হাত দুটো অকেজো, পাও বিশেষ চলে না! অদম্য ইচ্ছার জোরে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় সফল আলম

রাজ্য জুড়ে মাধ্যমিক(Madhyamik) পড়ুয়াদের(Students) নিয়ে বেজেছে খুশির দামামা। রাজ্য(West Bengal) জুড়ে পাশের হার ও পড়ুয়া প্রাপ্ত নম্বর শান্ত করেছে অভিভাবকদের। প্রতিবারের ন্যয় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান অধিকারকারীদের বাড়ি হানা মেরেছে রিপোর্টাররা। নেওয়া হয়েছে সাক্ষাৎকার। জানা হয়েছে, তাঁদের সাফল্যের চাবিকাঠি। কিন্তু সাক্ষাৎকার ও প্রথম-দ্বিতীয়দের দৌড়ের মাঝে হারিয়ে গেছে আলম রহমানের মতো পড়ুয়ারা। মাইক, ক্যামেরা,আলোর ভিড়ে এই সমাজ খুঁজে পায়নি তাঁদের। 

একজন সাধারণ আলম। কিন্তু এই সাধারণের সমাজে থেকেও আজ সে অসাধারণ। স্থানীয়রা তাঁকে যোদ্ধা মনে করেন। কারণ, তাঁর দুটি সম্পূর্ণরূপে অকেজো। পা দুটিও যে বিশেষ কাজ করতে সক্ষম এমনটা মোটেই নয়। কিন্তু, এই শারীরিক দুর্বলতাও আর পাঁচ জনের থেকে পিছিয়ে রাখতে পারেনি আলমকে। মনের অদম্য ইচ্ছাশক্তির জেরে ও দুটি পায়ের সাহায্য আজ নিজের জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিল আলম। এমনকী চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া নম্বরের সঙ্গে পাশ করল সে। 

alom1

মুর্শিদাবাদের গড্ডা গণপতি বিদ্যাপিঠের ছাত্র সে। বিদ্যাপিঠের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বক্তব্য, তারা এই বিষয়ে  আগে থেকেই আশাবাদী ছিল যে  আলম যথেষ্ট ভালো ফলাফল করবে।  বাংলায়- ৯১, ইংরেজিতে- ৮৬, অঙ্কে- ৯৮, ভৌতবিজ্ঞানে- ৯৪, জীবন বিজ্ঞানে- ৭৭ এবং ইতিহাস ও ভূগোলে যথাক্রমে ৮৪ ও ৯৫ পেয়ে মোট ৬২৫ নম্বর নিয়ে মাধ্যমিকে উত্তির্ণ হয়েছে সে। প্রসঙ্গত, স্থানীয়দের ক্ষোভ এত বড় শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে আলম ভালো ফলাফল করা সত্ত্বেও কোনও সংবাদমাধ্য বিশেষভাবে তাঁকে গুরুত্ব দেয়নি। সকলে মেতে আছে প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয়দের। সমাজের চোখ জুড়ে রয়েছে শুধু তারাই। যার ফলে হাজারও পরিশ্রম করা সমাজের এই যোদ্ধাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের চোখের সামনে থেকে।

তবে এই মাধ্যমিকের ফলাফল প্রসঙ্গে একটি বিষয় গতকাল থেকে ভেসে চলেছে বাতাসে। তা হল প্রথম-দ্বিতীয় স্থান অধিকারী পড়ুয়াদের সাফল্যে চাবিকাঠি। যেখানে কেউ বলছেন, ‘সারাদিন পড়াশোনা করেছি’, কেউ বলছে ’বন্ধুবান্ধব বিশেষ না থাকায় বাড়িতে বসে পড়তাম’। পড়ুয়ারা ভালো ফলাফল করলেও সমাজের মধ্যে চলা এই নতুন ধারা ঠিক নজরে দেখছেন না মনোবিদরা। তাঁদের মতে, ‘সারাদিন পড়াশোনা করা’ কিংবা ‘বন্ধুবান্ধব না থাকা’ কখনই শারীরিক ও সামাজিক দিক থেকে গর্বের কথা নয়। সুতরাং আজকালকার অভিভাবকদের এই বিষয়টি নিয়ে গর্ব করার কোনও মানে হয় না।




Leave a Reply

Back to top button