্তু তাও জীর্ণকায়স্থ। যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে গেলেই ঘটতে পারে অঘটন। পোশাকের জন্য বছরে খরচ হয় এক কোটি টাকা। কিন্তু রোগীরা কেউ নগ্ন, তো কারোর পোশাক একেবারে ছেঁড়া-ফাটা।
শৌচালয় রয়েছে কিন্তু মানুষের যাওয়ার জন্য অযোগ্য। হাসপাতালের দশা রোগীদের মানসিকভাবে আরও ভারসাম্যহীন করে তোলার জন্য একেবারেই উপযুক্ত, এমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের। এই পরিস্থিতি একটি প্রশ্ন বারংবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে সেটি হল, এত টাকা খরচের পরও কেন এই হাল হাসপাতালের। প্রতিবছর বাজেটে হাজার হাজার কোটি টাকা নির্দিষ্ট করা হচ্ছে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে উন্নত করার জন্য। কিন্তু দিন শেষে কার পেটে গিয়ে ঢুকছে সেই বিপুল পরিমাণ অর্থ, তা অজানা।