কালিম্পংয়ের বাজার থেকে রহস্যময় সিল্ক রুট, কেমন ছিল শুরুর দিনগুলো?
সৌন্দর্য আর ইতিহাস। শতাব্দী প্রাচীন এই শহরের পায়ে পায়ে জড়িয়ে সিল্ক রুটের রোমাঞ্চ। কালিম্পংই তিব্বতে ঢোকার সদর দরজা।

খাদের ধারের রেলিংটা/ সেই দুষ্টু দোদো সিরিংটা/ আমার শৈশবের দার্জিলিংটা…’। এটাই বাঙালির চিরচেনা মুলুক। খাদের ধারের রেলিং, টাইগার হিল আর ম্যাল। ছুটি পেলেই বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে সোজা পাহাড়। তবে শুধু দার্জিলিং নয়, সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে বসে আছে কালিম্পংও। হ্যাঁ, সৌন্দর্য আর ইতিহাস। শতাব্দী প্রাচীন এই শহরের পায়ে পায়ে জড়িয়ে সিল্ক রুটের রোমাঞ্চ। কালিম্পংই তিব্বতে ঢোকার সদর দরজা।
অনেকগুলো ‘W’-এর আকারে একটা সরু পথ। কখনও উঠছে কখনও নামছে। এটাই সিল্ক রুট। বিশ্বের প্রথম সুপার হাইওয়ে। এক জীবন্ত ইতিহাস। এই পথ ধরেই ভারত যোগাযোগ করত বিশ্বের সঙ্গে। চলত রেশম, ধাতু, অলঙ্কার, সুগন্ধী দ্রব্য, মশলা, মূল্যবান পাথরের বাণিজ্য। কালিম্পং থেকে ৬৫০০ কিমির এই পথ তিব্বতের রাজধানী লাসা হয়ে মধ্যে এশিয়ায় চলে গিয়েছে।
কালিম্পংয়ের জমজমাট বাজার। সিল্ক রুটের শুরু। চোলা পর্বতমালার সরু পথ ধরে রাস্তা। একদিকে পাহাড় অন্যদিকে খাদ। সমতলের জুলুক থেকে থেকে কুপুপ লেকের পাশ দিয়ে জেলেপ-লা হয়ে তিব্বতের লাসায় ঢুকছে। দ্বিতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দেও এই পথে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চলত। ইউরোপ থেকেও ব্যবসায়ীরা আসত লাসায়। তারপর এই পথ ধরে ঢুকত ভারতে।
ইতিহাস বলছে, ১৩০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে এই পথ দিয়ে বাণিজ্য শুরু হয়। চিনে তখন হান রাজবংশ শাসন করছে। পশ্চিম বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য তারাই প্রথম এই পথ দিয়ে যাতায়াত শুরু করে। সিল্ক রুটে তখন বাস করত একাধিক যাযাবর জাতি। তারা যেমন হিংস্র তেমনই বর্বর। শত্রুকে খতম করে তার রক্ত পান করত এরা। ফলে সিল্ক রুট দিয়ে ব্যবসা করতে বেরলে যে সে বেঁচে ফিরবে এমন গ্যারান্টি ছিল না। এদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইল হান রাজারা। পাঠাল চাল, পোশাক, মদ। কিন্তু লাভ হল না। শেষে সেনা পাঠিয়ে এদের খুন করা হয়। এরপর শুরু হয় নিরাপদ বৈশ্বিক বাণিজ্য।
তবে শুধু বাণিজ্য নয়। এই পথ ধরেই গ্রিক শিল্পকলা ভারতে ঢুকেছে। আবার এই পথেই ভারত থেকে বৌদ্ধ ধর্ম গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। চিনা পরিব্রাজক ফা হিয়েন এবং হিউ এন সাং এই পথেই ভারতে এসেছিলেন। ভারত থেকে এই পথে তিব্বত হয়ে চিনে গিয়েছেন অতীশ দীপঙ্কর, শান্ত রক্ষিতরা। এমনকী রাজা রামমোহন রায়ও জেলেপ-লা দিয়েই তিব্বতে যান।