ধর্মের উপরে মনুষ্যত্ব, বন্ধুর প্রাণ বাঁচাতে কিডনি দান হাসলু মহম্মদের

এই আধুনিক যুগে দাঁড়িয়ে আমাদের জীবনের অধিকাংশ সম্পর্ক যেন হয় উঠেছে স্বার্থের। অনেক মানুষ এখন ভুলে যায় বাবা-মা-এর সাথে সম্পর্ক। যে মানুষগুলো তাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখিয়েছিল, তাদেরকেও দূরে সরিয়ে দিতে দু’বারও ভাবছে এই আধুনিক সমাজের অধিকাংশ মনহীন মানুষরুপী যন্ত্ররা। সম্পর্ক ( Communal Harmony ) হয়ে উঠেছে স্বার্থের। তবে কলি যুগের এই স্বার্থের দুনিয়ায় এখনও রয়েছে কিছু নজির। যারা এখনও সমাজ শিখিয়ে চলেছে সম্পর্কের মাহাত্ম্য।
আমাদের জীবনে সমস্ত সম্পর্কের মধ্যে একটি বড় জায়গা নিয়ে নেয় বন্ধুত্ব। এই বন্ধুত্ব হয় তো মানুষের পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। তবে এই আধুনিক যুগে এসে সেই বন্ধুত্বও যেন হারিয়ে যাচ্ছে চির তরে। সম্পর্কের বেড়া জালে থাকতে নারাজ এখনকার মানুষজন। কিন্তু এই স্বার্থের দুনিয়াতেও এখনও যে রয়েছে হাজারও নজির। উল্লেখ্য, বছর খানেক আগে দু’টি কিডনি নষ্ট হতে শুরু করে অচিন্ত্য বিশ্বাসের। পেশায় সে একজন ঋণদান সংস্থার এজেন্ট। তাঁকে দ্রুত বাঁচাতে হলে প্রয়োজন একটি কিডনি। কিন্তু দেবে কে?
বন্ধুর এই রকম পরিস্থিতির কথা শুনে বসে থাকতে পারেনি পেশায় হাট ব্যবসায়ী বছর একত্রিশের ( Communal Harmony ) হাসলুর। ভাগ্যবশত দু’জনের রক্তের গ্রুপও মিলে যায়। শেষ পর্যন্ত বন্ধুকে বাঁচাতে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে একটি কিডনি দেওয়ার আবেদন করল হাসলু। বর্তমান যুগে দাঁড়িয়ে সত্যিই বেনজির এই ঘটনা। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বরুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ঢেলপির এলাকার বাসিন্দা হাসলুর। অচিন্ত্যর বাড়ি জেলার কালিয়াগঞ্জ থানার মোস্তাফানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুনোরে। সরকারি নিয়ম মাফিক, কেউ স্বাস্থ্য দফতরে কিডনি দেওয়ার আবেদন করলে, দাতা টাকার বিনিময়ে করছেন কিনা এই বিষয়ে খতিয়ে দেখে পুলিশ। রায়গঞ্জ পুলিশ কর্তৃপক্ষ তরফে জানা গেছে, হাসলু বিনা স্বার্থে নিজের বন্ধুকে কিডনি দিতে চান। ফলে তাঁর কিডনি দিতে কোনও বাঁধা নেই। আর এই বিষয়ে দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন…দিদি এবার অল রাউন্ডার,রচনা ব্যানার্জীর নয়া প্রতিভার প্রশংসায় মজলেন নেট নাগরিকেরা
হাসলু আর অচিন্ত্য উভয়েই সপরিবারে সুখী জীবনযাপন করছিল। কয়েক বছর আগে হাসলু ( Communal Harmony ) ও অচিন্ত্যের যোগাযোগ হয়। মূলত একটি ঋণদান সংস্থায় কিছু কাজ করতে গিয়ে উভয়ের যোগাযোগ হয়। আর তারপর থেকেই বেড়ে যায় বন্ধুত্বের গভীরতা। ইতিমধ্যে কলকাতার একটি হাসপাতালে ডায়ালিসিস করার জন্য ভর্তি করা হয়েছে তাঁকে। বন্ধুকে এক প্রকার ভাবে জীবন দান করতে চলেছেন হাসলু। এই প্রসঙ্গে এদিন তিনি জানান, ‘আমি অচিন্ত্যকে একটি কিডনি দিলে মরব না। উল্টে ওর জীবনটা বেঁচে যাবে। তাই জাতপাত দূরে সরিয়ে রেখে বন্ধুকে বাঁচিয়ে ঘরে ফেরানোই আমার উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুন…..রাজকীয় জীবনযাপনে অভ্যস্থ শেন ওয়ার্ন, ভুল শুধরে ভোলবদল গাভাসকারের
দেশের সামনে এ যেন নজির গড়তে চলেছে হাসলু। সাম্প্রদায়িকতার বিষে দেশবাসী যখন জর্জরিত সেই সময়ে দাঁড়িয়ে ( Communal Harmony ) জাতপাত ভুলে মনুষ্যত্বকেই আসল ধর্ম করে তুলল হাসলু ও অচিন্ত্য। বন্ধুর কাছে চির ঋণী হয়ে গেল অচিন্ত্য, এমনটাই জানিয়েছেন তিনি এদিন।